গ্রাউন্ডসম্যানদের ‘বোনাস’ গামিনির অ্যাকাউন্টে, দেখার কেউ নেই!

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) গ্রাউন্ডসম্যানদের দেখার যেন কেউ নেই। বোনাস কিংবা বখশিশের যে টাকা তাঁদের পাওয়ার সেটাও নাকি যায় গামিনি ডি সিলভার অ্যাকাউন্টে। আর সেটা পরবর্তীতে মাঠকর্মীদের হাতে যাচ্ছে কি না – সেটার আদৌ কি কোনো খবর কেউ রাখছে?

মাঠকর্মীদের দাবি, সেই বোনাসের টাকা পাচ্ছেন না তাঁরা। এমন কি তামিম ইকবাল বা সাকিব আল হাসানরা যে বখশিশ বা ম্যাচ সেরার পুরস্কারে পাওয়া টাকা দেন, সেটাও গামিনি ডি সিলভার অ্যাকাউন্ট হয়ে পাওয়ার কথা তাঁদের। কিন্তু, সেটা নাকি তাঁরা নিয়মিত পান না।

এদিকে লঙ্কান কিউরেটর গামিনিও এই মুহূর্তে দেশে নেই। ২০ আগস্ট ছুুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তিনি এর দিন দশেক আগেই ঢাকা ছেড়েছেন। বিসিবির সঙ্গে তার ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে তিনি বিসিবির চাকরি করেন। তাঁকে ঘিরে আরও অনেক অভিযোগের কোনো শেষ নেই।

সব মিলিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠকর্মীদের আক্ষেপের কোনো শেষ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ১০ বছরে গ্রাউন্ডসম্যানদের গড় ‘ইনক্রিমেন্ট’ হয়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। বেতন-বোনাস সংক্রান্ত দাবি দাওয়া নিয়ে মিরপুরে গ্রাউন্ডসম্যানরা গিয়েছিলেন গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আবদুল বাতেনের কাছে। কিন্তু, সেখান থেকেও মিলেনি কোনো সদুত্তর।

গত মার্চ মাসের হিসাব বলছে, বিসিবিতে হেড গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে কাজ করেন ১২ জন। আর বর্তমান বাজার দরের কারণে তাঁদের বেতনটাও খুবই সামান্য অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা বেতন পেয়ে থাকেন ১৮ থেকে ২৪ হাজার টাকা। স্থায়ীভাবে গ্রাউন্ডসম্যান আছেন ৬০ জন। তারা সর্বনিম্ন ১৪ হাজার, সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা করে বেতন পেয়ে থাকেন। সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে তাঁদের কাজের ভিত্তিতে।

গ্রাউন্ডসম্যানরা সংখ্যায় বেশ ভারি। স্থায়ীর থেকে অস্থায়ী গ্রাউন্ডসম্যানের সংখ্যাই বেশি – স্থায়ীর প্রায় তিন গুণ। ১৬৯ জন অস্থায়ী গ্রাউন্ডসম্যান কাজ করেন। তাঁদের বলা হয় ‘মাস্টার’। তাঁদের সর্বনিম্ন বেতন পান ১১ হাজার টাকা আর সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা। তবে, এই পারিশ্রমিক অভিজ্ঞতা ও কাজের ভিত্তিতে এদিক সেদিক হয়।

পারিশ্রমিক অনেক কম বলে, খোদ বিসিবিও সংকটে ভুগছে অনেকদিন হল। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই ভাল মানের মাঠকর্মীদের বিসিবি ধরে রাখতে পারছে না। দক্ষ গ্রাউন্ডসম্যানদের চাকরি ছাড়ার হার কমানোর জন্য বেতন বাড়ানো উচিৎ বলেও – বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম দাবি করেছিলেন চলতি বছরের এক বোর্ড সভায়। তিনি এই সংক্রান্ত একটা প্রেজেন্টেশনও দিয়েছিলেন, কিন্তু বেতন বাড়ানোর তেমন একটা উদ্যোগ নেয়নি বিসিবি।

এমনিতেই, মাঠকর্মীরা প্রচণ্ড ‘থ্যাঙ্কলেস’ একটা কাজ করেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তাঁরা মাঠকে বাঁচিয়ে রাখেন। মাঠের কীর্তিগুলো সবাই মনে রাখেন। কিন্তু, মাঠের এই আড়ালের নায়কদের খবর রাখবে কে?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link