ক্রিকেটে যুগে যুগে সময়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তুলনা দেওয়া নতুন কিছু নয়। ১৯৯০ এর দিকে তুলনাটা হত শচীন টেন্ডুলকার আর ব্রায়ান লারার মধ্যে, ২০০০ সালের পর শচীনের সাথে রিকি পন্টিং মিলিয়ে জ্যাক ক্যালিসের ব্যাটিংকেও তুলনা দেওয়া হত। আর এখন? ফ্যাব ফোর- বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, জো রুট আর কেন উইলিয়ামসনের মধ্যে তুলনা চলে। চাইলে এখানে বাবর আজমকে যোগ করে ফ্যাব ফাইভও করে ফেলে যায়।
কিন্তু এই ‘ফ্যাব তত্ত্ব’-র বাইরেও বেশ কিছু ব্যাটসম্যান আছে যারা নিজেদের দিনে ধ্বংসস্তুপ তৈরি করতে পারেন। ফ্যাব ফাইভের মত তিন ফরম্যাটেই সমানতালে হয়তো পারফর্ম করতে পারেন না, কিন্তু নিজ নিজ পছন্দের ফরম্যাটে এদের তুলনা দেওয়া ভার!
- রোহিত শর্মা (ভারত)
সাদা পোশাকে সদ্য পারফর্ম করতে শুরু করলেও, বহুদিন ধরেই রঙিন পোশাকে রোহিত শর্মা প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের একজন। তিনি যে দলে খেলেন, সেই ভারতীয় দলেই খেলে ফ্যাব ফাইভদের একজন- বিরাট কোহলি।তবুও নিজের দিনে তিনি ছাড়িয়ে যান বিরাট কোহলিকেও। আর ফরম্যাট যদি হয় ওয়ানডে, তাহলে তো কথাই নেই। রোহিত শর্মা সেখানে সর্বকালের সেরা ওপেনারদের একজন হবার দৌড়ে আছেন।
নিজের সহজাত স্ট্রোক খেলার প্রবণতার কারণে রোহিত শর্মার নামই হয়ে গেছে ‘হিটম্যান’। আর সেই হিটম্যানেরই আছে ওয়ানডে ফরম্যাটে তিন তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি। তবে শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, নেতৃত্ব গুণেও রোহিত শর্মা অনন্য। বিরাটের অনুপস্থিতিতে যেকোন ম্যাচেই তিনি ঢাল হয়ে দলের সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন, এশিয়া কাপের মত টুর্নামেন্ট জিতিয়েছেন।
- ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
খেলার ধরণে রোহিত শর্মার সাথে ডেভিড ওয়ার্নারের মিল আছে যথেষ্ট। দুজনই আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করেন, নিজেদের দিনে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে ডেভিড ওয়ার্নারও কিন্তু সমানতালে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। ৮৫ এর বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলে এখন অব্দি করেছেন সাত হাজারের বেশি রান। ওয়ানডে ফরম্যাটেও ১২৮ ম্যাচে মাঠে নেমে ব্যাট করেছেন ৪৬ গড়ে। শুধু তাই না, রিকি পন্টিংয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিকও ডেভিড ওয়ার্নারই।
আর টি-টোয়েন্টিতে? সেখানে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগগুলির হট কেক তিনি। নেতৃত্বগুণেও তিনি অনন্য ছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার লিডারশিপ গ্রুপেরও সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারির পর তা অবশ্য খুইয়েছেন। তবে ব্যাট হাতে এখনও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ডেভিড ওয়ার্নার।
- রস টেইলর (নিউজিল্যান্ড)
রস টেইলরকে একটু বেশিই দুর্ভাগা বলতে হবে। তিনি যে শুধু ফ্যাব ফাইভের আড়ালেই চলে গেছেন এমনটা নয়, ক্রমাগত পারফর্ম করেও নিজ দেশেও তিনি প্রদীপের আলো হারাম কেন উইলিয়ামসন নামক প্রদীপের নিচে। ২০০৬ সাললে অভিষেক হওয়া রস টেইলর দেশের হয়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন চার নম্বরে। টপ অর্ডারে জেনুইন চার নম্বর ব্যাটসম্যানের কাজ সবসময়ই নিজ গুণে করে গেছেন তিনি। যখন প্রয়োজন হয়েছে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন, দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে হাল ধরেছেন, কিউইদের আশার আলো হয়েছেন।
সব ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি কিউইদের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন চারশোর বেশি, এর মধ্যে একশোর বেশি ম্যাচ খেলেছেন শুধু সাদা পোশাকেই। রস টেইলর এখনও খেলে যাচ্ছেন স্বমহিমায়। নাই বা থাকলেন ফ্যাবদের দলে, তিনিও বা কম কিসে!
- জনি বেয়ারস্টো (ইংল্যান্ড)
২০১৫ সালটা সীমিত ওভারে ইংল্যান্ডের ভাগ্য বদল করে দিয়েছিল, সেই ভাগ্য বদলের রথে চড়েই আবির্ভাব জনি বেয়ারস্টোর। এমনিতে দলে পারফর্মার অনেক। শুরুর দিকে রয়-হেলস জুটির দাপটে নিজের পছন্দের জায়গা ওপেনিংয়ে সুযোগ পেতেন না। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে জস বাটলার থাকায় সুযোগ পেতেন না সেখানেও। কিন্তু ক্রমাগত সুযোগের সদ্ববহার করে যাওয়া এক সময় দুয়ার খুলে দিয়েছে বেয়ারস্টোর জন্যে।
স্ট্রোক খেলতে পারেন উইকেটের চারপাশে, টেম্পারমেন্টও দারুণ- জনি বেয়ারস্টো যেন এক কমপ্লিট প্যাকেজ। এখন অব্দি ৮৩ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেই ৪৭ গড়ে রান করেছেন ৩২০৭ রান। ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে সেঞ্চুরি করেছেন দশটা। জনি বেয়ারস্টোও তো এই যুগে না জন্মালে একক আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারতেন।
- আজহার আলী (পাকিস্তান)
আজহার আলির অভিষেক হয়েছিল সে সময়ে যখন পাকিস্তান মিসবাহ-ইউনিস ব্যাটিং জুটিতে মজে ছিল। এরপর মিসবাহ রা চলে গেছেন, মাঝে কিছুদিন নিজেই আলোয় ছিলেন। এরপর আবার হারিয়ে গেলেন বাবর আজমের আগমনে। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ক্যারিয়ার উত্থানপতনে সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারে কিন্তু ঠিকই আজহার আলি আপন আলোয় ভাস্বর।
এখকন অব্দি ৮৫ টেস্ট ম্যাচে খেলতে নেমে নামের পাশে লিখে নিয়েছেন ১৭ সেঞ্চুরি। বয়সটা অবশ্য ৩৬ হয়ে গেছে, নিজের আর ‘ফ্যাব’দের দলে ভেড়ার সম্ভাবনা নেই। তবুও আজহারকে ক্রিকেট মনে রাখবে সাদা পোশাকেই!