ল্যান্ড অব অপরচুনিটি হলেও, ক্রিকেটে আমেরিকা কোনো বড় শক্তি নয়। তবে, যত দিন যাচ্ছে খেলাটিকে নিয়ে ততই সিরিয়াস হচ্ছে দেশটি। কারণটা পরিস্কার – বিশ্বায়নের বড় মঞ্চ হল আমেরিকা। আর একবার দেশটিতে এই খেলাটা জনপ্রিয় হয়ে গেলে বিরাট একটা বাজারও ধরা হয়ে যাবে। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও তাই আমেরিকায় ক্রিকেট সম্প্রসারণে উদ্দমী।
ফলে, আমেরিকা দলের প্রতি এখন ক্রিকেট খেলুড়ে অনেক দেশের ক্রিকেটারদেরই বিপুল আগ্রহ। অনেকেই আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন কেবল তাঁদের হয়ে খেলার জন্য। এর মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের রীতিমত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলার অভিজ্ঞতাও আছে।
- কোরি অ্যান্ডারসন (নিউজিল্যান্ড)
নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার ওয়ানডেতে দ্রততম সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন। এর সুবাদে আইপিলেও তাঁর প্রচুর চাহিদা ছিল। আইপিএলে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ও দিল্লী ক্যাপিটালসের মত দলের হয়ে খেলেছেন। ম্যাচ খেলেছেন ৩০ টি। সম্প্রতি তিনি নিউজিল্যান্ডকে বিদায় জানিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন।
- সানি সোহেল (ভারত)
সানি সোহেল ছিলেন পাঞ্জাবের পরিচিত ক্রিকেটার। আইপিএলেও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন এই ক্রিকেটার। তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু হয় পাঞ্জাব কিংসের (তৎকালীন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব) হয়ে। তবে পরে তিনি ডেকান চার্জার্সের হয়ে খেলেন।
২০১৩ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স তাঁকে দলে নিলেও কোনো ম্যাচ খেলায়নি। তিনটি মৌসুমে তিনি আইপিএলে খেলেন ২২ টি ম্যাচ। তবে এখন তিনি আমেরিকার হয়ে খেলেন। দেশটির হয়ে তিনি তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন।
- হুয়ান রাস্টি থেরন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকান প্রতিভাবান পেসার। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তাঁর অর্জন সামান্য। এক সময় তাই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, পাড়ি জমান আমেরিকাতে। ২০১৯ সালে আমেরিকান ক্রিকেট দলের হয়ে অভিষেকও হয় হুয়ানের। ইতোমধ্যেই তিনি, আমেরিকার জার্সিতে ১৯ ওয়ানডে আর নয়টি টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছেন।
আইপিএলে তিনি খেলেছেন রাজস্থান রয়্যাল ও পাঞ্জাব কিংসের মত দলের হয়ে। ১০ টি ম্যাচ খেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি লিগে তাঁর উইকেট সংখ্যা নয়টি।
- আলী খান (আমেরিকা)
তিনি অবশ্য আগে আমেরিকার হয়ে খেলেছেন, পরে এসেছেন আইপিএল খেলতে। ২০২০ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে নেয় আমেরিকান দলে খেলা পাকিস্তানি বংশদ্ভুত আলী খানকে। হ্যারি গার্নির বিকল্প হিসেবে টুর্নামেন্টের মাঝপথে এই ডানহাতি পেসারকে দলে নেয় কেকেআর।
যদিও আলী খান একটা ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি আইপিএলে। আইপিএলে ম্যাচ না পেলেও তিনি নিয়মিত খেলেন ক্যারিবিয়ান সুপার লিগে (সিপিএল)। আমেরিকান হলেও আলী খান মূলত পাকিস্তানি বংশদ্ভুত।
- লিয়াম প্লাঙ্কেট (ইংল্যান্ড)
‘আমার বাচ্চারা হয়তো আমেরিকান হবে। ওরা বলবে ওদের বাবা ইংল্যান্ড ও আমেরিকা – দু’দলের হয়েই খেলেছে। দারুণ ব্যাপার’ – কথাগুলো লিয়াম প্লাঙ্কেটের। ২০১৯ সালেই তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছেন। এখন তাঁর গন্তব্য আমেরিকা, দেশটির হয়ে মাঠে নামতে মুখিয়ে আছেন তিনি।
তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারটা অবশ্য খুবই ছোট। ২০১৮ সালে তিনি দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে সাত ম্যাচ খেলে নেন চারটি উইকেট। প্লাঙ্কেটের স্ত্রী আমেরিকান, তিনি ২০২২ সালে আমেরিকার পাসপোর্ট পাবেন। তখন আর আমেরিকার হয়ে খেলতে তাঁর কোনো বাঁধা থাকবে না।
- উন্মুক্ত চাঁদ (ভারত)
তিনি ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় করেন, অধিনায়ক হিসেবে। অনেক সম্ভাবনাময় ব্যাটার হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর বেশ নাম-ডাক ছিল। তবে, তিনি লম্বা দৌঁড়ে টিকতে পারেননি একদম। দিল্লী ডেয়ারডেভিলস, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও রাজস্থান রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে আইপিএল খেলেছেন তিনি। তবে, প্রত্যাশার চাপ মেটাতে পারেননি। না রঞ্জিতে, না আইপিএলে।
সম্প্রতি তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন। বোঝাই যাচ্ছে, আমেরিকার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়াতে চান তিনি। আমেরিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে মন দেওয়া ছাড়াও বিগ ব্যাশেও এখন উন্মুক্ত চাঁদকে দেখা যায়।