লিওনেল মেসি যা পারেন, তা আসলে আমরা ভাবতেও পারি না। অনবদ্য এক উত্থান-পতনের ভরাট কাব্য। যেন এক সাগরের জীবন। সেই সাগর কখনও উত্তাল হয়, কখনও শান্ত হয়। আর সাগরের তীরে তীরে গাঁথা হয়ে থাকে একেকটা অর্জন।
লিওনেল মেসির জীবন অর্জনে পরিপূর্ণ। এমন কোনো কিছু নেই যা তিনি অর্জন করেননি। আবার এই অর্জনের একেকটা গাঁথুনীতে লেখা আছে একেকটা গঞ্জনার গল্প।
তাঁকে ঘিরে এক সময় সমালোচনার কোনো ইতি-অন্ত ছিল না। ডান পায়ে গোল করতে না পারা রোজারিওর সেই ছোট্ট ছেলেটা ১০৫ টা গোল করেছেন ওই ডান পায়ে, এর মধ্যে একটা বিশ্বকাপ ফাইনালে।
বার্সেলোনায় যখন মেসির ভরা যৌবন – তখন বলা হত, জাভি-ইনিয়েস্তা আছেন তো মেসি আছেন। যেদিন তাঁরা থাকবেন না, সেদিন মেসির খেল খতম। না, মেসির খেল খতম হয় নি।
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সব অখ্যাত তবে কার্য্যকর ফুটবলারে ঠাঁসা দল নিয়ে তিনি জিতে ফেলেছেন বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ, যা কিনা ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের শেষ কথা।
জাতীয় দলের হয়ে সাফল্য নেই, ক্লাব ফুটবলের সাফল্য জাতীয় দলে টেনে আনতে পারেন না, অধিনায়ক হয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন না, ফ্রি-কিক বা পেনাল্টি নিতে জানেন – এই সকল সমালোচনার জবাব মেসি দিয়েছেন শেষ তিনটি বড় আসরে – ২০২১-এর কোপা, ২০২২-এর বিশ্বকাপ ও ২০২৪ এর কোপা আমেরিকায়।
ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের শেষ কথা বিশ্বকাপ। আর ফুটবলের শেষ কথা এখন লিওনেল মেসি। তাঁর মত আগে তেমন কেউ আসেননি, ভবিষ্যতেও আর কবে আসবেন সেটা বলা যায় না।
মেসি এখন মাঠে থেকে শিরোপা জিততে জানেন, বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্ব-মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব – সব হাসিল করতে জানেন। এমনকি মাঠের বাইরে থেকেও দলকে উজ্জীবত করতে জানেন। মেসির অশ্রুসজল আঁকুতি তাঁর সতীর্থদের বুকে আগুন হয়ে ঝরে।
তিনি আহত সেনাপতি হয়ে বেঁচে থাকতে জানেন তাঁর সেনানীদের মাঝে। তাই তো গোটা আর্জেন্টিনা দল খেলে তাঁর হয়ে, তাঁর জন্য। ১১ জনের আর্জেন্টিনা দলের প্রত্যেকে হয়ে ওঠেন একেকজন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বক্তব্যটাই আসলে এখানে শেষ কথা, ‘মেসি চলে গেলেন, কিন্তু ১১ জন যোদ্ধা তখনও ছিল। মেসি আমাদের নেতা। আমাদের শুধু দলের বিজয়টাই দরকার ছিল। মেসি কেঁদেছে, ম্যাচ শেষে তাঁকে আমরা হাসাতে পেরেছি। ও সব জিতেছে, আর কিছু কি বাকি আছে? ওকে নিয়ে খবরদার আর কেউ কিছু বলবেন না!’
থাক, আমরাও এ বেলায় মেসিকে নিয়ে বলা বাদ দিলাম। তিনি এখন সকল বক্তব্যের ঊর্ধ্বে!