পাকিস্তানের লাওনেল রিচি

অভিষেকটা তাঁর জন্য অনেকটা সিন্ডারেলার গল্পের মত। করাচিতে ক্লাব ক্রিকেট খেলছিলেন। ওই সময় সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলার জন্য পাকিস্তান দল ঘোষণা করা হয়।

জাভেদ সাদিক নামের স্থানীয় এক কর্মকর্তা কয়েকটা ম্যাচ দেখেছিলেন ওই অফ স্পিনারের। তাঁর সাথে আবার পাকিস্তান দলের ম্যানেজার মুশতাক মোহাম্মদের খুব খাতির। মুশতাক তাই অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদকে নিয়ে চলে আসলেন মাঠে খেলা দেখতে।

জাভেদের এতটাই পছন্দ হল যে সোজা তাঁর জায়গা হল টেস্ট দলে। ঠিক টেস্ট শুরুর আগেরদিন। পরদিন তিনি নেমে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সাদা পোশাকে হল অভিষেক। ইলিয়াস খানের জায়গায় খেলতে নামলেন তিনি। মাত্র মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাগ্য আমূল পাল্টে গেল পাকিস্তানের লাওনেল রিচির।

লাওনেল রিচি? – তাঁকে কে না চিনে। আমেরিকান এই গায়ক ও সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বিখ্যাত ছিলেন তাঁর ঝাঁকড়া চুলের জন্যও। আশির দশকে পাকিস্তানও নিজেদের লাওনেল রিচিকে খুঁজে পেয়েছিল।

না, তিনি গানটান গাইতেন না। তিনি বোলিং করতেন। ধূর্ত এই অফ স্পিনার তাঁর চেহারা ও গোঁফের জন্য দেখতে অনেকটা লাওনেল রিচির মত ছিলেন। ক্যারিয়ার খুব বেশি বড় না হলেও এই নিজেকে বেশ কার্য্যকর হিসেবে প্রমাণ করে গেছেন তিনি।

কাগজে কলমে তাঁকে ঠিক ক্ষণস্থায়ী বলা যায় না – ১৯৮০ থেকে ১৯৯৩ – মোটামুটি এক যুগেরও বেশি সময় তিনি সার্ভিস দিয়েছেন পাকিস্তান জাতীয় দলকে। কিন্তু এই সময় খেলেছেন মাত্র ১০৪ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

তিনি হলেন তৌসিফ আহমেদ। তাঁর সময়ে পাকিস্তানের মূল স্পিনার ছিলেন আব্দুল কাদির কিংবা ইকবাল কাশিম। ফলে তৌসিফের ক্যারিয়ারটা খুব লম্বা হয়নি।

তবে, মনে রাখার মত বেশ কিছু পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে হঠাৎ করেই তাঁর অভিষেক হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, শুরুতেই তো বলা হল। অভিষেকেই করাচিতে নেন সাত উইকেট। সেই থেকে তাঁর ক্যারিয়ারের গ্রাফটা যেমন হওয়া উচিৎ ছিল তা হয়নি।

তবে, তৌসিফ বেশি বিখ্যাত ১৯৮৭ সালে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে ভারতের বিপক্ষে পারফরম্যান্সের জন্য। সেবার তৌসিফ ও ইকবাল কাশিম – দু’জনই নয়টি করে উইকেট নেন। সুনীল গাফাস্কারের ৯৬ রানের ইনিংস বৃথা যায়। পাকিস্তান মাত্র ১৬ রানের ব্যবধানে জিতে যায়। পাকিস্তানের বিখ্যাত এই জয়ের সাথে জড়িয়ে আছে তৌসিফের নাম।

বছর দুয়েক বাদে করাচিতে আরেকটি অনবদ্য পারফরম্যান্স উপহার দেন তৌসিফ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪৭.৪ ওভার বোলিং করেন। ২৮ টি মেইডেন নেন। রান হজম করেন মাত্র ৪৪ টি। উইকেট পান তিনটি।

টেস্ট ক্রিকেটটাই বেশি ভাল খেলতেন। ৩৪ টি টেস্টে নেন ৯৩ উইকেট। ওয়ানডেতে সেই তুলনায় পারফরম্যান্স সাদামাটা। ১৯৮২ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। ৫৫ উইকেট নেন ৭০ টি ম্যাচ খেলে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি ছিলেন বিরাট একটা ব্যাপার। ১৭৬ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। তাতে ৬৯৭ টা উইকেট নিয়েছেন। ১৭৭ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ১৭৭ টি উইকেট। স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রায় হাজার খানেক উইকেট পাওয়া সহজ ব্যাপার নয় – অথচ আজকের দিনে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয় সামান্যই!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link