টাইটানিক, ব্ল্যাকউডের ৯৫ এবং করোনাকালীন অমরত্ব

টাইটানিক – ছবিটা কে না দেখেছেন। রোজ আর জ্যাকের সেই প্রেম এখনো সবার চোখেই ভাসে। কোনো জায়গায় যখন ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গানটা বাজে তখনই কল্পনায় একটাই চিত্র আসে সেটা হলো টাইটানিকের ডেকে দুইজনের সমুদ্র বিলাস। আচ্ছা, টাইটানিক কোন বন্দর থেকে ছেড়েছিলো মনে আছে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। টাইটানিক ছেড়েছিলো সাউদাম্পটন থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ। প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানি তো রীতিমতো ঘোষণাই দিয়েছে এই জাহাজ ডুববে না। কিন্তু ব্রিটিশ ভাগ্যর পরিহাস৷ প্রথম যাত্রায় ডুবে গিয়েছিলো টাইটানিক।

_______________

ক্রিকেট বন্ধ হয়েছে সেই কবেই। করোনাকালীন সময়ে বাসা থেকে বের হওয়াই যেখানে স্বপ্নের মতো সেখানে ক্রিকেট খেলা রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। লকডাউন কাটছে সবার বাসায় বসে। আর ক্রিকেট প্রেমিদের কাটছে ইউটিউবে হাইলাইটস দেখে দেখে। আচ্ছা, যদি এই ইউটিউব না থাকতো তাহলে কি হতো? আমার ভাবতেই গা শিউরে উঠেছে । আমাদের মতো একই অবস্থা ক্রিকেটারদেরও। তাদের ধ্যান-জ্ঞান, নেশা-পেশা সবই তো ওই ক্রিকেট। আর ক্রিকেট বোর্ডরাও পড়েছে রীতিমতো আর্থিক সংকটে। তাই ক্লোজ ডোর ম্যাচ নিয়েই হাজির হলো তারা।

_______________

সাউদাম্পটন, আবারো সেই বিখ্যাত সাউদাম্পটন। তবে এইবার কোনো দুঃখের ঘটনা না। সুখের এক স্মৃতি তৈরী হলো আবার। কারণ, ক্রিকেট যে ফিরেছে মাঠে। ক্রিকেটের জন্মস্থানেই শুরু হয়েছে আবার ক্রিকেট। ক্যারিবিয়ান রোমান্টিক প্রেম কাহিনীর সাথে ব্রিটিশ ওয়েস্টার্ন পোয়েট্রি।

_______________

সিবলি, ক্রলি, পোপ, বেজ নতুন কবিতার লাইন সেই ওয়েস্টার্ন পোয়েট্রি’র কিন্তু মিসিং স্টুয়ার্ট ব্রড। তবে ছিলো পছন্দের ‘বার্নলি এক্সপ্রেস’ খ্যাত জিমি অ্যান্ডারসন যার বোলিংয়ের সুর যেকোনো ব্যাটিংকেই ধ্বসিয়ে দিতে পারে সাথে দুই গতিদানব আর্চার আর উডের গতির ঝড়। বার্নস, ডেনলিন সাথে সেই মহাকাব্যর নায়ক বেন স্টোকস এবার নেমেছে নেতা হিসেবে৷ আর বিপরীতে ক্যারিবিয়ান রোমান্টিক প্রেম কাহিনির নায়কেরা নেমেছে তাদের রোমান্টিসিজমের জাদু দেখাতে।

_______________

প্রথমেই টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে একটা ভূল লাইন রচনা করলেন বেন স্টোকস। মেঘলা আকাশের সাথে পিচের সুবিধা পুরোপুরি উসুল করে নিজেদের রোমান্টিক জাদুর বাক্সো খুললেন ক্যারিবীয়রা। আর এইখানে পুরোপুরি এক রোমান্টিক নায়কের ভূমিকায় জেসন হোল্ডার। গুণে গুণে ছয়টা ব্রিটিশ পোয়েট্রির ভুল ধরলের তিনি আর সাথে সঙ্গ দিয়েছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। আহ, টাইটানিকও বোধহয় এর থেকে কম রোমান্টিক ছিলো। ২০৪ রানে নিজেদের কবিতার শেষ লাইন টানলো প্রথম অধ্যায়ের। যার মাঝে স্টোকসই লিখেছে ৪৩ লাইন। ক্যারিবীয়রা প্রথম ইনিংসে নেমে ব্র‍্যাথওয়েট, ডওরিচ আর চেজের জাদুতে ৩১৮ রানে তাদের প্রেম কাহিনী শেষ করে। বিপরীতে স্টোকস চারটা সঠিক পঙতি বসিয়েছে তাদের কাব্য।

ওয়েস্টার্ন পয়েট্রি যদি তাদের মহাকাব্য রচনা করতে তাহলে আগে ১১৪ রান পার করে নতুন কবিতা শুরু করতে হবে। কিন্তু বিপক্ষ দলে যে যাদুকররা আছে। বার্নস আর সিবলি সুন্দর লাইন লিখে চলেছেন, কিন্তু এর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রোস্টন চেজ, ফিরান বার্নসকে। এর পর ডেনলি এসে ২৯ করে ফিরে যান। এরপর ক্রলি লিখেন ৭৬ রানের বিখ্যাত লাইনগুলা আর অন্যদিকে স্টোক্স সাহেব তার কবিতার অংশ পুরোন করতে পারলেন না। ইংলিশ কাব্য থামলো ৩১৩ রানে। গুণে গুণে ২০০ রানের টার্গেট দিল ক্যারিবীয়দের৷ ইংলিশদের উপর এই ইনিংসে জাদু দেখিয়েছে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, নিয়েছেন ৫ জন কবির উইকেট। আহ!

_______________

ক্যারিবীয়ান রোমান্টিসিজম! চতুর্থ ইনিংসে কবিতা লিখাই বলুন বা প্রেম কাহিনী লিখা। রীতিমতো ভয়ঙ্কর উঠে পরিবেশ। শুরুতেই আর্চারের ভয়ঙ্করসুন্দর লাইন লিখা শুরু সাথে সাথে দুইজন নেই। আর বোধহয় ক্যারিবীয়ান রোমান্টিক সাগরে ডুব দেয়া হবে না। এরই মাঝে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে চলে যান ক্যাম্পবেল। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। কে জিতবে? এরপর শুরু ব্ল্যাকউড আর চেজ এর মহাকাব্য।

ও মা একি!

ক্যারিবিয়ান প্রেম কাহিনীতে আবার মহাকাব্য সেটাতো ছিলো ব্রিটিশদের। হ্যাঁ, মহাকাব্য রচনা করেছে ক্যারিবিয়ানরাই আর সেটা তাদের রোমান্টিসিজমের মহাকাব্য। আর সেই মহাকাব্যর নায়ক জারমেইন ব্ল্যাকউড। ৯৫ রানের কাব্য। কে জানতো এই ম্যাচ যে উইন্ডিজ জিতবে। ক্যারিবিয়ান সাগরের পাড়ের রোমান্টিকতা যেন হাজিরা দিয়ে গেল সেই সাউদাম্পটনে। ওয়েস্টার্ন পোয়েট্রিকে হারিয়ে দিয়ে নিজেদের প্রেমকথার জানান দিলো ক্যারিবিয়ানরা।

_______________

করোনা, লকডাউনে সবারই যখন ম্যাড়মেড়ে অবস্থা। তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস এই মহাকাব্যিক টেস্ট। বাসায় বসে বসে ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলো এই নাভিশ্বাস তোলা টেস্ট দেখে স্বস্তির ঢেকুর তুলে ডিপ্রেশন কাটিয়ে খেলা শেষে টিভি সেটের সামনে থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করছে আর সেই করোনাকালীন অমরত্বের কল্পনা করছে। ক্রিকেট ইউ হ্যাভ বিন মিসড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link