জার্মান স্নাইপারের ডিফেন্স চেড়া এক পাস। ভিনিসিয়াসের গতির সাথে পারা বড্ড দায়। ডি-বক্সের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান তরুণের ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিং। কুপোকাত জার্মানির দেয়াল খ্যাত ম্যানুয়েল নয়্যার। বায়ার্ন মিউনিখের দূর্গে দাঁড়িয়ে হাত খুলে উদযাপন। কুর্নিশ করা টনি ক্রুসকে। এমন দৃশ্যের দেখা তো আর সচরাচর মেলে না।
ভিনিসিয়াস জুনিয়র সেটাই করেছেন আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে। প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠ ছেয়ে গেছে লালের মিছিলে। গলা ফাটিয়ে প্রায় লাখ খানেক দর্শক অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন জার্মান ক্লাবটিকে। এমন এক পরিস্থিতির মাঝে দাঁড়িয়েও ২৩ বছরের এক ছোকড়া জয় বঞ্চিত করেছে স্বাগতিকদের।
কেউ কেউ তো নাম দিয়েছে ইউরোপিয়ান ক্ল্যাসিকো। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সফলতম দুই দলের লড়াইকে তেমন এক নাম দেওয়া অবশ্য যেতেই পারে। বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের লড়াইটা যেমন হওয়ার হয়েছে ঠিকঠিক তেমনটাই। দুই পরাশক্তির লড়াইটা হয়েছে একেবারে দারুণভাবে।
ম্যাচের শুরুতে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছেই রেখেছিল থমাস মুলারের দল। তবে, হুট করেই ম্যাচের ২০ মিনিটের পর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। এরপরই এসে যায় ভিনিসিয়াসের পা থেকে প্রথম গোল। সেই গোলে টনি ক্রুসের অবদানটাই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। ওমন থ্রু পাসের সম্ভাবনা একমাত্র স্নাইপারের চোখেই ধরা পড়ে।
তবে সেই গোলটায় ভিনিসিয়াসের অবদানও নেয়াহেত কম নয়। ক্রুসের সেই পাসের আগে ভিনিসিয়াস নিজের মার্কার মিন-জে কিমকে নিজের সাথে টেনে ডিফেন্স লাইন থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তাতে ডি বক্সের ঠিক মধ্যভাগের উপরের দিকটায় বিশাল এক ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। আর সেখানটায় বল বাড়িয়ে দেন ক্রুস। ডান পায়ের মাপা শটে নয়্যারকে পরাস্ত করেছেন ভিনি।
এরপর প্রথমার্ধে আক্রমণ হয়েছে উলটো জবাবও দিয়েছে দুই দল। কিন্তু গোলের দেখা আর পাওয়া হয়ে ওঠেনি কারো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রিয়াল মাদ্রিদকে চেপে ধরতে শুরু করে বায়ার্ন। ঘরের মাঠে পরাজিত হওয়াটা অন্তত মেনে নেওয়ার নয়।
বিরতির পর আট মিনিটের মাথায় ভাঙে রিয়ালের রক্ষণ। লিরয় সানের গতির কাছে মাত খেয়ে যান ফার্লান্ড মেন্ডি। আর বাম পাশ দিয়ে ঢুকে সানের বা-পায়ের জোরালো শট যেন চোখেই দেখেননি আন্দ্রে লুনিন। ১-১ সমতা। রিয়ালের টনক নড়বার আগে আরও বেশকিছু আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকে মাদ্রিদ রক্ষণে। খানিকটা ক্লান্ত হয়েই লুকাস ভাসকুয়েজ করে ফেলেন ভুল।
ডি-বক্সের মধ্যখানে জামাল মুসিয়ালাকে ফাউল করে বসেন তিনি। তাতে করে পেনাল্টি পেয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ। চার মিনিটের মাথায় ভাভারিয়ানরা ম্যাচে লিড নিয়ে নেয়। পেনাল্টি থেকে গোল করেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন। এরপরই ম্যাচে ফেরার জন্যে মড়িয়া হয়ে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদ। একের পর এক খেলোয়াড় বদলি করতে থাকেন ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
সুফল পেতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের একেবারে শেষভাগ অবধি। ৮২ মিনিটের মাথায় বায়ার্নের বক্সে ফাউল করেন কিম। রদ্রিগোকে পেছন থেকে টেনে ধরেন তিনি। ব্যাস পেনাল্টি পেয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। মাঠে তখন উপস্থিত ছিলেন লুকা মদ্রিচ। চাইলেই হয়ত অভিজ্ঞতা বিচারে মদ্রিচ পেনাল্টি নিতে পারতেন। তবে সেই পেনাল্টি নেন ভিনি। শেষতক গোলও আদায় করে দলকে সমতায় ফেরাতে ভুল করেননি।
দলের পক্ষে দু’টো গোল করে ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও জিতে নেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তাছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের তিন সেমিফাইনালে গোলের রেকর্ডটিও নিজের করে নেন ব্রাজিলিয়ান নব্য সেনসেশন। মাদ্রিদের ঘরের মাঠে ৯ মে বায়ার্ন খেলবে দ্বিতীয় লিগ। প্রথম লেগ ড্র করায় লস ব্ল্যাঙ্কোসরা স্বস্তিতে থাকলেও, ভীষণ অস্বস্তি যেন টমাস টুখেলের শিবিরে।