স্বরণীয় কিউই আগ্রাসনের আক্ষেপ

৩৪ বছর বয়সেই ওরাম বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে একা হাতে তাঁর অনবদ্য অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দলকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ বলা হতো যে সময়টা সে সময়ে দলে ছিলেন ওরাম। ইনজুরিতে ক্যারিয়ারে সাফল্যের শীর্ষে না যেতে পারলেও তিনি ছিলেন একজন ধারাবাহিক পারফরমার। তিনি বরাবরই দলের পক্ষে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং আর দুর্দান্ত ফিল্ডিং ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সবসময়ই থাকবে। যদিও, হ্যাডলির রেখে যাওয়া জায়গাটা নিতে পারেননি তিনি।

একজন অলরাউন্ডার সবসময়ই দলের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দলের প্রয়োজনে ব্যাট এবং বল হাতে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন অলরাউন্ডাররা। নব্বইয়ের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছু তারকা অলরাউন্ডার ছিলেন। বিশেষ করে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে। দক্ষিণ আফ্রিকায় তখন জ্যাক ক্যালিস, ল্যান্স ক্লুজনার, শন পোলকের মতো তারকা অলরাউন্ডাররা খেলতেন।

তেমনি নিউজিল্যান্ড দলেও বেশ কিছু তারকা অলরাউন্ডার ছিলেন। ক্রিস কেয়ার্নস, স্কট স্টাইরিস ও ক্রিস হ্যারিসের মতো অলরাউন্ডাররা দলে তখন বেশ পরিচিত মুখ। তবে সে সময়ে কিউই নির্বাচকদের নজরে ছিলেন আরেক দীর্ঘদেহী অলরাউন্ডার। ৬.৬ ইঞ্চি লম্বা প্রতিভাবান এক তরুণ অলরাউন্ডার – নাম জ্যাকব ওরাম। নিউজিল্যান্ড ভেবেছিল, চলে এসেছেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলির যোগ্য উত্তরসূরী।

২ সেপ্টেম্বর ২০০৯। কলম্বোর প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। ১৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে লঙ্কানরা। ১৮তম ওভারের শেষ বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ফেরত পাঠান ওরাম। এরপর ইনিংসের শেষ ওভার। বল করতে আসলেন ওরাম। লঙ্কানদের জিততে প্রয়োজন ৯ রান, হাতে তিন উইকেট!

প্রথম বলেই লং অফে ক্যাচ দিয়ে আউট মালিঙ্গা বান্দারা। নিজের আগের ওভারের শেষ বলে উইকেট আর এই ওভারের প্রথম বলে উইকেট নেওয়ায় পরের বলটি ছিলো ওরামের হ্যাটট্রিক বল। এরপর ওভারের দ্বিতীয় বলটি করলেন তিনি। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়লেন নুয়ান কুলাসেকেরা। তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে হ্যাট্রিক করলেন ওরাম। কিন্তু মাঠে সেরকম কোনো উল্লাস নেই!

অদ্ভুতভাবে জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন লেখা ভাসছে ‘অন আ হ্যাটট্রিক’! মানে ওরামের হ্যাটট্রিক হয়নি এখনো? ম্যাচের ওই মুহূর্তে দল এতোটাই চাপে ছিলো কেউ খেয়ালই করেননি ওরাম হ্যাটট্রিক করে ফেলেছেন। এমনকি খোদ ওরামই তা জানতেন না!

তাই বলে মাঠের বাইরে থাকা অফিসিয়ালস রাও ভুল করবেন?! এমনকি কমেন্ট্রিতে থাকা ড্যানি মরিসন এবং ইয়ান বিশপও বলছিলেন ‘জ্যাকব ওরাম অন আ হ্যাটট্রিক’! যাক শেষ ওভারের তৃতীয় বল করলেন ওরাম। শেষ উইকেটে স্ট্রাইকে থাকা মালিঙ্গা সিঙ্গেল নিলেন। আর কমেন্ট্রিতে থাকা ড্যানি মরিসন বলতে লাগলেন ‘অল্পের জন্য হ্যাট্রিক মিস করলেন ওরাম’! শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে তিন রানের জয় পায় কিউইরা।

ম্যাচের পর হোটেলে গিয়ে ওরাম জানতে পারেন যে তিনি হ্যাট্রিক করে ফেলেছেন! ম্যাচে টান টান উত্তেজনা থাকায় কেউই খেয়াল করেননি ওরাম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাট্রিকের কীর্তি গড়েছেন। সেদিন কলম্বোতে এক অদ্ভুত কাণ্ডের সাক্ষী থেকেছিলো দর্শকরা!

২৮ জুলাই, ১৯৭৮। নিউজিল্যান্ডের নর্থ পলমার্স্টনে জন্ম নেন জ্যাকব ওরাম। পুরো নাম জ্যাকব ডেভিড ফিলিপ ওরাম। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিলো ওরামের। স্কুলের দিনগুলোতে গোলকিপার হিসেবে ফুটবল দলে খেলতেন তিনি। তবে পরবর্তীতে ক্রিকেটেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন ওরাম। অনূর্দ্ধ-১৯ দলে কিউইদের হয়ে খেলছিলেন। ডান হাতি পেসার আর বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। এমনকি ফিল্ডিংয়ে বেশ দুর্দান্ত ছিলেন তিনি।

৪ জানুয়ারি, ২০০১। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ালিংটনে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হন ওরাম। লোয়ার-মিডল অর্ডারে ব্যাট করলেও শুরুর দিকে তার নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটিং পজিশন ছিলো না। ব্যাটিংয়ে শুরুর দিকে কার্যকরী না হলেও বোলিংয়ে ছিলেন দুর্দান্ত। তবে যতই দিন গড়িয়েছে ব্যাটিংয়েও নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ওরাম। তিনি বরাবরই আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। পাওয়ার হিটিং অ্যাবিলিটির কারণে তাঁর বেশ নামডাক ছিলো।

মূলত, উচ্চতার কারণে সবসময়ই বোলিংয়ে অতিরিক্ত সুবিধা পেতেন তিনি। উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে এক্সট্রা বাউন্স জেনারেট করতে পারতেন ওরাম। অভিষেকের পর নিজের ষষ্ঠ ম্যাচেই মেইডেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান ওরাম। ক্রাইসচার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৫৭ বলে ৫৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি!

দুর্দান্ত ইনিংসে প্রথমবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ওরাম। এরপরই পায়ের ইনজুরিতে ছিটকে যান তিনি। পরবর্তীতে ২০০২ সালের এপ্রিলে আবার কামব্যাক করেন। ফেরার ম্যাচে ৩৩ বলে ২ ছক্কা আর ৫ চারে ৪৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে আনেন ওরাম।

ততদিনে নিজেকে ওয়ানডে দলে অনেকটা সেট করে নিয়েছেন ওরাম। এরপর ২০০২ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষিক্ত হন তিনি। আর অভিষেক টেস্টেই শচীন টেন্ডুলকারকে নিজের মেইডেন শিকার করে সাদা পোশাকের পদচারণা স্বরণীয় করে রাখেন ওরাম।

ব্যাট হাতে শূন্য রানে ফিরলেও সেই ম্যাচে তাঁর পাঁচ উইকেট শিকারে সহজ জয় পায় কিউইরা। পরের টেস্টেই ছয় উইকেট শিকার করেন তিনি! যার মধ্যে ছিলো রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলির উইকেট। ব্যাট হাতে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

এরপর অকল্যান্ডে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নিজের মেইডেন পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। ব্যাট হাতে ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন। সাত ম্যাচের সিরিজের প্রথম চার ম্যাচেই তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দলকে জেতাতে সাহায্য করেন ওরাম।

এরপর ২০০৩ বিশ্বকাপ আসর। শুরুতেই হট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে টুর্নামেন্টে তাক লাগিয়ে দেয় কিউইরা। তবে সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় শিরোপার স্বপ্নটা ম্লান হয়ে যায় কিউইদের। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ডাক পান তিনি। ক্যান্ডিতে ব্যাট হাতে ৭৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দেন ওরাম। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে এক ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নেয় কিউইরা।

২০০৩ সালে ৩ নভেম্বর। সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। একই ম্যাচে তাঁর ৮৭ বলে ৮১ রানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের পরেও অজিরা এক বল হাতে রেখে দুই উইকেটের জয় পায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন ওরাম! এরপর অবশ্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। ২০০৪ সালের মার্চে হ্যামিল্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মেইডেন টেস্ট সেঞ্চুরি করেন তিনি।

শন পোলক, আন্দ্রে নেল, জ্যাক ক্যালিস, মাখায়া এনটিতের বিপক্ষে ১১৯ রানের হার না মানা এক ইনিংস খেলেন তিনি। ওই টেস্ট ড্র হলেও পরের টেস্টে তার ৯০ রানের ইনিংসে জয় পায় কিউইরা। ওরাম তখন জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ। লোয়ার-মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ে তখন কিউইদের অন্যতম ভরসা তিনি। সেই সাথে বোলিংয়েও সমানতালে পারফরম্যান্স করছিলেন। ২০০৪ সালের নভেম্বরে গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ১২৬ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেন তিনি।

এপ্রিল ২০০৫। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ানে টেস্টে ১৩৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন ওরাম। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটিই তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন এই অলরাউন্ডার। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ক্যারিয়ারের একদম পিক টাইমে ছিলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজে চোখ ধাঁধাঁনো পারফরম্যান্স দেখান তিনি। প্রথমে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ বলে ৮৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। পরের ম্যাচেই পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৪৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৭২ বলে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

সে সময়ে ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে এটি ছিলো দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। আর ওয়ানডেতে সেটিই ছিলো ওরামের একমাত্র সেঞ্চুরি। তবে সেই ম্যাচে মাত্র আট রানে হেরে যায় কিউইরা। এরপরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন ওরাম।

২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ফিল্ডিংয়ের সময় বাঁ-হাতের অনামিকা আঙ্গুল ভেঙ্গে যায় ওরামের। এরপর ইনজুরি থেকে ফিরেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দেন তিনি। ব্যাটে বলে তাঁর দাপুটে অবদানের কারণেই কিউইরা সেমিফাইনালে পা দেয়। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে সেবার ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হয় কিউইদের।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ডানেডিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ১১৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন ওরাম। যা কিনা টেস্টে তাঁর চতুর্থ সেঞ্চুরি। সেবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উদ্ভোধনী আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি।

একই বছর মে মাসে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম উঠান ওরাম। ওই সেঞ্চুরিটিই ছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর শেষ সেঞ্চুরি! এরপর ২০০৯ সালের আগস্টে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই কিউই অলরাউন্ডার।

এরপর ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সেই অসাধারণ এক হ্যাট্রিক। যা কিনা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় হ্যাট্রিক শিকার। এরপর আবারো ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে যান ওরাম। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৯ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও খেলতে পারেননি তিনি। এরপর ইনজুরি থেকে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তৃতীয় ওয়ানডেতে দলকে তিন উইকেটের জয় এনে দেন তিনি।

মার্চ ২০১০। আবারো ইনজুরিতে মাঠের বাইরে ওরাম! সেবার অবশ্য হাটুর ইনজুরিতে পড়েছিলেন তিনি। যার কারণে ২০১০ আইপিএল থেকেও ছিটকে যান তিনি। পরবর্তীতে ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলে ফিরেন তিনি। তবে সেবার সুপার এইটেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় কিউইরা। এরপর ২০১১ বিশ্বকাপে কিউইরা পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানেও অনবদ্য অবদান রাখেন ওরাম। এরপর টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে সেমিফাইনালে মাঠে নামে কিউইরা।

প্রথমে ব্যাট করে আট উইকেটে ২২১ রান সংগ্রহ করে কিউইরা। লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১০৮ রানে তিন উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। সেই সময়ে ৪৭ রানে ক্রিজে ব্যাট করছিলেন জ্যাক ক্যালিস। টিম সাউদির শর্ট বলে পুল করলেন তিনি। প্রায় নিশ্চিত ছক্কা হবে! ডিপ মিড উইকেটে ঝাপিয়ে পড়ে বাউন্ডারিতে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ লুফে নেন জ্যাকব ওরাম। সেই বিশ্বকাপে সেরা ক্যাচের পুরষ্কারও তাঁর হাতেই উঠে।

সেখান থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয় শুরু হয় প্রোটিয়াদের। ওই ম্যাচে ওরামের তিন উইকেট শিকারে ৪৯ রানের বড় জয় পায় কিউইরা। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার টাও তাঁর হাতেই উঠে। তবে সেমিফাইনালে লঙ্কানদের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় কিউইরা।

২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় কিউইদের। এরপর ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেন ওরাম। সেটিই ছিলো তাঁর শেষ ওয়ানডে! এর আগে একই সিরিজে খেলা টি-টোয়েন্টিও ছিলো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তাঁর মাঠে নামা।

এরপর ২০১১ আইপিএল আসরে দল পেলেও মাত্র দুই ম্যাচের বেশি খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরবর্তীতে ২০১৩ আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান। মুম্বাইয়ের হয়ে প্রথম ম্যাচেই ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পান তিনি। তবে এরপর আর ওই আসরে দলে দেখা যায়নি তাকে। সেবার অবশ্য মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স শিরোপা জয়লাভ করে।

১৬০ ওয়ানডেতে ২৪.০৯ গড়ে ২৪৩৪ রান করেন ওরাম। ৮৬.৬১ স্ট্রাইক রেটে ওয়ানডতে খেলেছেন তিনি। এক সেঞ্চুরির পাশাপাশি করেছেন ১৩টি হাফ সেঞ্চুরি। ২৯.১৭ গড়ে শিকার করেছেন ১৭৩ উইকেট! ভারতের বিপক্ষে ২৬ রানে নেওয়া ৫ উইকেট তাঁর ক্যারিয়ার সেরা। ৩৩ টেস্টে ৩৬.৩২ গড়ে করেছেন ১৭৮০ রান।

পাঁচ সেঞ্চুরির সাথে করেছেন ছয়টি হাফ সেঞ্চুরি। ৩৩.০৫ গড়ে ৬০ উইকেট শিকার করেন সাদা পোশাকে। ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৪১ রানে চার উইকেট শিকার করেন তিনি। ৩৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রায় ২১ গড় আর ১৪০ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৪৭৪। দুই ফিফটিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন ৬৬ রানের।

৩৪ বছর বয়সেই ওরাম বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে একা হাতে তাঁর অনবদ্য অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দলকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ বলা হতো যে সময়টা সে সময়ে দলে ছিলেন ওরাম। ইনজুরিতে ক্যারিয়ারে সাফল্যের শীর্ষে না যেতে পারলেও তিনি ছিলেন একজন ধারাবাহিক পারফরমার। তিনি বরাবরই দলের পক্ষে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং আর দুর্দান্ত ফিল্ডিং ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সবসময়ই থাকবে। যদিও, হ্যাডলির রেখে যাওয়া জায়গাটা নিতে পারেননি তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...