গ্যাস অ্যাটকিনসন, আগামীর ইংলিশ টেস্ট বিস্ময়?

এরই মাঝে নজর কেড়েছেন ২৬ বছর বয়সী ছিপছিপে গড়নের এক তরুণ। ৬ ফিট ২ ইঞ্চি উচ্চতার তরুণ ডান-হাতি পেস বোলার গাস অ্যাটকিনসন সম্ভাবনার আলো ছড়াচ্ছেন।

ইংল্যান্ড টেস্ট দল খুব সম্প্রতিই ব্রড-অ্যান্ডারসন যুগের মোহ কাটিয়ে উঠছে। এরই মাঝে নজর কেড়েছেন ২৬ বছর বয়সী ছিপছিপে গড়নের এক তরুণ। ৬ ফিট ২ ইঞ্চি উচ্চতার তরুণ ডান-হাতি পেস বোলার গ্যাস অ্যাটকিনসন সম্ভাবনার আলো ছড়াচ্ছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ তো তার মাঝেই দেখতে পাচ্ছেন উইন্ডিজ কিংবদন্তী কোর্টনি ওয়ালশকে।

কে এই তরুণ? কিইবা তার সাফল্যের রহস্য?

চেলসিতে জন্ম নেয়া এই পেসার ব্র‍্যাডফিল্ড কলেজে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে, ২০১৭ সালে ইংলিশ দল সারের দ্বিতীয় সারির দলে খেলার সুযোগ পান। পরবর্তীতে মূল দলে সুযোগ পান ২০২০ সালে এবং প্রথম শ্রেণির অভিষেক ঘটে ২০২১ সালে। এ সময়ে নিত্তনৈমিত্তিক ইনজুরিকে সঙ্গী করেই ২০২২ সালের গ্রীষ্ম মৌসুমে ২৮.৮৪ গড়ে তুলে নেন ১৩ উইকেট।

২০২৩ সালে দেশী-বিদেশী সীমিত ওভারের ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে শুরু করেন। আইএলটি-টোয়েন্টি এবং দ্য হান্ড্রেডে তিনি ইংলিশ নির্বাচকদের নজর কাড়েন। মূলত এরপরই শুরু হয় অ্যাটকিনসনের সাদা বলের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

টেস্ট ক্রিকেটে সে তুলনায় তিনি বেশ নবীন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অংশ হিসেবে ভারত সফর করেন। কিন্তু তার অভিষেক ঘটে ২০২৪ সালের ৩০ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ঐতিহ্যবাহী লর্ডসে। সে যেন এক রূপকথার গল্পের মতো! প্রথম ইনিংসেই তিনি তুলে নেন সাত সাতটি উইকেট এবং টেস্ট শেষ করেন ১২/১০৬ বোলিং ফিগার নিয়ে। যথারীতি ঢুকে পড়েন লর্ডস অনার্স বোর্ডে।

শুধু তাই না, ইংলিশ অভিষিক্ত বোলার হিসেবে গত ১৩৪ বছরের সেরা বোলিং ফিগারটাও বাগিয়ে নেন সাথে সাথে। ইতিমধ্যেই তিনি খেলে ফেলেছেন ৫ টি টেস্ট। যেখানে তিনি ১৮.০৬ গড়ে শিকার করেছেন ৩৩টি উইকেট যাতে আছে তিনটি ফাইফার।

কিন্তু তার এই টেস্ট বোলিং সাফল্যের পিছনে বড় রহস্য কি? অন্য দশজন দীর্ঘদেহী পেসারের মতোই ঘণ্টায় ১৩৫-১৪৫ কিলোমিটার বেগে বল ছোড়েন এটকিনসন। কিন্তু তার বলের বিশেষত্ব হচ্ছে, রহস্যময় ‘ওয়াবল সিম’।

বাতাসে ওলট পালট করে সিম মুভমেন্ট হওয়া যেটাকে ক্রিকেটীয় ভাষায় ‘স্ক্রাম্বলিং অব দ্য সিম ইন দ্য এয়ার’ বলে। এই বলের আরেকটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে যদি বল ভালভাবে সিমে হিট করে তাহলে তা যেকোনো দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে অগ্রসর হয়। যা ব্যাটার কে হতভম্ব করে দেয়!

তার বোলিং এর এই বিশেষ দক্ষতাই তাকে উইন্ডিজ কিংবদন্তী কোর্টনি ওয়ালস এর সাথে তুলনীয় করে তুলেছে। এই বল করার মূল সূত্র হচ্ছে কব্জিকে নমনীয় রাখা। অনমনীয় কব্জিতে বল করলে তা যথাসম্ভব সোজা যাবার সম্ভাব্যতাই বেশি। কিংবদন্তী ওয়ালস এই বল করবার সময়ে তার কব্জি কেবল নমনীয়ই নয় বরং বলের গ্রিপে আঙ্গুল কিছুটা বিভক্ত অবস্থায় রাখতেন।

কিন্তু তরুণ এটকিনসন সিমে তার তর্জনী এবং মধ্যম আঙ্গুল বলের চামড়া যুক্ত দিকটিতে রাখেন। তার গ্রিপের আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে, তিনি আঙ্গুলের মাথার অংশটি দিয়ে বল ধরেন। এই ওবল সিম ছাড়াও এন্ডারসনের দেশের ছেলে বলেই গতানুগতিক বোলারদের মতো সুইং বোলিংয়ের চেষ্টা করেন।

কিন্তু, এখানেও রয়েছে তার নিজস্বতা। বলের পার্শ্বিক মুভমেন্ট তার বলকে ওভারসিজ টেস্টে আরও বিধ্বংসী করে তোলে যেখানে বাতাসে বলের সুইং কিছুটা কম হয়।

বোলার অ্যাটকিনসন কিন্তু ব্যাট হাতেও কম যান না। সম্প্রতি চলমান ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টর প্রথম ইনিংসেই দেখা পেয়ে যান প্রথম শতরানের তাও আবার ১০৩ বলে। ১৯৮৪ সালে ইয়ান বোথামের পর তৃতীয় ইংলিশ হিসেবে এক ম্যাচে শতরান এবং ৫ উইকেটের দেখা পেয়ে যান সেটাও আবার লর্ডসের মতো ক্রিকেটের তীর্থ ভূমিতে।

২০২৪ সালে কেবল মাত্র ইংল্যান্ড টেস্ট দলেরই নয় বরং টেস্ট বিশ্বের অনন্য এক প্রতিভা গাস অ্যাটকিনসন। ২৬ বছরের এই তরুণের সামনে রয়েছে অগাধ সম্ভাবনা। সম্প্রতি খালি হয়েছে ব্রড-অ্যান্ডারসনদের রেকর্ডে ঠাসা আসন।

নড়বড়ে ফর্মে আছেন অলরাউন্ডার স্টোকসও। তাই ইংলিশ ক্রিকেটভক্ত দের অ্যাটকিনসনের থেকে চাওয়ার পরিমাণ টাও বেশি। তিনি কি পারবেন হতে, আগামীর ইংলিশ টেস্ট বিস্ময়? তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।

Share via
Copy link