ক্রিকেটে দশ উইকেট হাতে রেখে কিংবা কোনো উইকেট না হারিয়ে ম্যাচে জয় – কোনো দলের ব্যাটিং সামর্থ্যের চূড়ান্ত প্রমাণ। আন্তর্জাতিক কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আজকাল এটা প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিইল) তাই।
আইপিএলের সব দলই শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই দল তৈরি করে। এর ফলে প্রত্যেকটি দলই প্রায় সমশক্তির হয়। আর এর জন্যই আইপিএলের এক পেশে কোনো লড়াই দেখা যায় না। বললেই চলে। সব লড়াই হয়ে থাকে বেশ জমজমাট। তবে, এর ব্যাতিক্রমও আছে।
আইপিএলে কয়েকবারই বিনা উইকেটের জয় দেখা গেছে। আইপিএলের ইতিহাসে কোনো উইকেট না হারিয়ে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
- গৌতম গম্ভীর এবং ক্রিস লিন (১৮৪ রান)
গুজরাট লায়ন্সের অভিষেক মৌসুমে মুখোমুখি হয়েছিলো গুজরাট লায়ন্স এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স। এই ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে কলকাতাকে ১৮৪ রানের লক্ষ্য দেয় গুজরাট।
এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রাজকোটে কলকাতার দুই ওপেনার গৌতম গম্ভীর এবং ক্রিস লিন গুজরাটের বোলারদেরকে পাড়ার বোলার বানান। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ক্রিস লিনের ৪১ বলে ৯৩ রানের ইনিংসে ভর করে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কলকাতা।
আইপিএল ইতিহাস কোনো উইকেট না হারিয়ে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড।
- শেন ওয়াটসন এবং ফাফ ডু প্লেসিস (১৭৯ রান)
শেন ওয়াটসন এবং ফ্যাফ ডু প্লেসিস এই রেকর্ড গড়েন ২০২০ আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (বর্তমান পাঞ্জাব কিংস) বিপক্ষে।
এই ম্যাচের আগে চেন্নাই সুপার কিংস জয়ের জন্য বেশ কষ্ট করছিলো এবং তাদের জ্বলে উঠার জন্য এই রকম একটি জয়ের প্রয়োজন ছিলো। এই ম্যাচে চেন্নাইয়ের দুই অভিজ্ঞ বিদেশি ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসিস এবং শেন ওয়াটসন ১৭৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামেন। তারা দু’জনই সমান ৫৩ বল খেলে করেন ৮৩ এবং ৮৭ রান। তাঁদের ব্যাটে ভর করে কোনো উইকেট না হারিয়েই ম্যাচ জিতে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস।
- বিরাট কোহলি এবং দেবদূত পাদ্দিকাল (১৭৮ রান)
বল হাতে দূর্দান্ত শুরুর পরও বোলিংয়ে ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি বিরাট কোহলি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। মাঝখানের ওভারে রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটসম্যানদের ঝড়ে শেষ পর্যন্ত ১৭৯ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ব্যাঙ্গালুরুর সামনে।
বিরাট কোহলি এবং দেবদূত পাদ্দিকাল বেশ ভালোই শুরু করেছিলেন। উইকেট সেট হয়ে রাজস্থানের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি। অপর প্রান্তে আরেক ওপেনার বিরাট কোহলিও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন।
পাদ্দিকাল সেঞ্চুরি এবং বিরাটের সেঞ্চুরিতে ভর করে কোনো উইকেট না হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ব্যাঙ্গালুরু।
- শচীন টেন্ডুলকার এবং ডোয়াইন স্মিথ (১৬৩ রান)
২০১২ সালে আইপিএলের ৭২ তম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এবং রাজস্থান রয়্যালস। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে রাজস্থানের সংগ্রহ দাড়ায় ১৬২ রান।
১৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মুম্বাইয়ের পক্ষে ওপেনিং করেন শচীন টেন্ডুলকার এবং ডোয়াইন স্মিথ। শুরু থেকেই স্মিথ রাজস্থানের বোলারদের মেরে খেলতে শুরু করেন। আর অপর পক্ষে স্মিথ সঙ্গ দিচ্ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। শেষ পর্যন্ত স্মিথের ৫৮ বলের ৮৭ এবং টেন্ডুলকারের ৫১ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ভর করে কোনো উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে ভিড়ে যায় মুম্বাই।
- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং ভিভিএস লক্ষণ (১৫৫ রান)
২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে আইপিএলে মুখোমুখি হয়েছিলো ডেকান চার্জার্স এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স প্রথমে ব্যাট করে ১৫৪ রানের সংগ্রহ দাড় করায়।
১৫৫ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে গিলক্রিস্ট ঝড়ে উড়ে যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ডেকানের দুই ওপেনার গিলক্রিস্ট এবং লক্ষণ দুই জনই অপরাজিত থাকে। এই ম্যাচে ৪৭ বলে ১০৯ রান করে গিলক্রিস্ট আর অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে গিলক্রিস্ট ঝড় দেখা ভিভিএস লক্ষণ করে ২৬ বলে ৩৭ রান।
- মুরালি বিজয় এবং মাইক হাসি (১৩৯)
২০১৩ সালে চন্ডিগড়ে মুখোমুখি হয়েছিলো চেন্নাই সুপার কিংস এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। এই ম্যাচে মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায় পাঞ্জাবের ইনিংস। ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পোছে যায় চেন্নাই সুপার কিংস।
এই ম্যাচে চেন্নাইয়ের হয়ে মারকুটে ব্যাটিং শুরু করে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার মাইক হাসি। তিনি ৫৪ বলে ৮৬ রান করেন আর অপর ওপেনার মুরালি বিজয় ৫০ বলে ৫০ রান করেন। দুই জনের এই ইনিংসে ভর করে ১৬ বল আগেই জয় পায় চেন্নাই।