নব্বই মিনিটের একটা ফুটবল ম্যাচ আর কতটুকুই বা বড় হয়, সময়ের হিসেবে নেহায়েতই ছোট বিষয় বটে। তবে কখনো কখনো এই নব্বই মিনিটই হয়ে ওঠে জীবনের প্রতিবিম্ব; কয়েক মুহূর্তের মাঝে উত্থান আর পতনের অভিজ্ঞতা হতে পারে।
এই যেমন হামেস রদ্রিগেজ; আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজে গোল করলেন, এর আগে অ্যাসিস্টও করেছেন। আবার মাঝে তাঁর ভুলেই সমতায় ফিরেছিল আর্জেন্টিনা – এক জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কি ই বা দেখার থাকে?
সবশেষ কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল কলম্বিয়া; সে বার জিততে পারেনি তাঁরা। লাউতারো মার্টিনেজের ১১২ মিনিটের মাথায় করা গোলে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে তাঁদের।
স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণা সবচেয়ে বেশি বোধহয় আঘাত করেছে রদ্রিগেজকে, টু্র্নামেন্ট জুড়ে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করেও দলকে শিরোপা জেতাতে না পারার আক্ষেপ দগদগে ঘা সৃষ্টি করেছে তাঁর হৃদয়ে।
তাই তো বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে প্রতিশোধের তাগিদ সবচেয়ে বেশি ছিল এই ফরোয়ার্ডের। মাঠের পারফরম্যান্সেও ফুটে উঠেছে সেই তীব্র ইচ্ছে; ২৫ মিনিটের সময় মাপা ক্রসে তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন ডি বক্সে দাঁড়ানো ইয়ারসন মসকুয়েরার মাথা।
প্রথমার্ধের বাকি অংশেও তাঁকে বারবার দেখা গিয়েছে আলবিসেলেস্তাদের রক্ষণভাগে হামলে পড়তে। তবে দুর্ঘটনা ঘটেছে বিরতির পরপরই, তাঁর ভুল পাসের সুবাদে বল পেয়ে যান নিকোলাস গঞ্জালেস – এরপরই দারুণ ক্ষিপ্রতা আর একক প্রচেষ্টায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ম্যাচে ফেরান তিনি।
প্রতিশোধের আগুন তখন কলম্বিয়ান তারকাকে চোরাবালির মত আঁকড়ে ধরেছিল। শেষমেশ স্পট কিকের সুবাদে দায় মুক্ত হন তিনি। সময় নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় দলকে জয়সূচক গোল এনে দিয়েছিলেন, এমিলিয়ানো মার্টিনেজের মত দুনিয়া কাঁপানো পেনাল্টি স্পেশালিষ্টও বোকা হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সামনে।
শেষমুহূর্তে বদলি হিসেবে মাঠ ছাড়ার সময় রদ্রিগেজের চোখে আনন্দের অশ্রু ছিল কি না তা জানা নেই। তবে জীবনের গল্পে হেরে যাওয়া মানুষগুলো তাঁর লড়াইয়ের চিত্র দেখে নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র পেয়েছে – ফুটবল এজন্যই ‘মোর দ্যান দ্য গেম’ হয়ে ওঠে বার বার।