মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কোন কোন ক্ষেত্রে তার থেকেও বড়। মাস তিনেক বাদেই যেখানটায় হবে ঘরবাড়ি, সেখানে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখার থেকে সুখকর আর কি-ই বা হতে পারে! এন্ড্রিক ফেলিপে তাই বাবাকে জড়িয়ে ধরে করলেন উদযাপন। যে উদযাপনের পুরোটা জুড়েই যেন চিৎকার করে অব্যক্ত উল্লাসের সুরে বলছে, ‘বাবা দেখো, আমি আমার স্বপ্নকে জয় করেছি।’
বাবার মাথার উপর ছাউনি হয়েছিল টিকেট কাউন্টার। ডুকরে কেঁদেছেন কত রাত। দরিদ্র জনজীবনে দু’বেলা অন্ন জোটাও ছিল দায়। মায়ের হিমশীতল হৃদয়ের বরফ গলেছে ক্ষুধার তীব্রতায়। সেই বরফ চোখের জল হয়ে গড়িয়েছে জরাজীর্ণ ঘরের মেঝেতে।
কতকাল ধরে অভুক্ত এক শিশু, বিস্ময় ভরা নয়নে দেখেছে সবকিছু। বোঝেনি, কিংবা বুঝেছে। সে মুক্তির পথ খুঁজেছে। ১৫ আউন্সের এক চর্মগোলক তার সামনে মুক্তির পথ হয়েছে। তিনি আকড়ে ধরলেন। আকড়ে ধরলেন দারিদ্রের তীব্র আক্রোশ থেকে একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠল তার সেই গোলক।
মায়ের শুকনো মুখ থেকে একটু খানি প্রশান্তি খুঁজে নিতেই তিনি ছুটে বেড়িয়েছে তেপান্তরের মাঠে। সেখানেই যেন বুঝতে শিখেছেন, এই চর্মগোলকই হতে পারে মুক্তির পথ। নিজের ভেতর থাকা প্রতিভাও যেন বলে উঠলো, ‘দৌড়া, তোর সুদিন আসছে’।
সেই সুদিন যেন সত্যিকার অর্থেই এসেছে। সে সুদিন এন্ড্রিকের পায়ে এসে ধরা দিয়েছে। ব্রাজিলের জার্সিতে খেলবে বলে কতশত ছোকড়া দিনকে রাত করছে, আর রাত কে দিন। সেই ব্রাজিলের হলুদ রঙা জার্সিটা গায়ে তুলেছেন এন্ড্রিক। বয়সটা কেবলই ১৭। এখনই সে ভঙ্গুর মনোবলের একটা গোটা দলকে দিচ্ছেন আশ্বাস, চুপিসারে সকলের কাছে গিয়ে যেন বলে দিচ্ছেন, ‘আমিই আসছি, আমি আছি’।
তবে সবকিছু তো আর নিঃশব্দে বয়ে চলে না। নদীর বহমান পানিরও একটা নিজস্ব নিনাদ রয়েছে। এন্ড্রিকেরও তাই। যেই ইউরোপ মাতাবেন তিনি বলে ঠিক করে দিয়েছেন বিধাতা, সেই ইউরোপেই তিনি ঝলক দেখালেন। প্রথমে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামকে হতভম্ব করে দিলেন। ইংল্যান্ডের দুর্গে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হয়ে দলের জন্য জয় ছিনিয়ে আনলেন।
ব্রাজিলে যখন এন্ড্রিক একটু একটু করে একজন ফুটবলার হয়ে উঠছেন, ঠিক তখনই রিয়াল মাদ্রিদ নামকে একটা রাজকীয় ক্লাব চাইলো তাকে নিজেদের করে নিতে। সেই ক্লাবের আবেগের সাথে মিশে আছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু নামক স্টেডিয়ামটা। সেখানটায় এন্ড্রিক হয়ত সামনের দিনগুলোতে লিখবেন মহাকাব্য। সেই মাঠেই তিনি স্বাগতিক স্পেনের বিপক্ষে করলে সমতা সূচক গোল।
দল ম্যাচটা হারেনি, তবে এন্ড্রিক জিতেছেন সবটাই। তার করা সেই বা-পায়ের ভলিতে তিনি যেন দুর্দিনকে ঠেলে পাঠিয়ে দিলেন কোন এক গহীন জঙ্গলে। সেখান থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে ফিরে আসা দায়, যদিনা এন্ড্রিক চায়। এখন স্রেফ এন্ড্রিকের ওই চর্মগোলকটাকে আপন করবার পালা। এখন স্রেফ এন্ড্রিকের দিগ্বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষা।