এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। ছক্কার বন্যায় জয়ের বিষাদ যেন ভেসে গেছে সুরমা নদীতে। চেয়েছিল এক লেগ স্পিনার। মিলে গেছে এক ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’। কার্য্যকর অলরাউন্ডার হওয়ার নতুন ভাবনাতে যুক্ত হয়ে গেলেন রিশাদ হোসেন। দায়িত্ব ছিল বল হাতে। তবে ব্যাট হাতেও তাকে ভরসা করা যায়, সে প্রমাণই রাখলেন তিনি বাইশ গজে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। টানা তিন ম্যাচেই সুযোগ পেলেন রিশাদ হোসেন। বাকি দুই ম্যাচের মত বল হাতে মিডল ওভারগুলোতে রানের লাগাম টেনে ধরার দায়িত্ব ছিল রিশাদের।
দক্ষতার পরিচয় তিনি দিয়েছেন সেখানটায়। যদিও রান খরচা তিনিওও করেছেন যথেষ্ট। ৩৫ রান দিয়েছেন নিজের নির্ধারিত চার ওভারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট তুলে নিয়ে তিনি রান তোলার গতিকে প্রশমিত অবশ্য করেছিলেন।
কামিন্দু মেন্ডিস আর কুশল মেন্ডিসের জমে ওঠা জুটিতে ভাঙ্গন ধরিয়েছেন। ফিরেছিলেন কামিন্দু মেন্ডিসকে। এরপর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকেও আউট করেন তিনি দারুণ দক্ষতায়। এই দুই উইকেটেই থেমে যেতে পারতে রিশাদের দিন। তবে না এদিনটা তিনি নিজেকে ভিন্নভাবে প্রমাণ করলেন।
উচ্ছন্নে যাওয়া ব্যাটিং অর্ডারে এক চিলতে স্বস্তি হয়ে ধরা দিয়েছেন তিনি। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৭৫ রানে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে চপেটাঘাত করে বসেন নুয়ান থুসারা, অবশ্যই তা বল হাতে। নিজের প্রথম ওভারেই হ্যাট্রিক করে বসেন থুসারা।
তাতে করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। সেই শঙ্কাকে ঘনিভূত হতে দেননি রিশাদ হোসেন। ব্যাট হাতে আগ্রাসনের রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তিনি। সিলেটের মাঠে থাকা দর্শকদের খানিক আনন্দ দিতেই ছক্কার বর্ষণ করতে শুরু করেন ডান-হাতি এই ব্যাটার।
মোট ৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। যা আবার সর্বোচ্চ। বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটা কিছুদিন আগেই ভেঙেছিলেন জাকের আলি অনিক। সেই রেকর্ডের স্থায়িত্বকাল হল মাত্র ৫ দিন। পঞ্চম দিনেই সেই রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন রিশাদ হোসেন।
পাশাপাশি অর্ধশতকও তুলে নিয়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। তাতে এড়ানো যায়নি বাংলাদেশের পরাজয়। তবে রিশাদ জানান দিলেন শুধু বল হাতে নয়, ব্যাট হাতেও যথেষ্ট আস্থাভাজন তিনি। রিশাদের হাতে শট রয়েছে। পাওয়ার হিট তিনি করতে পারেন অনায়াসে। টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিংটাও তিনি করে দেখালেন।
১৭৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটের চূড়ান্ত আগ্রাসন দেখিয়েছেন তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৩০ বলে ৫৩ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। তাতে সাত ছয় ব্যতীত নেই কোন বাউন্ডারি। এই ইনিংসের কল্যাণেই নিজের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতকের দেখা পেয়ে গেলেন রিশাদ হোসেন।
টানা পাঁচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ষষ্ঠ সিরিজ জয়টা থেকে গেছে অধরা। তবে এই অপ্রাপ্তির মাঝেও অসীম নীলাম্বর সমান সম্ভাবনা হয়ে হাজির হলেন, রিশাদ হোসেন। অন্তত এবার রিশাদকে মূল্যায়ন করা হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি নিয়মিত হবেন। নাকি তার আরও কিছু প্রমাণ করা বাকি?