যেখানে বাংলাদেশ দুইশোর উপর রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল মাত্র এক ম্যাচে। সেখানে বাংলাদেশকে ৪৩৭ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই এত রান তাড়া করে জয়ের কোনো রেকর্ড নেই। তাই জয় নিয়ে না ভেবে এই ম্যাচ ড্র করাটাই ছিল বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এই ম্যাচ ড্র করতেও প্রায় ছয় সেশন বা ১৫০ ওভার ব্যাট করতে হত বাংলাদেশকে।
উইকেটে যে বাউন্স ও টার্ন ছিল তাতে এই লম্বা সময় শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের সামলে উইকেটে টিকে থাকাও কঠিন ছিল। একমাত্র শ্রীলঙ্কার প্রকৃতিই উদ্ধার করতে পারতো সফরকারীদের। প্রকৃতিও হাত বাড়ায়নি; পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও। পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ২০৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
প্রথম দুই দিন শেষেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট মানেই তো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামলানো। তাই শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ার পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্কিলের পরীক্ষার সাথে চ্যালেঞ্জ ছিল প্রবল। কিন্তু ব্যাটিং স্কিল ও সাহসিকতায় জবাব দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো অসহায় আত্নসমর্পণ করেছেন ব্যাটসম্যানরা।
ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দুই স্পিনারের মানসিকতা এবং প্রভাবের সাথে বাংলাদেশের দুই স্পিনারের বড় পার্থক্যও চোখে পড়েছে। যদিও শেষ ইনিংসে ৮ উইকেট শিকার করেছেন স্পিনাররা। তাইজুল ইসলাম পেয়েছেন পাঁচ উইকেট। তবে সেখানে ভালো বোলিংয়ের চেয়ে হয়তো বেশি অবদান ছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলার প্রয়োজনীয়তা।
প্রথম টেস্ট ড্র করে দ্বিতীয় টেস্ট হেরে সিরিজ হারলেও এই টেস্টে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি হয়ে থাকবেন তাসকিন আহমেদ। পুরো সিরিজ জুড়েই বাউন্স, গতি এবং আগ্রাসন মিলিয়ে কাপিয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। দুই টেস্টের তিন ইনিংসে এই পেসার শিকার করেছেন ৮ উইকেট। তাসকিনের বলে সতীর্থরা ক্যাচ গুলো না ছাড়লে উইকেটের সংখ্যা আরো বাড়তো নিশ্চিত ভাবেই।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শুরুতেই ইনিংসের সুর বেঁধে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে তিনটা সেঞ্চুরি মিস করার আক্ষেপ থেকেই যাবে এই ওপেনারের। নাজমুল হোসেন শান্তু গত টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পর ব্যর্থ ছিলেন পরের ইনিংস গুলোতে। একটা বড় ইনিংস খেললেও শান্তর ধারাবাহিকতা নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গতকাল নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন বড় টার্ন করা বলে। তামিম ও মুশফিকুর আউট হন দারুণ দুটি ডেলিভারিতে। তবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন মুমিনুল হক ও সাইফ হাসান।vসবাই একটু দায়িত্ব নিলেই পঞ্চম দিনে অন্তত লড়াই করতে পারতো বাংলাদেশ।
আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলা ১২ ওভার থাকতেই বন্ধ হয়ে যাওয়াতে পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৬০ রান ও শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ৫ উইকেট। লিটন দাস ১৪ রান করে ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তবে এই জুটি পঞ্চম দিন বেশি দূর যেতে পারেনি। মাত্র ৬ রান যোগ করার পর লিটন দাস ফিরে যান ১৭ রান করে।
এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ লড়াই করলেও বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেননি। ৩৯ রান করে ফিরে যান তিনি। শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর প্রাভিন জয়াবিক্রমা পাঁচটি, মেন্ডিস ৪ টি ও সিলভা শিকার করেন একটি উইকেট। জয়াবিক্রমা প্রথম ইনিংসেও নেন ছয় উইকেট। তিনি ইতিহাসের প্রথম বাঁ-হাতি স্পিনার যিনি অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই কমপক্ষে পাঁচটি করে উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতেই।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৪৯৩/৭ (ডি.) (ওভার: ১৫৫.৫; করুনারত্নে- ১১৪, থিরিমান্নে- ১৪০*, ফার্নান্দো- ৮১, ম্যাথুস- ৫, সিলভা- ২, নাশাঙ্কা- ৩০, ডিকওয়েলা- ৭৭*, মেন্ডিস- ৩৩) (শরিফুল- ২৯-৬-৯১-১, তাসকিন- ৩৪.২-৭-১২৭-৪, তাইজুল- ৩৮-৭-৮৩-১, মেহেদি- ৩৬-৭-১১৮-১)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৫১/১০ (ওভার: ৮৩; তামিম- ৯২, সাইফ- ২৫, শান্ত- ০, মুমিনুল- ৪৯, মুশফিক- ৪০, লিটন-৮, মিরাজ- ১৬, তাইজুল- ৯) (জয়াবিক্রমা- ৩২-৭-৯২-৬, মেন্ডিস- ৩১-৭-৮৬-২, লাকমল- ১০-০-৩০-২)
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯৪/৯ (ডি.) (ওভার: ৪২.২; থিরিমান্নে- ২, করুনারত্নে- ৬৬, ম্যাথুস- ১২, ফার্নান্দো- ১, সিলভা- ৪১, নিশাঙ্কা- ২৪, ডিকওয়েলা- ২৪, মেন্ডিস- ৮, লাকমল- ১২, জয়াবিক্রমা- ৩) (মিরাজ- ১৪-৩-৬৬-২, তাইজুল- ১৯.২-২-৭২-৫, তাসকিন- ৪-০-২৬-১, সাইফ- ৪-০-২২-১)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২২৭/১০ (ওভার: ৭১; তামিম- ২৪, সাইফ- ৩৪, নাজমুল- ২৬, মুমিনুল- ৩২, মুশফিকুর- ৪০, লিটন- ১৭, মিরাজ- ৩৯, তাইজুল- ২, তাসকিন- ৭) (মেন্ডিস- ২৮-২-১০৩-৪, জয়াবিক্রমা- ৩২-১০-৮৬-৫)
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ২০৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: প্রাভিন জয়াবিক্রমা (শ্রীলঙ্কা)।
সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে জয়ী।