জানুয়ারির ‘জানালা’ কাঁপালেন যারা

গতকাল রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে শীতকালীন দলবদলের মৌসুম।

পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে চলা ট্রান্সফার উইন্ডোতে সাধারণত কোনো বড় অংকের লেনা-দেনা হয় না। বরং দলগুলো চেষ্টা করে তাদের মৌসুমের প্রথম হাফের সমস্যাগুলো দূর করার। সে জন্য প্রয়োজনে দলে নতুন খেলোয়াড়ের আগমনও ঘটে। তবে বেশিরভাগ সময়ই, জানুয়ারি মাস কেটে যায় কোনো বড় ট্রান্সফার নিউজ ছাড়াই। এবারেও অনেক ইংলিশ লিগ, লা-লিগার জায়ান্টদের খেড়োখাতা শূণ্য। তবে এর মাঝেও যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দলবদল হয়েছে, তাদের নিয়েই আজকের লেখা।

  • মার্টিন ওডেগার্ড: (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে আর্সেনাল)লোন

২০১৪-১৫ মৌসুম থেকেই রিয়ালের হটকেক মার্টিন ওডেগার্ড। সেসময় ১৬ বছর বয়সী একজনকে দলে ভিড়িয়ে বেশ নাম কামিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এতোদিন ধরে লোনে অনেক ক্লাব ঘুরে শেষমেশ এই মৌসুমে রিয়ালে থিতু হবেন ভেবেছিল সকলে। কিন্তু তা হয়নি।

জিদানের রিয়াল মাদ্রিদে প্রথমে ভালো খেললেও চোট আর ক্রুস-মদ্রিচের অসাধারণ পারফরম্যান্সে এখন তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না ওডেগার্ড। তাই মৌসুমের বাকিটা সময়ের জন্য ওডেগার্ডকে ধারে আর্সেনালে খেলতে পাঠিয়েছে রিয়াল। আর্সেনালে ১১ নম্বর জার্সি নিয়ে অভিষেকও হয়ে গিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। মিকেল আর্টেটার ট্যাক্টিসে বেশ ভালো সুযোগ পাবেন বলেই বোঝা যাচ্ছে। তবে আর্সেনাল অধ্যায় তাঁর জন্য এই ছয়মাসই। এরপরই আবার রিয়াল শিবিরে ফিরতে হবে তাকে।

  • মেসুত ওজিল: (আর্সেনাল থেকে ফেরেনবাচ) ফ্রি ট্রান্সফার

আর্সেনালের গত দশকের সেরা খেলোয়াড় হিসেব করলে সেখানে কোনো তর্ক ছাড়াই মেসুট ওজিলের নাম আসবে। যদিও মিকেল আর্টেটা আসার পর ওজিল বেশ ভালোই সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু চীনের উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে কথা বলে বেশ সমালোচনায় পরেছিলেন। এরপর থেকেই আর্সেনাল দলে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গিয়েছিলেন ওজিল। কোচ আর্টেটা অবশ্য অনেকবারই বলেছেন এটা সম্পূর্ণই ট্যাক্টিক্যাল ডিসিশন। তা সত্ত্বেও তাকে মাঠে দেখা যায়নি সেই মার্চ মাস থেকে।

করোনা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে শেষ ৭ মার্চ দেখা গিয়েছিল তাকে মাঠে। অবশেষে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে আর্সেনাল। তাকে কিনেছে তুর্কিশ ক্লাব ফেরেনবাচ। এই ৩২ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে কিনতে কোনো পয়সাই লাগেনি তাদের। শুধু ফুটবল খেলার সুযোগ নতুন করে পেতে আগামী ৬ মাস ফ্রিতেই তাদের হয়ে খেলবেন ওজিল।

  • মারিও মানজুকিচ (এসি মিলান)ফ্রি ট্রান্সফার

এই মৌসুমের শুরু থেকেই অসাধারণ ফর্মে রয়েছে এসি মিলান। কি আক্রমণভাগ, কি রক্ষণভাগ; সবজায়গাতেই সমানভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে তাদের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু স্কুডেট্টোর জন্য লড়তে গেলে তো শুধু ভালো হলে চলে না।

সিজনের শুরুতে ইব্রাহিমোভিচের ইনজুরিতে দলের গোল সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। সেটি দূর করতেই ইতালিয়ান ভেটেরান মানজুকিচকে ভিড়িয়েছে মিলান। গত ৬ মাস ধরে ক্লাব ছাড়া ছিলেন এই ক্রোয়েশিয়ান। তাই বিনামূল্যেই তাকে দলে ভিড়িয়েছে মিলান।

  • তাকাফুসো কুবো (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে গেটাফে)লোন

মৌসুমের শুরুতে কুবোকে ভিয়ারিয়ালে লোনে পাঠিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু অর্ধেক মৌসুমেও কোনো পরিবর্তন তো আসেইনি, বরং উনাই এমেরি তাঁকে দলেই রাখতেন না। তাই অতিষ্ট হয়ে কুবো রিয়াল মাদ্রিদকে বলেছিল নতুন ক্লাব খুঁজতে। তাই এই জানুয়ারিতে তাঁকে ফেরত এনে গেটাফেতে লোনে পাঠায় রিয়াল। সেখানে গিয়েই জাদু দেখানো শুরু করেছেন কুবো।

  • লুকা ইয়োভিচ (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে এইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফ্রুট) – লোন

লুকা ইয়োভিচকে রিয়ালে আনা হয়েছিল রিয়ালের ভবিষ্যৎ হিসেবে। কিন্তু গত দেড় মৌসুমেও রিয়ালে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। তাই পুরোনো দলেই তাকে ছয় মাসের জন্য ধারে পাঠিয়েছে রিয়াল। তাতে করে যদি আবারও ফর্মে ফিরেন ইয়োভিচ। যদিও নতুন দলে খুব ভালোমতোই মানিয়ে নিতে পেরেছেন এই ইয়াংস্টার।

  • পাপু গোমেজ (আটালান্তা থেকে সেভিয়া) ১০ মিলিয়ন ইউরো

গত দুই মৌসুমে আতালান্তার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পেছনের কারিগর যদি ধরা হয়, তবে পাপু গোমেজ থাকবেন সেই তালিকার শীর্ষে। কোচ জিয়ান গাসপেরেনির অধীনে আতালান্তা দল সত্যিই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিল নীল-কালো দলটি। কিন্তু গত নভেম্বরে পাপু গোমেজ আর গাসপেরেনির মধ্যে বিশাল ঝগড়ার সূত্রপাত হয় গেমটাইম ও প্লেয়িং স্টাইল নিয়ে। সে দ্বন্দ্ব শুধু ড্রেসিং রুমে আটকে থাকেনি বরং তা ছাড়িয়ে মিডিয়া এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও পৌঁছে গিয়েছে।

তাই পাপু গোমেজের দল ছাড়া ছিল সময়ের ব্যাপার। আর সেই সুযোগটাই নিয়েছে সেভিয়া। মাত্র ১০ মিলিয়নে ধুরুন্ধর এই স্ট্রাইকারকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। মৌসুমের পরের হাফের জন্য বেশ ভয়ঙ্করই হয়ে উঠল সেভিয়া।

  • ওজান কাবাক (শালকে ০৪ থেকে লিভারপুল) – ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড

এই মৌসুম লিভারপুল শুরু করেছিল নিজেদের লিগ ডিফেন্ড করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই নিজেদের সেরা ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইককে পুরো মৌসুমের জন্য হারায় লিভারপুল। এরপর এক এক করে প্রায় সবগুলো ডিফেন্ডারই পরছিলে চোটের কবলে। তাই একদম শেষ সময়ে লিভারপুল জার্মান ক্লাব শালকে ০৪ থেকে কিনে আনে ২০ বছর বয়সী ডিফেন্ডার ওজান কাবাককে।

বয়স কম হলেও খেলায় বেশ পরিপক্কতা আছে বৈকি। যদিও এই মৌসুমে খুব একটা ভালো করতে পারছে না শালকে, কিন্তু তাঁর মাঝেও তাঁর ডিফেন্সিভ পারফরম্যান্স ছিল চোখে পরার মতন। ৬ মাসের জন্য ধারে ও মৌসুম শেষে ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে পাকাপাকিভাবে তাকে কিনে নিবে অল রেডসরা। আনুসাঙ্গিক শর্তাবলি মিলিয়ে মোট খরচ পরবে ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link