ক্রিকেটে অনেক গ্রেটই এসেছেন গেছেন – স্যার ডন ব্র্যাডম্যান থেকে শচিন টেন্ডুলকার; ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা থেকে সেরাটা দিয়ে নিজেদেরকে রেখে গেছেন চির স্মরনীয়। তবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বৈচিত্রময়ী ব্যাটসম্যানের কথা যদি আসে আপনার মনে সবার আগেই যে নামটি আসবে তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্স!
হাটু গেড়ে উইকেটের পেছনে ছক্কা কিংবা লো ফুলটসে বাউন্ডার পার কোনো কিছুই যেন রান নেওয়া থেকে আটকাতে পারে না তাঁকে। মাঠের চারিদিকে সমান তালে রান করতে পারেন বিধায় আখ্যা পেয়েছেন মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি। নান্দনিক আর দৃষ্টিনন্দন সব শটে ক্রিকেট সর্ব প্রান্তের ভক্তদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।
চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বজায় রেখেছেন নিজের চিরচেনা ফর্ম। বছর গড়াচ্ছে যত বয়সটাও বেড়ে চলেছে, কিন্তু থেমে নেই তিনি! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রতি বছরই আইপিএলে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে দেখা যায় তাকে। মিডল অর্ডারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর ভরসার নাম তিনি। বয়স বাড়লেও তার ফিটনেস কিংবা ফর্ম কোনো কিছুতেই পিছিয়ে যাননি তিনি! প্রতি মৌসুমেই ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে রান বন্যায় মাতিয়েছেন আইপিএল।
চলতি আসরে এখন পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন ডিভিলিয়ার্স। ছয় ম্যাচে ৬৮ গড়ে করেছেন ২০৪ রান! আছে দুইটি অর্ধশতক। আসরের প্রথম ম্যাচেই মুম্বাইয়ের বিপক্ষে করেছেন ২৭ বলে ৪৮ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে মাত্র পাঁচ বলে এক রান করেন।
কিন্তু, আসরের তৃতীয় ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৩৪ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি! চতুর্থ ম্যাচে অবশ্য রাজস্থানের বিপক্ষে তার ব্যাটিংয়ে নামারই প্রয়োজন হয়নি; এর আগেই দল জয় পায় ১০ উইকেটের।
পঞ্চম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে অবশ্য ভালো কিছু করতে পারেননি৷ নয় বলে চার রান করে আউট হন তিনি। তবে ষষ্ঠ ম্যাচে দিল্লীর বিপক্ষে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ৪২ বলে ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। তার খেলা ছয় ম্যাচ শেষে প্রায় ১৭৪ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে এখন পর্যন্ত এবারের আসরে ব্যাটিং করেছেন তিনি।
গত আসরের ফর্মটা ঠিকই ধরে রেখেছেন তিনি। সেটির প্রমান প্রথম ছয় ম্যাচেই দিয়েছেন তিনি। যদিও আইপিএলে ফর্ম এবার তাঁর ধরে রাখাটা শক্ত। কারণ, ব্যাটিংয়ের সাথে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানোর দায়িত্বটাও তাঁরই।
কাল দিল্লীর বিপক্ষে দূর্দান্ত এই ঝড়ো ইনিংসের মাধ্যমে ডি ভিলিয়ার্স পৌঁছে গেছে আইপিএলে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে। আইপিএলে সবচেয়ে কম বলে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার রেকর্ডও গড়েন তিনি। ১৩৪ ইনিংসে ৩৫৫৪ বলে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলই ছুঁয়েছিলেন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। সেটিকে ভেঙে ১৩১ ইনিংসে ৩২৮৮ বলে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে পা দেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আরো আগেই সরে দাঁড়ালেও এখনো আইপিএলে নিজের স্বভাবসুলভ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে ডিভিলিয়ার্স। ২২ গজে দাঁড়িয়ে মাঠের চারদিকেই অনায়াসে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের বরাবরই ‘বিনোদন’ দিয়ে আসছেন ব্যাঙ্গালুরুর এই তারকা ব্যাটসম্যান। বয়স ছুঁয়ে গেছে ৩৭, তবে বিনোদনের এই অবারিত বৃষ্টি চলছেই। এবি থামবেন না, থামবে না তাঁর বিনোদন।