আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না

হ্যাঁ, সাকিব নিজে হয়তো চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। কয়েকটা ঘণ্টা এভাবে কোথাও গেলেও হয়তো তাঁর ফোকাস নষ্ট হবে না, কিন্তু সেটা কি বাকিদের কাছে কোনো ইতিবাচক বার্তা দেয়? নেতাদের আদর্শ হতে হয়, সাকিব সেটা পারছেন কি? 

২০১৯ সালে ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘চ্যাম্পিয়নরা বিরিয়ানি খায় না।’ আসলে স্যুইংয়ের সুলতানের আঙুলটা ছিল পাকিস্তান দলের দিকে। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন পাকিস্তানের তখনকার ক্রিকেটারদের খাদ্যাভাস নিয়ে।

চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের যা দশা, কিংবা সামগ্রিক টি-টোয়েন্টি বিবেচনা করলেও আসলে দলটাকে ঠিক ‘চ্যাম্পিয়ন’ বলা যায় না। তবুও, ক্রিকেটে নিবেদন বলতে একটা ব্যাপার আছে। বিশেষ করে, বিশ্বকাপের মত গুরুত্বপূর্ণ আসরে পুরোটা ফোকাস মাঠের দিকে থাকবে – এটাকেই অনিবার্য বলে ধরে নেওয়া হয়।

কিন্তু, এর মাঝেও সাকিব আল হাসান বিতর্ক ছড়ালেন যেন নতুন করে। প্রথমে ব্রিসবেনে সাকিব প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন ব্যাটে সাইন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে। তখন অবশ্য বলটা ছিল সাকিবের কোর্টেই। কারণ, বিশ্বকাপের ম্যাচের আগে চাইলেই দলকে দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করানো যায় না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই (বিসিবি) সেখানে সমালোচিত হয়েছিল বেশি।

তবে, সিডনির ঘটনা আর সাকিবের পক্ষ নেওয়ার কোনো সুযোগই থাকছে না। সিডনিতে পৌঁছে দলের নিয়ম ভেঙে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি, সেটাও আবার বিসিবির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে। আর সেই অনুষ্ঠানে আবার তিনি যোগ দেন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। ১৫ হাজার ডলার সম্মানী নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ছবি তোলেন তিনি। ‘অ্যান এক্সক্লুসিভ ডিনার উইদ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট প্লেয়ার্স’- নামের এই অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে ছিলেন ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদও।

সেই অনুষ্ঠানের যে ছবি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে দুই ক্রিকেটারের ডিনারের প্লেটেই বিরিয়ানি দেখা যায়। বিরিয়ানি ভোজন রসিকের পরম আরাধ্য হলেও, একজন ক্রিড়াবিদের জন্য নয়। আর বিশ্বকাপের মত জরুরী টুর্নামেন্টে খাদ্যাভ্যাসের দিকে আলাদা মনোযোগ রাখতেই হয়। আর বিষয়টা ঠিক বিরিয়ানির নয়, বিষয়টা নিবেদনের। ঘটনাটা খুবই ছোট হলেও এটাই দলের প্রতি তাঁদের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য যথেষ্ট।

ঘটনাটা দলীয় শৃঙ্খলাকে ‘থোড়াই কেয়ার’ করার মত ধৃষ্টতা। অন্য কারও ক্ষেত্রে হলে হয়তো বিশ্বকাপের মাঝ পথেই সাজা শুনিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু, সাকিব বলেই আরেকটা ‘অন্যায়’ করেও তিনি থাকছেন বহাল তবিয়তে। যদিও, ঘটনাটা নাকি এরই মধ্যে বোর্ড সভাপতির কানে গিয়েছে, তিনি ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বিশ্বকাপ শেষে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদিও, সাকিবের ক্ষেত্রে বোর্ডের এই ‘ব্যবস্থা’ নেয়াটা আসলে কি তার নজীর সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে। নামটা সাকিব বলেই বোর্ডও ছাড় দেওয়ার মানসিকতাতেই থাকে। ফলে, ধরেই নেওয়া যায় বিশ্বকাপের মধ্যেই ইস্যুটা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

আসলে শুধু বোর্ড নয়, দর্শকমহল কিংবা সাংবাদিক মহলও বরাবরই সাকিবের প্রতি একটা ‘দেখেও না দেখা’র মানসিকতা নিয়ে চলে। সাকিবের বার বার সামান্য মুচলেকায় ছাড়া পেয়ে যাওয়াটা দলের বাকিদের প্রতি কোনো ভাল বার্তা দেয় না।

বিশ্বকাপের মঞ্চে গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন সাকিবরা – সেটা সাকিব, টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম, তথা টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। বিষয়টা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরল, তাই গণমাধ্যমকর্মীদের শত সমস্যার পরও সিদ্ধান্তটা সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। এই দলীয় নীতির উদ্দেশ্য হল দলের পুরোটা মনোযোগ মাঠের ক্রিকেটের দিকেই রাখা। সেখানে, সাকিব নিজে কতটুকু মনোযোগ রাখতে পারছেন?

হ্যাঁ, সাকিব নিজে হয়তো চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। কয়েকটা ঘণ্টা এভাবে কোথাও গেলেও হয়তো তাঁর ফোকাস নষ্ট হবে না, কিন্তু সেটা কি বাকিদের কাছে কোনো ইতিবাচক বার্তা দেয়? নেতাদের আদর্শ হতে হয়, সাকিব সেটা পারছেন কি?

বিশ্বকাপের এখনও কাগজে-কলমে তিনটা ম্যাচ বাকি, সেখানকার পারফরম্যান্স দিয়ে চাইলে সব কিছুুই ভুলিয়ে দিতে পারেন সাকিব, যেমনটা আগেও করেছেন। বিশৃঙ্খলাকেই নিজের শৃঙ্খল মেনে চলা সাকিবের পুরনো স্বভাব। সেটা সাকিব বদলাবেন না হয়তো, এখন অন্তত চাওয়া এটুকুই যে পারফর্ম করার স্বভাবটাও যেন অক্ষুন্নই থাকে।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...