ক্রিকেট হয়ত শুধুমাত্রই একটা খেলা। এখন ক্রিকেটে অনেক পেশাদারিত্বের ছোয়া। তবে, কখনো কখনো এই সেটা পেশাদারিত্বকে ছাপিয়ে যায় ক্রিকেট।
খেলোয়াড়েরা এই খেলাটা অনেক সময় খেলেন বেশ আবেগের সাথেই। আর ঠিক সেই আবেগের বশেই ক্রিকেট মাঠে বা মাঠের বাইরে কথার বাক্যবাণ লেগে যায় খেলোয়াড়দের মধ্যে। কথা-পাল্টা কথা আর সেখান থেকে তৈরি হওয়া বিতর্ক কিংবা গল্প তখন এটা প্রমাণ করে যে- ক্রিকেটটা মুখেও হয়!
- অ্যালান বোর্ডার-ইমরান খান
ইমরান খান একবার অনানুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া গেলেন, উদ্দেশ্য বোর্ডারের সাথে দেখা করা। তো অ্যালান বোর্ডারের সেসময়ের অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সেসময় বেশ কঠিন ছিল। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ইমরান খান বোর্ডারকে বলেন, ‘বোর্ডার, আমাকে শুধু ভারতের সুনীল গাভাস্কার আর চন্দ্রশেখরকে দাও, আমি অস্ট্রেলিয়াকে হারাব।’
তা ইমরান খানের প্রস্তাবে বোর্ডারও উত্তর দিতে সময় নেননি। তিনি ইমরান খানকে বলেন, ‘ইমরান, আমাকে শুধু পাকিস্তান থেকে দুইজন আম্পায়ার দাও। আমি পুরো পৃথিবীকে হারিয়ে দিচ্ছি।’
ইমরান খান ক্ষণিকের জন্যে নিশ্চুপ হয়ে যান!
- স্টিভ ওয়াহ-পার্থিব প্যাটেল
ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের চতুর্থ টেস্ট চলছিল সিডনিতে। স্টিভ ওয়াহ তাঁর দুর্দান্ত ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটাতে মাঠে নেমেছিলেন। সে টেস্টেই প্রথমবারের মত সুযোগ পান ১৯ বছর বয়সের পার্থিব। উইকেটের পেছন থেকে সে ওয়াহকে বলে, ‘কাম অন স্টিভ! তোমার শেষ করতে শুধুমাত্র তোমার বিখ্যাত একটা স্লগ সুইপই যথেষ্ট।’
স্টিভ ওয়াহ পার্থিবের কথা শুনে আস্তে করে পিছনে ঘুরে তাকান, শান্ত স্বরে বলেন, ‘শোন, কিছুটা সম্মান করতে শেখ। আমি ১৮ বছর আগে যখন অভিষিক্ত হয়েছিলাম তখন তুমি ডায়াপার পরে থাকতে।’
- বীরেন্দ্র শেবাগ-শোয়েব আখতার
মার্চ, ২০০৪। ভারত সেবার পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল। সেই সফরেরই এক টেস্ট ম্যাচে বীরেন্দ্র শেবাগ খেলেছিলেন রেকর্ড গড়া ৩০৯ রানের ইনিংস। পাকিস্তানের কোন বোলারই সে ম্যাচে শেবাগকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারছিল না। আর এই দলে শোয়েব আখতারও ছিলেন। তিনি যখন টানা বোলিং করেও শেবাগকে আউট করতে পারলেন না, তিনি হতাশ হলেন। হতাশ হয়ে একের পর এক শর্ট পিচ ডেলিভারি দিতে লাগলেন।
এই টানা শর্ট পিচ ডেলিভভারিতেও শেবাগের কিছুই হচ্ছিল না। তিনি বলগুলো চারপাশে খেলছিলেন, ব্যাট উঁচিয়ে ডিফেন্স করছিলেন। এতে শোয়েব আখতার আরো হতাশ হয়ে গেলেন। তিনি সোজা বীরেন্দর শেবাগের দিকে এগিয়ে গেলেন আর শেবাগকে হুক খেলতে বললেন।
শোয়েব আখতারের এই হুক খেলার পরামর্শে শেবাগের জবাব ছিল, ‘তু বোলিং কার রাহা হে ইয়া ভিখ মাঙ রাহা হে? (তুমি বোলিং করছ না ভিক্ষা চাচ্ছ?)’
বীরেন্দর শেবাগের এই কথাতে পাকিস্তানি ফিল্ডাররা অবধি হেসে ফেলেছিল!
- মাইকেল ক্লার্ক-জেমস অ্যান্ডারসন
২০১৩-১৪ এর অ্যাশেজ সিরিজের ম্যাচ চলছিল। অস্ট্রেলিয়ার তখন জেতার জন্যে লাগবে মাত্র একটা উইকেট। আর তখনই ক্রিজে আসেন জেমস অ্যান্ডারসন। ইংল্যান্ডের অবস্থা তখন তথৈবচ, কিন্তু অ্যান্ডারসনের মুখ দেখে মোটেও তা মনে হচ্ছিল না। তিনি এসেই জর্জ বেইলির সাথে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লেন।
সেসময় মাঠে দাঁড়িয়ে পুরো বিতণ্ডা দেখছিলেন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। মিচেল জনসনকে বোলিংয়ে পাঠিয়ে তিনি অ্যান্ডারসনের দিকে এগিয়ে আসেন আর উপদেশ দেন, ‘এবার মুখোমুখি হও। গেট রেডি ফর দা ফাকিং ব্রোকেন আর্ম (হাত ভাঙার জন্যে প্রস্তুত হও)।
- ইয়ান হিলি-অর্জুনা রানাতুঙ্গা
শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচ চলছিল। সেসময় অর্জুনা রানাতুঙ্গা ক্রিজে থেকে আম্পায়ারের কাছে একজন রানারের আবেদন করেন। ইয়ান হিলি তখন উইকেটের পেছন থেকে এসে রানাতুঙ্গাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত মোটা হবার জন্যে তুমি কোন রানার পাবেনা ফ্যাট ****।’ পুরো হিলির পুরো কথাটাই স্ট্যাম্প মাইক্রোফোনে ধরা পড়ে।
যদিও ইয়ান হিলি পরে বারবারই দাবি করেছেন তিনি আসলে কিছুই করেননি!
- রবি শাস্ত্রী-মাইক হুইটনি
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ চলছিল। ভারতের হয়ে ব্যটে ছিলেন রবি শাস্ত্রী। আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাঠে মাইক হোয়াইটনি ছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে। তখন শাস্ত্রী সিঙ্গেল নেওয়ার জন্যে বলটা হুইটনির দিকে ঠেলে দিলে হুইটনি বিদ্যুৎবেগে বল কুড়িয়ে ছুঁড়ে দেন উইকেটরক্ষকের দিকে। ঠিক সেসময় শাস্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘স্টে ইন ইউর ক্রিজ, অর আই উইল ব্রেক ইউর ফাকিং হেড (ক্রিজের মধ্যে থাকো, নইলে আমি তোমার মাথা ভেঙে ফেলব)।’
তা শাস্ত্রীও কিন্তু কম যান না। তিনি হুইটনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ইফ ইউ কুড বল অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ ইউ টক, ইউ উডেন্ট বি দা ফাকিং টুয়েলফথ ম্যান (তুমি যেভাবে কথা বল সেভাবে বল করতে পারলে এখন দ্বাদশ খেলোয়াড় হতে না)।’