বিশ্বের অন্য কোনো টি-টোয়েন্টি লিগের প্লেয়ার ড্রাফট কিংবা নিলাম নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কি?
না, হয় না। অন্য কোনো টি-টোয়েন্টি লিগের নিলাম কিংবা প্লেয়ার ড্রাফট প্রায় নীরবেই সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু এর ব্যতিক্রম আইপিএল। সাড়া জাগানো নিলাম হয় এই লিগের। সাথে কিছু চমক। আর চমকগুলো দেখতে মুখিয়ে থাকে ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আইপিএল মানেই অর্থের ঝনঝনানি। প্রতিটা আইপিএল নিলামের পর আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকেন কিছু ক্রিকেটার। এবারের আইপিএল নিলামের পরও ব্যতিক্রম ঘটেনি। করোনার জন্য অর্থনৈতিক সংকট কিংবা অন্য কোনো প্রভাব বোঝা যায় নি আইপিএলের এবারের নিলামে। প্রতিটা দলই হাত খুলে খরচ করেছে ক্রিকেটারদের পিছনে।
প্রত্যেক আইপিএলেই হয়ে থাকে অর্থের লগ্নি। কিন্তু এইবারের আইপিএলে রেকর্ড দুইজন ক্রিকেটারকে ১৫ কোটি রুপির উপর দাম হাঁকিয়েছে দলগুলো। যা কিনা আইপিএল ইতিহাসের রেকর্ড। আইপিএলে প্রথমবারের মত ১৫ কোটি রুপির দর পাওয়ার রেকর্ড গড়েন যুবরাজ সিং ২০১৫ সালে। এর পর ২০২০ সালে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই রেকর্ডে আসেন প্যাট ক্যামিন্স। আর ঠিক তার পরের বছরই ১৫ কোটি রুপির রেকর্ড ছুলেন দুই ক্রিকেটার ক্রিস মরিস এবং কাইল জেমিসন।
আইপিএল ইতিহাসের সর্ব্বোচ্চ দাম পাওয়া ক্রিকেটার দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
- ক্রিস মরিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সর্বশেষ আইপিএলে ক্রিস মরিস খেলেছিলেন রয়েল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে। কিন্তু ইনজুরির কারনে মাত্র ৭ টি ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন। আর এই ৭ ম্যাচে খুব একটা ভালো পারফর্ম করতে পারেন নি। তাই ব্যাঙ্গালুরু তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো। এই বারের নিলামে ৩২ বছর বয়সী মরিসকে ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে রাজস্থান রয়েলস। এখন পর্যন্ত আইপিএলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার মরিস।
- যুবরাজ সিং (ভারত)
ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার যুবরাজ। ভারতের ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম কারিগর ছিলেন যুবরাজ। বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচের জয় এনে দেয়া এই অলরাউন্ডার কখনই সফল ছিলেন না আইপিএলে। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে ৬ বলে ৬ ছক্কা হাকানোর বিরল কীর্তি তারই। এছাড়া অনেক আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে দলকে একাই সাফল্য এনে দিয়েছেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলার সুবাদে ২০১৫ আইপিএল নিলামে যুবরাজ সিং এর দাম হাকানো হয় ১৬ কোটি রুপি। ১৬ কোটি রুপির বিনিময়ে যোগ দেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে। কিন্তু বলার মত কোনো পারফর্ম করতে পারেন নি তিনি। পরের বছর নিলামে আবারো নাম উঠে যুবরাজ সিংয়ের।
- প্যাট কমিন্স (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলে অন্যতম ভরসার নাম প্যাট কমিন্স। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক। কিন্তু বয়স কম এবং ইনজুরি প্রবণতার কারণে প্রায় ৬ বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। এরপর দলে ফিরে নিজের সামর্থ্যের প্রমান দিতে ভুল করেননি তিনি।
তিন ফরম্যাটেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন নিয়মিত পেসার হিসেবে। আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলার স্বীকৃতি স্বরুপ পান আইপিএলের নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ। ২০২০ আইপিএলের নিলামে মোটামুটি তাকে নিয়ে যুদ্ধ করে সবগুলো ফ্রাঞ্চাইজি। পরবর্তীতে ১৫ কোটি ৫০ লাখ রুপির বিনিময়ে।
- ঈশান কিষাণ (ভারত)
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ঘরের ছেলেই বলা যায় ঈশান কিষাণকে। সর্বশেষ কয়েকটা আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের যে বিপুল সাফল্য তাতে বড় অবদান এই ঈশান কিষাণের। তাই তো, জাতীয় দলে তাঁর পায়ের নিচের মাটি শক্ত হওয়ার আগেই তাঁকে নিয়ে টানাটানি হল নিলাম ঘরে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স নাছোড়বান্দার মতো বিড করে যেতেই থাকেন কিষাণের জন্যে। শেষমেশ তাঁদের সফলতা আসে। ১৫ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরে। দিনের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবেই ঘরে ফিরলেন ঈশান কিষাণ।
- কাইল জেমিসন (নিউজিল্যান্ড)
কিউই পেসার কাইল জেমিসন এইবারের আইপিএলে প্রথমবারের মত দল পান। এর আগে কখনই আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা নেই জেমিসনের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দূর্দান্ত পারফর্ম করে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তৈরি করেছিলেম আইপিএল নিলামে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব বেশি বড় না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের দূর্দান্ত পারফর্মেন্স এবং নিচের দিকে ব্যাট হাতে দূর্দান্ত তিনি। এসব বিবেচনাতেই ব্যাঙ্গালুরু দলে ভিড়িয়েছে এই কিউই পেসারকে।
- গৌতম গম্ভীর (ভারত)
২০১১ সালের আইপিএল নিলামের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ছিলেন গৌতম গম্ভীর। ভারতে সাবেক এই ওপেনার ব্যাটসম্যান কলকাতাতে খেলেছেন ৭ মৌসুম। প্রত্যেক মৌসুমের দলের প্রয়োজনে সব জায়গায় অবদান রেখেছিলেন তিনি। এছাড়াও তার অধিনায়কত্বেই প্রথমবারের মত আইপিএল শিরোপার দেখা পায় বলিউড স্টার শাহরুখ খানের দল কলকাতা। শুধু অধিনায়কত্বে নয় ব্যাট হাতেও দূর্দান্ত ছিলেন কলকাতাতে।
- বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
এই ইংলিশ অলরাউন্ডার ২০১৭ আইপিএল নিলামের সবচেয়ে বেশি দামি ক্রিকেটার ছিলেন। তখনকার সময়ে আইপিএলের সল রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্ট স্টোকসকে দলে ভিড়িয়েছিলো ১৪ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে। ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে দূর্দান্ত পারফর্ম করে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচের স্টোকসের শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পুরো বিশ্বকাপে দূর্দান্ত এবং কার্যকরী অলরাউন্ডিং পারফর্মের কারণে ২০১৭ আইপিএলে দলে ভেড়ায় বেন স্টোকসকে। কিন্তু ২০১৭ আইপিএলে বলার মত কিছুই করতে পারেননি তিনি।
- গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)
২০২০ আইপিএলে বাজে খেলার কারণে পাঞ্জাব দল এবারের নিলামের আগে আগে তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আইপিএলের পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজে দূর্দান্ত পারফর্মেন্স এবং বিগব্যাশের পারফর্মের কারণে এবারের আইপিএলে তাকে দলে ভেড়াতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি গুলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৪ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে ম্যাক্সওয়েলকে দলে ভেড়ায় রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু।