ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের এখনকার গদাধারী পোলার্ড, রাসেল, পুরান, হেটমায়ারদের মতো তাঁকে নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি হয়না। আসলে এখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের যে খ্যাতি তার বেশিরভাগটাই ওই কুড়ি বিশের ক্রিকেটের সৌজন্যে, কিন্তু এর বাইরেও এমন একজন বর্তমান ক্যারিবিয় শিবিরে বিরাজমান যিনি এই টি-টোয়েন্টির ঝংকার থেকে বেশিরভাগ সময়ই দূরে থাকেন।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মোটামুটি আলো ছড়ালেও রঙিন পোশাকের ৫০ ওভারের ফরম্যাটে তাঁকে ছাড়া ক্যারিবিয়ান দল? নাহ, ভাবাই দুস্কর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের নতুন আশা ভরসা সেই তিনিই – শাই হোপ।
২০১৬ সালে অভিষেকের পর থেকেই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একপ্রকার রানমেশিন বলা চলে হোপকে, একদিনের ক্রিকেটে তাঁর গড়টা শুনবেন? মাত্র ৭৯ ম্যাচেই প্রায় সাড়ে তিন হাজার রান করে ফেলেছেন ৫৩ গড়ে। এখনকার ক্ষয়িষ্ণু ক্যারিবিয়ান দলে এমন গড় সত্যিই চোখ কপালে ওঠার মতোই কিন্তু, তার সাথে আবার সামলান উইকেট কিপিংয়ের গুরু দায়িত্ব ও।
কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শিমরন হেটমায়ার, পুরানরা দিনের পর দিন ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ হোক ব্যাট হাতে টর্নেডো উড়িয়ে যান, আর দর্শকদের মনোরঞ্জন করে যান, ছক্কা মারাটা একপ্রকার শিল্পের পর্যায়তেই নিয়ে গেছেন তাঁরা। কিন্তু যদি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিবেচ্য হয় সেখানে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইন আপে শিল্পের শেষ কথা ওই শাই হোপই।
চোখ জুড়ানো কভার ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, গ্লান্স কিংবা লেট্ কাটে বিপক্ষ বোলিং দুমড়ে যায়, তার সাথে ধীর স্থির মানসিকতা নিয়ে ক্রিজে পৌঁছে নিজের কাজটা শেষ করে তবেই ফেরেন এই চার নম্বর জার্সি ধারী। শাই হোপ মানেই চোখের আরাম, শাই হোপ মানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিস্টার ডিপেন্ডেবেল, শাই হোপ মানেই অন্ধকারেও আশার আলো।
ইতোমধ্যেই নামের পাশে রয়েছে যেমন বেশ কিছু ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি বা দারুন গড়ের হিসেব তেমনি বেশ কিছু রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন হোপ মাত্র সাড়ে চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে। ওপেনিং জুটিতে জন ক্যাম্পবেলের সাথে মিলে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৬৫ রানের পার্টনারশিপে এক নতুন মাইল ফলকই তৈরী করে রেখেছেন হোপ।
মনে পড়ে হেডিংলিতে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচটা? দুই ইনিংসে হোপের অসাধারণ দুটো ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে এখনো আলোচনার বিষয়, সে বছর উইজডেনের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকাতেও মনোনীত হন হন।
পড়াশোনার জন্য একসময় ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন হোপ, আর সেখানে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে খেলতে আশা ছিল ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে চড়ানোর, কিন্তু ভাগ্য তাঁকে সেই নিজের ভিটে বার্বাডোজেই নিয়ে আসে, আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট এ ক্রিকেটে অনবদ্য সব পারফরমেন্স মেরুন টুপিটা মাথায় পড়ার সুযোগ করে দেয়।
একসময় ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর দুরন্ত স্টাইলিশ ব্যাটিং দেখে ‘ভয়েস অফ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট’ টনি কোজিয়ার উচ্ছসিত প্রশংসা করে যান। সোনালি সময়টা ফেলে আসা সেই ক্যারিবিয়ান সাম্রাজ্য এর আশা ভরসার নতুন স্থপতির জন্য কোজিয়ার যে ভুল ব্যাখ্যা করেননি, সেটা নিজের পারফরমেন্স দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন হোপ।
তাঁর আশাজাগানিয়া সব ইনিংস লাল বলেও আরো প্রভাব ফেলতে পারলে ঘুরে দাঁড়াবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট, আর নামের মধ্যেই যাঁর আশা লুকিয়ে আছে, তিনি তো নিশ্চয়ই পারবেন। মেরুন জার্সি, মেরুন টুপি, একগাদা নস্টালজিয়া আর সেই ক্যারিবিয়ান দাপট – এই নতুন সাম্রাজ্যের নতুন বাদশাহ এখন শাই দিয়েগো হোপই।