সমর্থকদের স্বপ্নের ঘোড়া আকাশে ওড়ে। তাদের মাছ গাছে ওঠে। সেটাই স্বাভাবিক। তাদের তো প্রত্যাশা থাকবেই। কল্পনায় কত ছবিই তো তারা আঁকবে। কিন্তু দল কি জয়ের ছবি এঁকেছে? তাদের একজনও কি বিশ্বাস করেছেন যে, ভারতকে হারানো সম্ভব?
দেখা দেখে তা মনে হয়নি। ম্যাচের প্রথম বল থেকে শেষ বল পর্যন্ত, কখনোই মনে হয়নি। এত বছর পরে এসেও, আমরা অনেকটা মানসিকভাবে মেনে নেই, ভারতের কাছে হারটা স্বাভাবিক। আমরা একটু লড়াই দেখতে চাই। তাড়না দেখতে চাই। কিছু পরিকল্পনার ছাপ দেখতে চাই পারফরম্যান্সে। এসবের কিছু কি দেখতে পেলাম আজকে?
টসের সিদ্ধান্তকে এমনিতে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। তবে আগে বোলিংয়ের পেছনে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাটা জানা দরকার। আশা করি, প্রেস কনফারেন্স থেকে পরিষ্কার কিছু জানা যাবে।
টস দেখতে পারিনি। ক্রিকইনফোর লাইভ কমেন্ট্রিতে দেখলাম, টস জিতে অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, ১৫০-১৬০ এই উইকেটে ভালো স্কোর। অথচ এটা ১৮০-১৮৫ রানের উইকেট নি:সন্দেহে। অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই তাহলে উইকেট পড়তে ভুল করেছেন।
সেটা হতেই পারে। অনেক সময়ই হয়। কিন্তু একাদশ? তাসকিনের বদলে জাকেরকে দেখে শুরুতে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ভাবলাম ব্রডকাস্টারদের কোনো ভুল বুঝি, পরে ঠিক করবে। এমনিতে একাদশ দেখে আগেই খুব বেশি উত্তেজিত হই না আমি। ম্যাচজুড়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি, টিম ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে ভাবার ও বোঝার চেষ্টা করি।
অনেক ভেবেও কোনো উত্তরই পেলাম না। একটিও জুতসই যুক্তি দিয়ে নিজেকে বোঝাতে পারলাম না। আজকের ম্যাচে তাসকিনকে বসানোর পর শরিফুলকে না খেলানো স্রেফ অবিশ্বাস্য।
এমন নয় যে, শরিফুল খেলা মানেই জয়ের নিশ্চয়তা। তবে শরিফুল খেলা মানে জয়ের তাড়না, এটা অন্তত বোঝা যেত। আমরা অনেক সময়ই বাংলাদেশ দলকে রক্ষণাত্মক একাদশ বাছাই করতে দেখেছি। টেস্টে দেশের মাঠে ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে দেখেছি। আরও অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু আজকের এই সিদ্ধান্ত সব ছাড়িয়ে গেছে সম্ভবত।
আপনার একাদশে মাহমুদউল্লাহ আছেন, এখন রিশাদ আছেন, শেখ মেহেদি আছেন। তার পরও একজন জাকের আপনার লাগবে?
যদি জাকেকে একাদশে রাখেন, তাহলে একটা বার্তা থাকতে পারে যে, দল আগ্রাসী ব্যাট করবে। যাকে বলে উড়া-ধুরা ব্যাটিং। এজন্যই বাড়তি ব্যাটসম্যানের একটি বর্ম রাখা হলো। কিন্তু সেরকম কিছুর প্রতিফলন তো ব্যাটিংয়ের ধরনে পড়তে দেখলাম না!
১৯৭ রান তাড়ায় ৫০ ছুঁতে লাগল ৮ ওভার। অথচ উইকেট পড়েছে তখন স্রেফ একটি! এই রান তাড়ায় ১০ ওভার ক্রিজে থেকে এক ওপেনার করলেন ৩১ বলে ২৯।
তানজিদকে এখনই কাঠগড়ায় তুলতে চাই না। অনেক সম্ভাবনাময় তিনি। তার কাছ থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। কিন্তু তাকে দলে নেওয়ার মূল কারণ যেটি, তার সাহস, নিজেকে মেলে ধরার দুঃসাহস, সেটিই যদি দেখাতে না পারেন, তাহলে আর লাভ কী! রান করতে না পারা এখানে মূল ব্যাপার নয়। কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রাখা বা সাহস না দেখানো স্রেফ অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে।
লিটন আর সাকিবের অবস্থা নিয়ে কী আর বলা যায়! অসহায় লাগে স্রেফ। হৃদয়ের একটা ‘অফ ডে’ গেল। যার পুনরুজ্জীবন নিয়ে দেশের ক্রিকেটে অনেক মহাকাব্য রচনা করা হলো, সেই মাহমুদউল্লাহ ৬ ইনিংসে করলেন ৮৯ রান। গড় ১৭.৮০। স্ট্রাইক রেট ৯৬.৭৩। আজকে রিশাদ যখন শট খেলছিলেন, মাহমুদউল্লাহ তখন ধুঁকছিলেন।
রিশাদের বোলিংয়ের জন্য আজকে দারুণ শিক্ষার একটি দিন ছিল। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা অতি চর্তিত একটা কথা, এসব নিয়ে এখন ট্রল-সমালোচনা হয় এবং যৌক্তিকভাবেই হয়, তবু আশা করব, আজকের ম্যাচ থেকে রিশাদ সত্যিকার অর্থেই শিখবেন।
ভালো ব্যাটিং উইকেটে স্পিনে দক্ষ ব্যাটসম্যানদের সামনে কীভাবে বল করতে হয়, সেটির একটি অভিজ্ঞতা তার হলো। শেখার প্রমাণ তিনি এই ম্যাচেও কিছুটা রেখেছেন। শিভাম দুবের ব্যাটে ছক্কা হজম করার পরের বলটিও যেভাবে ফ্লাইট দিয়ে একটু টেনে বল করেছেন এবং দুবেকে শট খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে বোল্ড করেছেন, এটা দারুণ সাহসী ছিল। একজন লেগ স্পিনারের জন্য এই কলিজা থাকাটা জরুরি।
তবে আরও জরুরি সবার মধ্যে বিশ্বাস ও তাড়না থাকা। ক্রিকেটে ব্যর্থতা আসেই। বাজে দিনও আসে। কিন্তু খেলায় ও শরীরী ভাষায় তাড়না না থাকলে, বিশ্বাসের ছাপ না থাকলে, লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা না পাওয়া গেলে ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফের সবার দিকে আঙুল তুলতেই হয়। দেশের জার্সিটা সম্ভবত শুধু তাদের গায়েই ছিল, হৃদয়ে ধারণ করেননি।
– ফেসবুক থেকে