ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানালেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথম তিন উইকেটে ‘হার্ড যাওয়া’, মানে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার চেষ্টা করা। এরপর দ্রুত উইকেট হারালে ‘নরম্যাল’ খেলার চেষ্টা করা। মানে সেমির আশা বাদ দিয়ে স্রেফ জয়ের চেষ্টা করা। কী অবিশ্বাস্য এক পরিকল্পনা! কী অকল্পনীয়!
দলের সামনে সেমি-ফাইনালে খেলার সুযোগ। মহামূল্য এক সুযোগ, সেই চেষ্টায় আপনি হাল ছেড়ে দেবেন ৩ উইকেট দ্রুত হারালেই! নরম্যালি এই ম্যাচ জিতলেই কী বা হারলেই কী! কী যায়-আসে! সুপার এইটের দুই ম্যাচে বাজেভাবে হারার পরও আপনার সুযোগ এসে গেছে সেমিতে খেলার।
ইনিংস বিরতিতে বৃষ্টি হয়ে উইকেটও অনেকটা সহজ হয়ে গেছে, বল ব্যাটে আসছে ভালোভাবে। আপনি তো চেষ্টা করবেন ১২.১ ওভারে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করার। কিন্তু আপনারা যেটা করলেন, সেটাকে বলে প্রতারণা।
আমি সাধারণত এভাবে খুব একটা বলি না। মজা-টজা মাঝেমধ্যে করি, কিন্তু কখনোই গালি দেই না ব্যক্তিগত আক্রমণ করি না। কেউ এসব করলে তা পছন্দও করি না। কিন্তু আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই দল, এই টিম ম্যানেজমেন্ট গোটা জাতির সঙ্গে, ক্রিকেটপ্রেমী বা অনুসারীদের আবেগের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। স্রেফ ছেলেখেলা করেছে।
দলের পক্ষ থেকে অধিনায়ক তাদের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু সেটি নিশ্চয়ই তার একার পরিকল্পনা নয়। প্রধান কোচ, কোচিং স্টাফের অন্যরা, সিনিয়র ক্রিকেটার তথা টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই, আপনাদেরকে এই দায় নিতে হবে।
১০ ওভারে ৯০-১০০ করে অলআউট হতেন। আজকে আমরা আপনাদের স্যালুট দিতাম। কিন্তু আপনারা চেষ্টাই করেননি। আপনারা নিরাপদ কৌশল বেছে নিয়েছেন। সাধারণ এক জয় দিয়ে মুখ রক্ষা করতে চেয়েছেন। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। কখনোই নয়। স্রেফ অগ্রহণযোগ্য।
অবশ্য, যে দলের কোচ আগেই বলে দেন যেন সুপার এইটে ওঠার পর সবই বোনাস। তাঁদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কী আর আশা করা যায়.. সেই দলের তো তাড়নাই থাকার কথা নয়।
আপনি ১১৫ রানে আফগানিস্তানকে আটকে রেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। অথচ আপনার লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষকে যত কম রানে আটকে রেখে যত দ্রুত সম্ভব সেই রান তাড়া করা। তাহলে শরিফুল ইসলাম কেন নেই একাদশে?
আফগানদের উদ্বোধনী জুটি দ্রুত ফেরালে তাদের ব্যাটিংয়ের ৬০ ভাগ শেষ, এটা তো সবারই জানা। সেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙার সামর্থ্য এই দলে সবচেয়ে বেশি আছে কার? ইব্রাহিম জাদরানের বিপক্ষে যার রেকর্ড দুর্দান্ত, আফগানিস্তানের বিপক্ষে যার রেকর্ড দারুণ। সেই শরিফুলকে আপনারা দর্শক বানিয়ে রাখলেন।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একজন বোলার খেললেও তো সেটা শরিফুল হওয়ার কথা। আপনার জন্য ম্যাচ ১২.১ ওভারের, অথচ রান তাড়ায় আপনি শান্ত-সাকিবদের ওপরে নামিয়ে দেন, দলের সেরা বাটসম্যানকে পাঠান ছয় নম্বরে।
আপনি একাদশে ফেরান এমন ব্যাটসম্যানকে, যিনি ভয়াবহ বাজে ফর্মে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে যার রেকর্ড যাচ্ছেতাই। আজকেও যিনি ১০ রান করতে খেললেন ১০ বল। আপনার দলের ফিনিশার এক ওভারে ৫টি ডট বল খেলেন। ওয়ার্ন-মুরালি একসঙ্গে বল করলেও তো তখন ৫ বল ডট দেবেন না দুনিয়ার কোনো ব্যাটসম্যান। অথচ আমাদের ফিনিশার ৫ বলে রান নিতে পারলেন না প্রতিপক্ষের নবীন এক স্পিনারের বলে।
কারণ, আপনাদের ভাবনায় তখন সেমি-ফাইনাল নেই, আপনারা ভাবছেন কোনোরকমে জিততে পারলেই হল। অনেকবার বলেছি, খেলাধুলায় ‘লজ্জা’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না। স্কিলের ঘাটতি থাকতে পারে, সামর্থ্য কম থাকতে পারে, বাজেভাবে হারতে পারে, জঘন্য কিছুও হতে পারে। দিন শেষে, এটা স্রেফ খেলা। লজ্জার ব্যাপার এখানে সাধারণত আসে না।
কিন্তু কোচিং স্টাফ ও ক্রিকেটারদের মানসিকতা যদি এরকম থাকে, এর চেয়ে লজ্জার কিছু আর নেই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরন দেখে ধারাভাষ্যে সাইমন ডুল বলছিলেন, ‘জানি না কী হচ্ছে, বুঝতে পারছি না কিছু, এভাবে খেলে কী লাভ! ওদের তো সেমি-ফাইনালের জন্য খেলা উচিত।’
তার কথা শুনে দর্শক হিসেবেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। জানি না, সেই উপলব্ধি টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটারদের হচ্ছে কি না!
– ফেসবুক থেকে