মেহেদি মিরাজ, রাওয়ালপিন্ডির ভাগ্য নির্ধারক

মেহেদি মিরাজ হয়তো নাথান লিঁও বা রবিচন্দন অশ্বিন হয়ে উঠতে পারেননি; দেশের বাইরে তাঁর পরিসংখ্যান হয়তো আহামরি নয় তবে তিনি যে ক্রমাগত উন্নতির পথে হাঁটছেন সেটা এবার অন্তত পরিষ্কার। তাছাড়া ব্যাটিং বিবেচনায় তাঁকে বাংলাদেশের একাদশে বাইরে কল্পনা করাই কঠিন হয়ে উঠেছে এখন।

প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৪৪৮ রান, জবাবে বাংলাদেশ করলো ৫৬৫! সমর্থকেরা তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও এরপর জয়-পরাজয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বিষ ম্যাচে অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ, বিপদ আঁচ করার আগেই পাকিস্তানকে ফেলে দিয়েছে গভীর খাদে। আর এই নাটকীয় ঘূর্ণির নেপথ্যে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ।

রাওয়ালপিন্ডির ফ্ল্যাট উইকেটে স্বাগতিকরা খেলেছে চার পেসার নিয়ে, বাংলাদেশও একাদশে রাখেনি তাইজুল ইসলাম কিংবা নাইম হাসানের মত বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে। ম্যাচের শুরুতেই তাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এখানে বল ঘুরবে না, স্পিন কাজ করবে না।

অথচ এমন একটা পিচেই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন মিরাজ, প্রথম ইনিংসে উইকেট শূন্য থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছেন চার চারটি উইকেট। তাঁর এমন মোহনীয় বোলিংয়ের ফাঁদে আটকে পড়ে শান মাসুদের দল থেমেছে স্রেফ ১৪৬ রানে। তাতেই বড় জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।

এই ডান-হাতি শুরুটা করেছিলেন আঘা সালমানকে দিয়ে, সোজা বলেই ব্যাটারকে বোকা বানিয়ে সাদমান ইসলামের তালুবন্দি করেন তিনি। খানিক পরেই মিনি অলরাউন্ডার শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রতিরোধ ভাঙেন লো বাউন্সে। ততক্ষণে সাত উইকেট হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছে পাক শিবির।

তবু তাঁদের আশা আলো হয়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, এই উইকেটরক্ষক অতিমানবীয় কিছু করে ফেলবেন সেই প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিল দলটি। কিন্তু কিসের কি, নির্দয় টাইগার তারকা রিজওয়ানের স্ট্যাম্প উপড়ে দেন। ইতিহাস তখন খুব কাছেই, পরের ওভারে মোহাম্মদ আলীকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তিনি।

বলা হয়, উইকেটের সাহায্য না থাকলে এই অফ স্পিনার নাকি অকার্যকর। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে সেটা ভুল প্রমাণ করলেন তিনি, নিখুঁত লেন্থে টানা বল করে ব্যাটারকে ভুল করতে বাধ্য করেছেন বটে। কখনো আবার ক্র্যাকে বল পিচ করিয়ে ফায়দা লুটেছেন সেটারও।

মেহেদি মিরাজ হয়তো নাথান লিঁও বা রবিচন্দন অশ্বিন হয়ে উঠতে পারেননি; দেশের বাইরে তাঁর পরিসংখ্যান হয়তো আহামরি নয় তবে তিনি যে ক্রমাগত উন্নতির পথে হাঁটছেন সেটা এবার অন্তত পরিষ্কার। তাছাড়া ব্যাটিং বিবেচনায় তাঁকে বাংলাদেশের একাদশে বাইরে কল্পনা করাই কঠিন হয়ে উঠেছে এখন।

Share via
Copy link