নায়ক হওয়ার রসদ নিয়ে নাজিমউদ্দীন আজ খলনায়ক

মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীনকে অবশ্য মানুষ এখন মনে রেখেছে ভিন্নভাবে। ২০১২ এশিয়া কাপে হারের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়, কিঞ্চিত অবজ্ঞার সুরে। 

কোন এক হার্ড হিটারের উত্থান হলেই, বাংলাদেশে একটা আফসোসের মিছিল ছড়িয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশেরও একজন মারকুটে ব্যাটার ছিলেন। মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীনকে অবশ্য মানুষ এখন মনে রেখেছে ভিন্নভাবে। ২০১২ এশিয়া কাপে হারের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়, কিঞ্চিত অবজ্ঞার সুরে।

সেদিন অবধ্য তিনি রীতিমত অন্যায় করেছিলেন। ৫২ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলা ওয়ানডে ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে ভীষণ অন্যায়ের বটে। আর তা যদি হয় কোন এক টুর্নামেন্টের ফাইনাল, তবে তো ঘোরতর পাপের সামিল। তাই তো নাজিমউদ্দীনের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি রেখা টেনে দেওয়া হয়েছিল সেদিনই।

কিন্তু, নাজিমউদ্দীনের আসল চরিত্রটা সবচেয়ে ভাল ফুটে উঠত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। প্রায় এক যুগ আগে প্রায় ১১২ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে তিনি রান করেছেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এখনও অবশ্য বহু বাংলাদেশি ব্যাটার প্রায় কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে খেলে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।

তবে শুধু স্ট্রাইক রেট নয়, নাজিমউদ্দীনের ঝুলিতে রয়েছে বেশ কিছু রেকর্ডও। টাইগারদের জার্সি গায়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করা ব্যাটার ছিলেন মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন। পাকিস্তানের তখন তুখোড় বোলিং লাইন আপ। শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ আসিফদের মত বোলারদের বিপক্ষে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন।

অবশ্য অর্ধ-শত করেই সেদিন তিনি থেমে থাকেননি। এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের ইনিংস। ৫০ বলে ৮১ রান করে আউট হয়েছিলেন নাজিমউদ্দীন। সেটাই ছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ৮০ ছাড়ানো ব্যক্তিগত ইনিংস।

শুধু কি তাই? নিজের অভিষেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার উঠেছিল তার হাতে। মাত্র চারজন বাংলাদেশি খেলোয়াড় এমন কীর্তি গড়েছেন এখন অবধি। এখানেই শেষ নয়। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে নাজিমউদ্দীন ছিলেন তৃতীয় স্থানে। এখন অবধি এটাই বাংলাদেশের ব্যাটারদের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঠিক কতটা কার্যকর ছিলেন মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীন, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। ঠিক আজকের দিনে ভারতের সুরিয়াকুমার যাদবের মত। কিন্তু বাংলাদেশ দল তাকে ওয়ানডে ক্রিকেটের পারফরমেন্সের উপর ভর করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সাদা বলের ক্রিকেট থেকে। একটা সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে যার মধ্য দিয়ে।

অবশ্য নিজের এমন দুর্দশার জন্য নাজিমউদ্দিনও ছিলেন দায়ী। নিষিদ্ধ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইসিএলে অংশ নিয়েছিলেন তিনিও। সে কারণেই বেশ লম্বা সময় নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে তাকে। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে নিজেকে আর তেমন মেলে ধরতে পারেননি। অগত্যা প্রস্থান ঘটে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্ণিল ভুবন থেকে।

এখনও হয়ত একটা আক্ষেপ নিয়ে দিনাতিপাত করছেন নাজিমউদ্দীন। নিজের ক্যারিয়ারকে আরেকটু সমৃদ্ধ তিনি হয়ত করতে পারতেন, ভুল কিছু সিদ্ধান্ত না নিলে। তাছাড়া ২০১২ এশিয়া কাপ জয়ের নায়কও হতে পারতেন। কিন্তু তিনি পারেননি। তাই তো আজও তার বিচরণ খলনায়ক হিসেবে।

Share via
Copy link