একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে চলা একটা যাত্রার শেষটায় পৌঁছে গেলেন কলিন্স ওবুয়া। ক্রিকেট ক্যারিয়ারটাকে বিদায় জানালেন। শূন্যরানে আউট হয়েছেন নিজের শেষ ম্যাচটায়। তবে একেবারেই শূন্যহাতে যাচ্ছেন না তিনি অবসরে। সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন দুই যুগের বর্ণিল সব স্মৃতি।
৪২ বছর বয়সে এসে তুলে রাখলেন নিজের ব্যাট-প্যাড। আফ্রিকান গেমসে উগান্ডার বিপক্ষে ব্রোঞ্জ পদক হেরেছে কেনিয়া। কলিন্স ওবুয়া সেই ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন বটে। তবে এর আগের তিন ম্যাচে রয়েছে তার তিন ফিফটি। তাতে করেই কেনিয়ার যাত্রাটা গড়িয়েছেন এতদূর অবধি। কেনিয়ার যা কিছু সাফল্য রয়েছে, তার সাথেও কোন না কোনভাবে জড়িয়ে আছেন কলিন্স ওবুয়া।
সেই ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মত খেলতে নেমেছিলেন তিনি কেনিয়ার হয়ে। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় ‘গার্ড অব অনর’ মিলেছে তার। সতীর্থ আর প্রতিপক্ষ সবাই তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন শেষবেলায়। আবেগঘন এক পরিবেশের মধ্য দিয়েই যে বিদায় ঘটেছে তার।
১৯৯৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে ওবুয়া ও কেনিয়ার গল্পের শুরু। এরপর কতরকম চড়াই-উৎড়াই পেরিয়েছেন ওবুয়া। আলোড়ন সৃষ্টি করে সাফল্যের দেখাও পেয়েছিলেন তিনি। যে সাফল্যের শুরুটা ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে শুরু।
পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে যায় কেনিয়া। সেই দলের সদস্য ছিলেন কলিন্স ওবুয়া। স্টিভ টিকোলো, থমাস ওডোয়োদের মত কিংবদন্তীতুল্য খেলোয়াড়দের সাথে খেলেছেন তিনি। শুধু খেলেছেন বললেও ভুল বলা হয়- তিনি কেনিয়ার সেই বিশ্বকাপ যাত্রার অন্যতম সেনানী ছিলেন।
তাছাড়া তার ক্যারিয়ারের অন্যতম হাইলাইটস সম্ভবত শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট বাগিয়ে নেওয়া। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ওবুয়া লেগস্পিন রোলেই খেলেছেন। আর সেই লেগ স্পিন ঘূর্ণিতে তিনি শ্রীলঙ্কাকে করেছিলেন কুপোকাত। অরবিন্দ ডি সিলভা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার মত ব্যাটারদের উইকেট নিজের করে নিয়েছিলেন।
মাত্র ২৪ রানের বিনিময়ে শ্রীলঙ্কার পাঁচ ব্যাটারকে পকেটে পুরেছিলেন ওবুয়া। সেটাই এখন অবধি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। এরপরই কাউন্টি থেকে ডাক আসে তার। ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে তিনি প্রথম কোন কেনিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান। যদিও সেই স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয় তার।
ইনজুরি আর অসুস্থতা মিলিয়ে স্বল্পতেই থেমেছিল কাউন্টি ক্যারিয়ার। মাত্র এক মৌসুমেই ওয়ারউইকশায়ারের সাথে সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে ওবুয়ার। অসুস্থতায় অবশ্য তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও প্রভাবিত হয়েছিল। তবে এরপরও তিনি খেলে গেছেন ভিন্ন এক রোলে। ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে আরও প্রায় দুই দশক ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয়েছে তার।
আর ব্যাট হাতে সবচেয়ে বর্ণিল স্মৃতিটা এঁকেছিলেন তিনি ২০১১ বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার বাঘা-বাঘা সব পেসারদের বিপক্ষে সেদিন অটল থেকেছিলেন তিনি। ৯৮ রানের অনবদ্য এক মহাকাব্য লেখেন। ব্রেট লি, মিচেল জনসন ও শন টেইটদের বিপক্ষে লড়াই করেছেন চোখে চোখ রেখে।
পরবর্তীতে কেনিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্বও উঠেছিল তার কাঁধে। তবে কেনিয়ার ক্রিকেট ততদিনে ঢলে পড়া সূর্য। অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার আগে তার যে আর তেমন কিছুই করবার ছিল না। অগ্যতা সে দায়িত্ব ছেড়ে তিনি এক দশক থেকে গেলেন কেনিয়ার সাথে। অবশেষ পর্দা নামলো।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০৪৪ রান ও ৩৫ উইকেট নিয়ে তিনি বিদায় জানালেন। টি-টোয়েন্টিতে তার নামের পাশে রান ছিল ১৭৯৪। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেও ২৫ খানা উইকেট রয়েছে তার। ওয়ানডেতে অপরাজিত ৯৮ আর টি-টোয়েন্টি হার না মানা ৯৬ রান ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হাইলাইটস।