ডাকহীন হাজারী ক্লাব

ক্রিকেট হলো পরিসংখ্যানের খেলা। এখানে প্রতি মুহূর্তেই তৈরি হয় একের পর এক রেকর্ড। নতুন রেকর্ড ভেঙে তৈরি হয় নতুন কোনো রেকর্ড। সর্ব্বোচ্চ রান,সর্ব্বোচ্চ উইকেট এইসব রেকর্ডের পাশাপাশি আছে আরো বিভিন্ন রেকর্ড। যেমন কোনো নো বল না দিয়ে সর্ব্বোচ্চ উইকেট, শূন্য রানে আউট না হয়ে সর্ব্বোচ্চ রান ইত্যাদি।

তেমনই একটা রেকর্ডের কথা বলবো এবার। এমন গুটিকয়েক ক্রিকেটার আছেন যারা টেস্ট ক্যারিয়ারে হাজারের ওপর রান করছেন, আবার কখনোই শূন্য রানে আউট হননি। বিচিত্র এই হাজারী ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • হার্বার্ট কলিন্স (অস্ট্রেলিয়া)

হার্বার্ট কলিন্স,অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। তিনি পরিচিত ছিলেন হর্সশো নামে।অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯২০ সাল থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে খেলেছেন। এই সময়ে দলে সুযোগ পান ১৯ টেস্টে। ১৯২০ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক হয়।

১৯ টেস্টে ৩১ ইনিংসে ৪৫.০৬ গড়ে ১৩৫২ রান করেন। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছিলো ২০৩ রানের। ১৯২১ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রকার বিপক্ষে কযারিয়ারের একমাত্র দ্বিশতকটি হাঁকান তিনি। ক্যারিয়ারে তিনি তিন বার ১ রান আউট হন। আর এটাই ছিলো তাঁর সর্বনিম্ন রান। তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছোটো হলেও প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার বেশ দীর্ঘ ছিলো।

নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ১৬৮ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। কলিন্স প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪০.০১ গড়ে করেছেন ৯৯২৪ রান। ব্যাটিং এর পাশাপাশি ভালো বোলিং করতে পারতেন। বল হাতে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে নিয়েছেন ১৮১ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ছিলো ৩১ রানে ৮ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বল হাতে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট।

  • ব্রেন্ডন ন্যাশ ( ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ব্রেন্ডন ন্যাশের জন্ম অস্ট্রেলিয়া। বাবা ছিলেন ক্যারিবিয়ান। সেই সূত্রেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ন্যাশ। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি দিন খেলতে পারেননি তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মাত্র ২১ টেস্ট এবং ৯ ওয়ানডেতেই ক্যারিয়ার থমকে গেছে তাঁর। ন্যাশ টেস্টে ৩৩ ইনিংসে করেছিলেন ১১০৩ রান এবং ওয়ানডেতে ১০৪ রান। ছোট্ট এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনই শুন্য রানে আউট হননি তিনি। এক রানে অনেকবারই প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন তিনি। ন্যাশ ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে জ্যামাইকাতে তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেস্ট খেলেন।

  • রেজি ডাফ (অস্ট্রেলিয়া)

রেজিল্যান্ড আলেকজান্ডার ডাফ; ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ১৯০২ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ২২ টেস্ট খেলেন। ২২ টেস্টে ৪০ ইনিংস ব্যাটিং করে ৩৫.৫৯ গড়ে করেন ১৩১৭ রান। ক্যারিয়ার সর্ব্বোচ্চ রান ছিলো ১৪৬।

২২ টেস্টে ছোট্ট ক্যারিয়ারে কখনই শূন্য রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেননি। ১৯০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন তিনি। ডাফের মদের প্রতি আসক্তি ছিলো। এই কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি দিন খেলতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর মাত্র ৩৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তাঁর শেষকৃত্য করার মত অর্থ ছিলো না তাঁর পরিবারের। ডাফের নিউ সাউথ ওয়েলস সতীর্থ মার্টিন উইলিয়ামসনের অর্থ সাহায্যে শেষকৃত্য হয়।

  • জিম বারকে (অস্ট্রেলিয়া)

জিম বারকে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত ২৪ টেস্ট খেলেন। ২৪ টেস্টে ৪৪ ইনিংসে ৩৪.৫৯ গড়ে করেন ১২৮০ রান। ১৯৫৭ সালে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৮৯ রানের একটি ইনিংস খেলেন।

এটাই তাঁর ক্যারিয়ার সর্ব্বোচ্চ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুন্য রানে অপরাজিত একবার থাকলেও কখনো শূন্য রানে আউট হননি। বারকে ২৫০ মিনিট ব্যাটিং করে ২৮ রান করার জন্য বিখ্যাত, ব্রিসবেনের সেই টেস্টে তিনি বোলারদের ধৈর্য্যর পরীক্ষা নিয়েছিলেন রীতিমত।

ব্রিজেশ প্যাটেল (ভারত)

ব্রিজেশ প্যাটেল ছিলেন ভারতে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো শুন্য রানে আউট হননি তিনি। ক্যারিয়ারে বলার মত একটি ইনিংসই খেলেছিলেন তিনি।পোর্ট অফ স্পেনে অপারজিত ১১৫ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। এই ইনিংস খেলতে গিয়ে সুনীল গাভাস্কারের সাথে গড়ে তুলেন ২০৫ রানের জুটি।

ব্রিজেশ প্যাটেল ভারতের হয়ে ২১ টেস্ট এবং ১০ ওয়ানডে খেলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেন ১২১৫ রান। ১৯৭৯ বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষেতে ভারতে হয়ে সর্বশেষ মাঠে নামেন তিনি।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link