১৩১-একটি ম্যাজিক ফিগার। ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে টেস্ট-ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি, সব মিলিয়েই আগে ব্যাট করা কোনো দলের সর্বনিম্ন ইনিংস।
২০১৮ সালের জানুয়ারির পর, ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে যে কোনো দলের বিপক্ষেই এটি বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর, ২০০৭ সালের পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বনিম্ন। পরিসংখ্যানের বাইরে এই স্কোর একটা ‘টাইম মেশিন।’ আজকের ব্যাটিং আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ২০০২-২০০৩ সালের দিনগুলিতে।
উইকেটে কিছুটা বাড়তি বাউন্স ছিল। সেটা নিউ জিল্যান্ডে কিছুটা থাকেই। ভয়ঙ্কর কিছু তো নয়!
টিভিতে দেখে মনে হলো, রোদ খুব বেশি ওঠেনি। শুরুতে উইকেটে খানিকটা আর্দ্রতা থাকে, পেসারদের একটু সহায়তা থাকবেই। কিন্তু বিপজ্জনক কিছু তো নয়!
বিশেষ করে তামিমের স্ল্যাশ করে ছক্কা আর ফ্লিক করে চারের পর গোটা দলের নার্ভ থিতু হওয়ার কথা। ওই দুই শটে বোঝা গেছে, পরেও বোঝা গেছে, আসলে ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেট, চমৎকার ব্যাটে আসছে বল। স্রেফ একটু সময় কাটানোর ব্যাপার। হলো উল্টো।
তামিমকে কয়েকটি আউট সুইঙ্গার দিয়ে সেট আপ করে, সোজা ডেলিভারিতে আউট করলেন বোল্ট। সৌম্য জোর করে আপার কাট করতে চাইলেন। লিটন জীবন পাওয়ার পর কঠিন সময়টুকু পার করে, ১০ ওভার পর প্রথম বাউন্ডারি মেরে, নিশামের নীরিহ এক বলে ব্যাটের ফেইস আগে ক্লোজ করে দিলেন। মুশফিক শরীরের কাছের বলে জায়গা না পেয়েও কাট করলেন। মিরাজ অযথা শাফল করে লেগ স্টাম্প নগ্ন করে দিলেন। এই দলের রান ১৩১ হওয়ারই কথা।
রিয়াদকে কেবল ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিতে পারি। অভিষেকে মেহেদির ছোট্ট ঝলক আর কিছুটা টাইট বোলিং, তাসকিনের ব্যাট হাতে লড়াই, বল হাতে নিজেকে উজার করে দেওয়ার চেষ্টা, এসব চোখে পড়েছে। তবে বাজেভাবে হারা ম্যাচে প্রাপ্তি খুঁজতে চাই না।
নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ম্যাচে ভোগান্তি অবশ্য খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে এতটা হতশ্রী, জীর্ণ ব্যাটিংও কাম্য নয়।
আমার একটা ব্যাপার অবাক লাগছিল, কোচ-অধিনায়ক, দলের অন্যরা, সবাই সিরিজ শুরুর আগে বলছিলেন, দলের প্রস্তুতি এবার দারুণ। আসলেই কি? প্র্যাকটিস ম্যাচ ছাড়া দারুণ প্রস্তুতি হয়?
হ্যাঁ, দল এবার বেশ আগেই নিউ জিল্যান্ডে গিয়েছে। কিন্তু কোয়ারেন্টিনের মধ্যে কয়েকদিনের বিচ্ছিন্ন অনুশীলন আর পরে কুইন্সটাউনে কয়েকদিনের ক্যাম্প, এতেই খুব ভালো প্রস্তুতি?
নিজেদের মধ্যে একটা ম্যাচ অবশ্য হয়েছে। সেটাকে খেলা না বলে ‘ছেলেখেলা’ বলা যেতে পারে। ধরে নিলাম, কোভিডের সময় অফিসিয়াল প্র্যাকটিস ম্যাচ সম্ভব হয়নি। তাহলে জোর গলায় প্রস্তুতি ভালো বলার দরকার ছিল কি আদৌ ছিল?
দল যেটাই বলুক, প্রস্তুতির ঘাটতি স্পষ্ট। তার চেয়ে বড় ঘাটতি দায়িত্বজ্ঞানে। ব্যাটিং লাইন আপের সবাই অভিজ্ঞ, ম্যাচ সংখ্যায়, ক্যারিয়ারের বয়সে। তাদের কাছে আরও দায়িত্বশীলতা অন্তত আশা করা যায়। আমাদের সাকিব নাই। ওদের কেন উইলিয়ামসন নাই, লকি ফার্গুসন, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম নাই, রস টেইলর আজকে ছিলেন না, টিম সাউদি আজ বিশ্রামে ছিলেন।
যাহোক, আশা করি মাননীয় বোর্ড সভাপতি দলের সঙ্গে একটা অনলাইন মিটিং করলেই ঠিক হয়ে যাবে সব। টস জিতলে কি নেওয়া উচিত, কে কোথায় ব্যাট করবেন, কার কখন কোন শট খেলা উচিত, উনি একটু বলে দিলেই হবে।
এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সফর থেকে ১টি জয় পেলেই তো বর্তে যায় দল। আরও ৫ ম্যাচ বাকি আছে।