একটি ইনজুরি, সারাজীবনের কান্না – মুস্তাফিজের গল্প

একটা ইনজুরি বদলে দিতে পারে সবকিছু। স্বাধীনচেতা চড়ুই পাখির ডানায় সামান্য খুঁত তাকে উড়তে দেয়না সেই দূর নীলাম্বরে। তেমনটিই ঘটেছে মুস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে। ঠিক যে মুহূর্তে তিনি ডানা ঝাপটা দিয়ে দূর দিগন্তের পানে ছুটবেন, ঠিক তখনই ঘটে ছন্দপতন।

সময়টা ২০১৫ সাল, লিকলিকে গঢ়নের একটা ছোকড়া সারা ফেলে দিল গোটা বিশ্বে। মুস্তাফিজুর রহমানের কাটারের ভেল্কি তখন বুঝে ওঠা দায়। চারিদিক থেকে প্রশংসা নদী বয়ে যেতে শুরু করল। বিস্ময়ে ভাসিয়ে তিনি বনে গেলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়। একমাত্র বিদেশী হিসেবে এই রেকর্ড এখন অবধি তার দখলেই রয়েছে।

অপ্রতিরোধ্য মুস্তাফিজের চাহিদা বাড়তে থাকল পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। প্রায় সবগুলো ফ্রাঞ্চাইজি লিগে বেড়ে গেল তার কদর। তাছাড়া ইংলিশ কাউন্টি থেকেও ডাক এসে যায় তার। সাসেক্সের হয়ে ২০১৬ সালে খেলতে ইংরেজদের মাটিতে পা রাখেন ২০ বছরের তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান।

কিন্তু সেটাই তার ক্যারিয়ারের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে পরবর্তী সময়ে। সাসেক্সের হয়ে অনুশীলন করবার সময় কাঁধের ইনজুরিতে পড়েন মুস্তাফিজ। তখন আবার অস্ট্রেলিয়ান বিগ ব্যাশে তার খেলা প্রায় নিশ্চিত হবে হবে অবস্থা। এমন একটা সময় গুরুতর এক ইনজুরি এসে হানা দেয়। তাও আবার বাম কাঁধে।

ব্যাস! যে রোশনাই ছড়িয়েছিলেন তিনি, সে আলো স্তিমিত হওয়ার শুরুটা সেখান থেকেই। পেসারদের ক্ষেত্রে ইনজুরি বরাবরই ভয়ংকর। কতশত তারকা ঝড়ে গেছে ইনজুরির ভয়াল থাবায়। মুস্তাফিজ অবশ্য তখনও ছিলেন একেবারেই তরুণ। তাইতো অস্ত্রপচার করানো হল। প্রত্যাশা করা হল, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

ঠিক হয়েছে বটে। মুস্তাফিজ বোলিং প্রান্তে ফিরেছেন। এখনও বোলিং প্রান্তের বা-হাতের ভেল্কি দেখান বটে। কিন্তু উইকেট থেকে সহয়তা না পেলে একেবারেই সাদামাটা গোছের বোলার বনে যান দ্য কাটার মাস্টার। স্লো, টার্নিং পিচে তিনি রীতিমত শেন ওয়ার্ন পর্যায়ের বোলার বনে যেতে পারেন। কিন্তু স্পোর্টিং উইকেটে তাকে বড্ড অপেশাদার লাগে।

এর মূল দায় অবশ্য সেই ইনজুরির। ইনজুরির আগে মুস্তাফিজ নিজের কাঁধের ব্যবহারটা যতটুকু করতে পারতেন, এখন ততটুকু পারেন না। তাছাড়া কাঁধের চোট বলের গতিও খানিকটা কেড়ে নিয়েছে। তাইতো স্পোর্টিং উইকেটে মুস্তাফিজের কাটার অবলীলায় খেলে ফেলেন ব্যাটাররা। আর মুস্তাফিজের নামের পাশে যুক্ত হয় কাড়িকাড়ি রান।

ওই একটা ইনজুরিই বদলে দিয়েছে মুস্তাফিজের ক্যারিয়ারের গতিপথ। সর্বকালের সেরা হওয়ার সম্ভাবনাটা নিভে গেছে। ক্ষনিকের বিস্ময় হয়ে তিনি এখনও বিচরণ করে যাচ্ছেন ক্রিকেটের আলো ঝলমলে দুনিয়াতে। ইতিহাসে সবচেয়ে আলোকিত চরিত্র হতে হতে, বেরসিক ইনজুরি তাকে আর দশটা সাধারণ বোলারে পরিণত করেছে।

ভাগ্যের উপর দোষ চাপিয়ে নিস্তার খুঁজে নেওয়া যায় অবশ্য। তবে এখন যতটা কঠোর বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বছর নয় আগে তেমন হলেও মন্দ হত না। এখন অবশ্য অযথাই কঠোরতা দেখায় বিসিবি কোন কোন ক্ষেত্রে। উড়তে থাকা তারুণ্য সহসাই সকল সীমানা ছাড়িয়ে যেতে চায়। তখনই তো প্রয়োজন অভিজ্ঞদের দিকনির্দেশনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link