কভেন্ট্রির ঝলকানি হেরেছিল তামিমের ব্যাটে

ক্রিকেট বিশ্ব হয়তো চশমা পরে ব্যাট করতে নামা সেই জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানকে মনেও রাখতো না। তবে ২৬ বছরের সেই তরুণ বাধ্য করেছিলেন তাঁর নামটি মনে রাখতে। সামনে সাইদ আনোয়ারের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৪ রানের একটা মাইলফলকের জন্য হলেও তাঁকে মনে রাখা উচিৎ। তখন হালের রোহিত শর্মা কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্সরা ছিলেন না। তবে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, বীরেন্দ্র শেবাগ কিংবা শচীন টেন্ডুলকাররা তো ছিলেন। এই মহা তারকারাও পারেননি। তবে চার্লস কভেন্ট্রি নামে এক আনকোরা ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ারের পাশে গিয়ে বসেছিলেন।

ক্রিকেট বিশ্ব হয়তো চশমা পরে ব্যাট করতে নামা সেই জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানকে মনেও রাখতো না। তবে ২৬ বছরের সেই তরুণ বাধ্য করেছিলেন তাঁর নামটি মনে রাখতে। সামনে সাইদ আনোয়ারের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৪ রানের একটা মাইলফলকের জন্য হলেও তাঁকে মনে রাখা উচিৎ। তখন হালের রোহিত শর্মা কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্সরা ছিলেন না। তবে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, বীরেন্দ্র শেবাগ কিংবা শচীন টেন্ডুলকাররা তো ছিলেন। এই মহা তারকারাও পারেননি। তবে চার্লস কভেন্ট্রি নামে এক আনকোরা ব্যাটসম্যান সাইদ আনোয়ারের পাশে গিয়ে বসেছিলেন।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচের কথা বলছি। যেই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্যও অনেক বেশি স্মরণীয়। সেই প্রথম ৩০০ এর বেশি রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এছাড়া তামিম ইকবালও সেদিন ১৫৪ রানের এক মহাকাব্য লিখেছিলেন। যেটি অনেক বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটে কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল। তবে এসব কিছুকে পেছনে ফেলে সেদিন একটি নামই ভেসে বেড়াচ্ছিল ক্রিকেট দুনিয়ায়; চার্লস কভেন্ট্রি।

চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ রানের ইনিংসটাই তখন ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ইনিংস। সেই ইনিংসকে টপকে যাবে কে তা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক ছিল। সেই তালিকায় এগিয়ে ছিলেন গিলক্রিস্ট কিংবা শেবাগরাই। তালিকা হয়তো আরো লম্বা করা যেত। তবে সেই তালিকা যতই লম্বা হোক কারো তালিকাতেই কী একবারের জন্যও চার্লস কভেন্ট্রির নামটা আসতো।

কভেন্ট্রি জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৩ সালে। তখনও ক্রিকেট বিশ্বে বেশ শক্তিশালী ও সমীহ জাগানিয়া দল জিম্বাবুয়ে। সেই দলের হয়ে এর আগে ১৪ টি ম্যাচ খেলেছিলেন। নিজের ১৫ তম ওয়ানডে ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে এই ম্যাচটি আসলে তাঁর খেলারই কথা ছিল না। ২০০৬ সালেই কোচ ও ম্যানাজারের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটই ছেড়ে গিয়েছিলেন। মাঝে ইংল্যান্ডের একটি ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। তারপরেও কোন ভাবে তিনি ফিরে এসেছিলেন। এসেছিলেন হয়তো ইতিহাস গড়ার জন্যই।

১৫৬ বলে খেললেন ১৯৪ রানের ঐতিহাসিক এক ইনিংস। সেই সময় এটিই ওয়ানডে ক্রিকেটে কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ স্কোর। তাঁর পাশে আছেন শুধু সাঈদ আনোয়ার। তবে সাঈদ আনোয়ারকেও টপকে গিয়েছিলেন তিনি। চেন্নাইয়ে সাঈদ আনোয়ার নিজের উইকেট দিয়ে এসেছিলেন। তবে চার্লস কভেন্ট্রি যে ছিলেন অপরাজিত। ফলে সবার উপরে তো তাঁর নামটাই লিখা হবে।

চাঁদের যেমন কলঙ্ক থাকে কভেন্ট্রির সেই ইনিংসেরও কিছু কলঙ্ক ছিল। বাংলাদেশি ফিল্ডারদের বদৌলতে ১৩ ও ১৩৮ রানে দুইবার সহজ জীবন পেয়েছেন। সৈয়দ রাসেল ও মাহমুদউল্লাহ দিয়াদ সেই ক্যাচ গুলো লুফে নিতে পারেননি। তবে তাতে কীই বা আসে যায়। ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে তো সেদিন লিখা হয়ে গিয়েছিল চার্লস কভেন্ট্রির নাম।

এর আগে খেলা ১৪ ওয়ানডে ম্যাচে কভেন্ট্রির সর্বসাকুল্যে রান ছিল ৩০১। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ৭৪ রানের একটি ইনিংস ছিল। অতএব ১৯৪ রানের ওই ইনিংসটিই ছিল তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। প্রথম সবকিছুই নাকি বিশেষ হয়, তবে চার্লস কভেন্ট্রির সেই ইনিংস কি শুধুই বিশেষ ছিল। অবশ্য সেটিই ছিল কভেন্ট্রির শেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরিও।

জিম্বাবুয়ের হয়ে সবমিলিয়ে ৩৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন চার্লস কভেন্ট্রি। সেখানে তাঁর ঝুলিতে আছে ৮৩১ রান। সেই একটি সেঞ্চুরি পাশে আছে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও। এছাড়া দেশটির হয়ে ২ টি টেস্ট ও ১৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছিলেন তিনি। ফলে চার্সল কভেন্ট্রি তাঁকে মনে রাখার জন্য শুধু এই একটি দিনই, একটি ইনিংসই রেখে গিয়েছেন।

অবশ্য ক্রিকেট বিশ্বে কেন, সেই ম্যাচেও তিনি নায়ক ছিলেন না। তাঁকে ছাপিয়ে নায়ক বনে যান তামিম ইকবাল খান। তামিম সেদিন ১৩৮ বলে করেন ১৫৪ রান। সেদিন নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ৩০০’র ওপর রান তাড়া করে জিতে যায় বাংলাদেশ – সেটা তো আগেই বললাম। ৩১৩ রানের লক্ষ্যে যখন চার উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ দল যখন জেতে তখনও ইনিংসের ১৩ টা বল বাকি। ইতিহাসে কভেন্ট্রিকে মনে রাখেনি, রেখেছে তামিম ইকবালকে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...