অলরাউন্ডাররা যাকে ‘স্যার’ ডাকতে পারেন!

বাইশ গজে তুলেছেন ঝড়, সবুজ মাঠে তুলেছেন সুর, গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বলা হচ্ছে স্যার গারফিল্ড সেন্ট আব্রাম সোবার্স বা গ্যারি সোবার্সের কথা। ক্রিকেটবোদ্ধাদের অনেকেই তাকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, ভার্সেটাইল বোলার এবং ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন একজন ফিল্ডার। তিনি ছিলেন একজন তুখোড় জিনিয়াস। তাঁকে বর্ণনা করার মতো আর কোন শব্দ নেই।

বাইশ গজে তুলেছেন ঝড়, সবুজ মাঠে তুলেছেন সুর, গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বলা হচ্ছে স্যার গারফিল্ড সেন্ট আব্রাম সোবার্স বা গ্যারি সোবার্সের কথা। ক্রিকেটবোদ্ধাদের অনেকেই তাকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, ভার্সেটাইল বোলার এবং ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন একজন ফিল্ডার। তিনি ছিলেন একজন তুখোড় জিনিয়াস। তাঁকে বর্ণনা করার মতো আর কোন শব্দ নেই।

১৯৫৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়। এর আগে ১৯৫২-৫৩ সালে তাঁকে বার্বাডোজে আমন্ত্রণ জানানো হয় ভারতের সাথে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য।

১৯৫৪ সালে কিংস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৯৩টি টেস্ট। ৫৭.৭৮ গড়ে করেছেন ৮,০৩২ রান। ২৬টি শতক আর ৫০টি অর্ধশতকে সাজানো ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৩৬৫! বল হাতে ৩৪.০৩ গড়ে নিয়েছেন ২৩৫ উইকেট।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৩৮ ম্যাচে ৫৪.৮৭ গড়ে করেছেন ২৮৩১৪ রান। ৮৬টি সেঞ্চুরি এবং ১২১টি হাফ সেঞ্চুরি। ২৭.৭৪ গড়ে নিয়েছেন ১০৪৩টি উইকেট। ৯৫টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে করেছেন ২৭২১ রান, নিয়েছেন ১০৯টি উইকেট।

১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের দায়িত্ব পান সোবার্স। অধিনায়ক হিসেবে সোবার্সের পারফরম্যান্সও ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিনায়ক হিসেবে তিন হাজারের অধিক রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গড়ের দিক দিয়ে কেবল ব্রাডম্যান (১০১.৫১) এবং মাহেলা জয়াবর্ধনে (৫৯.১১) আছেন সোবার্সের (৫৮.৮০) ওপরে।

১৯৬৪ সালে উইজডেনের ‘ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। ক্রিকেটে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৯৮ সালে বার্বাডোসের সংসদের জাতীয় বীরের মর্যাদা লাভ করেন। ২০০০ সালে ‘উইজডেন ক্রিকেট অব দ্য সেঞ্চুরি’র সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন ছিলেন সোবার্স। ১০০ জন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০টি ভোট পান তিনি। তাঁর সঙ্গে বাকি চারজন হলেন ব্রাডম্যান, জ্যাক হবস, শেন ওয়ার্ন ও ভিভ রিচার্ডস।

১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডে তিনি পাঁচ টেস্টে ১০৩.১৪ গড়ে তিন সেঞ্চুরিতে ৭২২ রান সংগ্রহ করেন। বোলিংয়ে ২৭.২৫ গড়ে তুলে নিয়েছিলেন ২০ উইকেট । ফিল্ডার হিসেবেও নিয়েছিলেন ১০ টি ক্যাচ।

তিনি টেস্টের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান। অপরাজিত ৩৬৫ রানের ইনিংসটির এই রেকর্ডও টিকে আছে ৬৩ বছর ধরে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসটি সোবার্স খেলেছিলেন ২১ বছর ২১৩ দিন বয়সে। এখনও তা সবচেয়ে কম বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড।

টেস্ট ইতিহাসে ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা প্রথম ব্যাটসম্যান সোবার্স। ১৯৭৪ সালে ১৫৭ ইনিংসে দাঁড় করানো আট হাজার রানের মাইলফলক দীর্ঘ ২৮ বছর ছিল দ্রুততম আট হাজার রানের রেকর্ড। যা ২০০২ সালে ভেঙে দেন শচীন টেন্ডুলকার (১৫৪ ইনিংস)। বর্তমানে এ রেকর্ডটি কুমার সাঙ্গাকারার (১৫২ ইনিংস) দখলে। আর বলাই বাহুল্য, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ওভারে ছয় বলের সবকটিতে ছক্কা মারার প্রথম কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনিই।

গ্যারি সোবার্স যখন জন্মগ্রহন করেন তখন তার দুই হাতে আঙুল ছিল ৬ টি করে মোট ১২ টি। যখন তার বয়স ছিল ১০ তখন এক বিড়ালের কামড়ে তাঁকে এক আঙুল খোয়াতে হয়। তিনি তার জীবনের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন ঐ ১১ আঙ্গুল নিয়েই। ১৪ বছর বয়সে এসে এক দুর্ঘটনায় তাঁকে অতিরিক্ত আরও একটি আঙুল হারাতে হয়েছিল।

ডেনিস অ্যাটকিনসন তরুণ সোবার্সকে পুলিশ কমিশনার ক্যাপ্টেন উইলফ্রেড ফার্মারের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। তাকে পুলিশ ক্রিকেট ক্লাবে নামানোর জন্য আলোচনা হয়েছিল।  বার্বাডোসে যখন তিনি ট্রায়ালের জন্য গিয়েছিলেন, তখন কাভারে ফিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাইড ওয়ালকটের ড্রাইভ শট গুলো অসম্ভব এক খিপ্রতায় ঠেকিয়ে দিচ্ছিলেন।

তার বয়স যখন ছিল ১৬ তখনও তিনি হাফ প্যান্ট পড়ে চলাফেরা করতেন। শেষ মুহূর্তে যখন তাঁকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার জন্য ডাকা হয় তখন তার পরিবারের সামর্থ্য ছিল না তার ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম কিনে দেওয়ার। তখন বার্বাডোজ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েসনই তাঁকে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

সোবার্স যখন রাস্তায় বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ খেলছিলেন তখনই ত্রিনিদাদে ইংল্যান্ডের সাথে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাঁকে ডাকা হয়। ১৯৬৮ সালের ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা ট্যুর ম্যাচে সকালে ড্রেসিং রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

তিনি ভেবেছিলেন তাঁকে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে যেতে হবে তার আগে একটু ঘুমিয়ে নেয়। কিন্তু খুব দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় তার টিমমেট তাঁকে ঘুম থেকে তুলে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দেয়। তিনি ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩২ রানের একটা ইনিংস খেললেন। আউট হয়ে ফিরে এসে তিনি আবার ঘুম দিয়েছিলেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...