অনেক দিন হতে চলল, সাকিব আল হাসান তাঁর নিজের নামের ঔজ্জ্বল্য হারাতে শুরু করেছেন। গুরুত্ব কমতে শুরু করেছে দেশের ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারের। শুধু মাঠের পারফরম্যান্স বা দর্শকমহলে নয়, বিজ্ঞাপনের বাজারেও সাকিব আর সেরা পছন্দ নন। দেশের জন্য নয়, সাকিব যে এখন কেবলই খেলে যাচ্ছেন নিজের জন্য সেটা তো তাঁর সাম্প্রতিক অবস্থানেই পরিস্কার।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বাজে সময় সাকিব এর আগে পরে কাটাননি। একটা ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেও গোটা আসর জুড়ে দলে সাকিবের জায়গা নিয়ে বারবার উঠেছে প্রশ্ন। সাকিব নিজেও চাইলে আয়নায় এই একই প্রশ্ন করে দেখতে পারেন!
অন্যদিকে, ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই। আনফিট হয়ে খেলা দেশের প্রতিই বেইমানি – এমন কথা নিজের মুখ থেকে বলার পর সাকিব নিজেই ফিটনেস ছাড়া খেলেছেন দু’টো বিশ্বকাপ। এছাড়া তামিম ইকবালের সাথে তাঁর চিরায়ত বিরোধ, মর্জিমত জাতীয় দলে খেলা না খেলা তো আছেই। সব মিলিয়ে সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক ও নেতিবাচকতার যেন কোনো শেষ নেই।
আর এর ফল আসতে শুরু করেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো মুখ ঘুরিয়ে নিতে শুরু করছে। টেলিভিশন খুললেই বা ফেসবুক পাতায় চোখ রাখলেই আর সাকিবের বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা আর নেই। পৃথিবীটা সাকিবের জন্য ছোট হয়ে আসতে শুরু করেছে। সেদিন খুব দূরে নয়, শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে চুক্তির খাতা থেকে বাদ দিয়ে ফেলবে সাকিবকে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে বাইশ গজে বিরাট ঝড় তুলতে হবে, সেটাও সাকিব করতে পারছেন না।
এর সাথে সম্প্রতি সাকিব গোটা ক্রিকেটমহলেই যেন এক নেতিবাচক নাম হয়ে উঠছেন। মেজর লিগ ক্রিকেট খেলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ব্যর্থ হয়েছে। চার ম্যাচ পর তাঁকে আর মাঠে নামানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি লস অ্যাঞ্জেলস নাইট রাইডার্স দল।
এমনকি তাঁর চোখের সমস্যা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। জার্সির কলার কামড়ে মাথার পজিশন ঠিক রাখতে চেয়ে সাকিব কতটা মরিয়া – সেটা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেই পরিস্কার ছিল। সেই দুর্দশার মাঝেই খেলতে গিয়েছিলেন কানাডার গ্লোবাল লিগ টি-টোয়েন্টিতে।
সেখানে সাকিব ঠিক সাকিব-সুলভ ইনিংস খেলতে না পারলেও ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন। টুকটাক রান পাচ্ছেন, উইকেটের দেখাও মিলছে। কিন্তু, এর মধ্যেই দর্শকের সাথে বাগ বিতণ্ডায় জড়িয়ে আবারও বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন সাকিব।
সময়টা এমন যখন সাকিব আর রেকর্ডের না, কেবলই বিতর্কের বরপূত্র। আর এই বিতর্কের নি:শেষ হয়েই হয়তো ক্রিকেটের আকাশে বিলীন হয়ে যাবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই মহাতাকা! বিলীন হতে হতে নিজেই চাইলে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন, ‘ব্যক্তিগত অর্জন ছাড়া দেশের জন্য আমি সাকিব আল হাসান কি করেছি?’