জাতীয় দলে বরাবরই ছিলেন উপেক্ষিত। অবশ্যই ভারতীয় দলে টিকে থাকার মত নজর কাড়া পারফরম্যান্সটাও সেভাবে দেখাতে পারেননি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মাত্র ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন, যা কিনা এখন পর্যন্ত আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন ছোট ভাই ইরফান পাঠানের সাথেও। দুই ভাই মিলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের।
বলছিলাম সদ্য আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের কথা। যিনি জাতীয় দলে উপেক্ষিত থাকলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আইপিএল কিংবদন্তি হিসেবেই থাকবেন। তবে, এর মাঝেও ভারতের হয়ে দুই ফরম্যাটের দুই বিশ্বকাপ।
ভারতের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৫৭টি ওয়ানডে ম্যাচ। ৫৭ ম্যাচে মাত্র ২৭ গড়ে করেছেন ৮১০ রান। আছে তিনটি অর্ধ-শতক ও দু’টি শতক। তবে স্ট্রাইক রেট টা (১১৩.৬) ছিল নজর কাড়া। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে ১৮ গড়ে করেছেন ২৩৬ রান।
প্রায় ১৪৭ এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেট থাকলেও ক্যারিয়ারে নেই কোনো অর্ধ-শতক। বল হাতে ওয়ানডেতে ৩৩ আর টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। তার পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট তিনি কেন জাতীয় দলে উপেক্ষিত ছিলেন। সুযোগ পেলেও সেটি কাজে লাগাতে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
তবে আইপিএলের জার্সি গায়ে তিনি হয়েছিলেন এক অন্য ইউসুফ! ১৭৪ আইপিএল ম্যাচে ২৯ গড়ে করেছেন ৩২০৪ রান। প্রায় ১৪৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা ইউসুফের আইপিএল ক্যারিয়ারে আছে ১ শতক ও ১৩টি অর্ধ-শতক! বল হাতে নিয়েছেন ৪২ টি উইকেট। যিনি কিনা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ছিলেন সাদামাটা, সেই ইউসুফ পাঠানই আইপিএলের জার্সি গায়ে হয়ে গেলেন কিংবদন্তি!
১৯৮২ সালের ১৭ই নভেম্বর জন্ম নেওয়া ইউসুফ পাঠানের জাতীয় দলের অভিষেক হয় পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বর। এরপর ২০০৮ সালের ১০ই জুন ওয়ানডেতে সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই অভিষেক হয় তার। বাজে পারফরম্যান্সের কারণে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষেই তিনি শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন।
একই মাসের ৩০ তারিখ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিই ছিল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার শেষ ম্যাচ। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় ইউসুফের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন।
এছাড়া বেশ কিছু রেকর্ড অবশ্য আছে তার নামে। ২০১০ আইপিএলে রাজস্থান রয়েলসের জার্সি গায়ে মাত্র ৩৭ বলে শতক গড়ে রেকর্ড গড়েন ইউসুফ, যা কিনা এখন আইপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম শতক।
আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম (১৫ বলে) অর্ধ-শতকটিও তার নামেই! দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডেতে ভারতীয় হিসেবে দ্রুততম শতকটির (৬৮ বলে) মালিকও তিনি। সাদা পোশাকে লিস্ট-এ ম্যাচে মাত্র ৪০ বলে শতক করে দ্রুততম শতকের রেকর্ডটি নিজের দখলে নেন ইউসুফ। এছাড়া তিনবার হাতে তুলেছেন আইপিএল ট্রফি।
অবসরের ঘোষণা দিয়ে ইউসুফ পাঠান তার টুইটার একাউন্টে পোস্ট করে বলেন, ‘আমি আমার পরিবার, বন্ধু, সমর্থক, কোচ ও পুরো দলকে তাদের সমর্থন ও ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। ভারতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করা সব সময় গর্বের ব্যাপার ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিচ্ছি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে। জীবনের নতুন অধ্যায়েও অবশ্য আপনাদের আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করবো।’
আইপিএলের এই কিংবদন্তি ক্যারিয়ারের অন্তিম মূহুর্তের পর হয়তো কোনো এক বিকেলে ডুবন্ত সূর্যের লাল-হলুদ আভা দেখতে দেখতে ইউসুফ চিন্তা করবেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে হয়তো তাঁর অনেক কিছু দেবার ছিল কিন্তু তার ভাগ্যটা তাঁর সহায় হল না।
আবার আইপিএলের কথা মনে পড়লে মুখে একটু হাসি ফুটতে পারে। কারণ, সেখানে তো তিনি ছিলেন বিগ ফ্যাক্টর। লক্ষ্য যত কঠিনই হোক, তিনি যতক্ষণ উইকেটে থাকতেন, কখনোই জয়টাকে অসম্ভব মনে হত না। নিশ্চয়ই আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ উইনার হিসেবেই তাঁকে মনে রাখবে ইতিহাস।