সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তাঁর, একাই গিলে ফেলতে চান সবকিছু। ফুটবল নামক উপন্যাসের সব পাতায় নিজের নাম লেখাতে চান তিনি, বলছি লিওনেল মেসির কথা। ২০২২ সালের একটা শীতের রাতেই তো পূর্ণতা পেয়েছিলেন তিনি, জীবনের সব বাসনা সেদিনই সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল তাঁর। অথচ তিনি এখনো ছুটছেন অতৃপ্ত একটা সিংহের মতন!
এই সিংহের ধারালো নখের থাবায় এবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল নিউ ইংল্যান্ড। স্রেফ দশ মিনিটের ব্যবধানে তিন তিনটি গোল করে বসলেন সাবেক বার্সা সুপারস্টার, চোখের পলকে পেয়ে গেলেন আরো একটা হ্যাটট্রিক। সবমিলিয়ে ইন্টার মিয়ামি জিতেছে ৬-২ গোলে, আর ছয় গোলের চারটিতেই সরাসরি অবদান রয়েছে তাঁর।
ঠিক যেন বলিভিয়া বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের পুন:প্রচার। সেদিন যেমন পুরো মাঠ জুড়ে কেবল ফুটবল জাদুকরের রহস্যময় জাদু দেখা গিয়েছে তেমনি এদিন ইন্টার মিয়ামির হয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। পেয়েছেন নিজের ৫৯ তম হ্যাটট্রিকের দেখা, ক্লাব ফুটবলে হ্যাটট্রিক করতে অবশ্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে চার বছর।
বেনজামিন ক্রেমাসছিকে অ্যাসিস্ট করার মধ্য দিয়ে তাণ্ডবের শুরুটা করেন মেসি। অতঃপর কেবল আবির্ভূত হন টিকিটাকা ম্যাজিক; লুইস সুয়ারেজ, জর্দি আলবা এবং মেসি মিলে মনে করিয়ে দেন ব্লাউগানা জার্সির সোনালী দিনগুলোর কথা।
৭৯ মিনিটের সময় প্রায় বিশ গজ দূর থেকেই লক্ষ্য ভেদ করেন এলএমটেন, দুইদিন মিনিট পরেই আলবার অ্যাসিস্ট থেকে আবারো গোল! ৮৯ মিনিটের সময় সবার চোখে বিস্ময় এঁকে দিয়ে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেন সুয়ারেজ, কোন ভুল না করে টানা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক তুলে নিয়েছেন মেসি।
অথচ শুরুর একাদশেও ছিলেন না এই তারকা, মাঠে নেমেছেন ৫৮ মিনিটের সময়। তারপরই বদলে গিয়েছে ম্যাচের গতিপথ। ২-২ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচটা হয়ে উঠেছে পুরোপুরি এক তরফা, তাঁর দুই পায়ের ঝলকে নিউ ইংল্যান্ড বাধ্য হয়েছে নি:শর্ত আত্মসমর্পণে।
যতবারই জিজ্ঞেস করা হয়েছে লিও ততবারই বলেছেন কবে থামবেন সেটা তিনি নিজেও জানেন না। আমরাও জানতে চাই না, বরং ফুটবলের মঞ্চে তাঁকে দেখতে চাই আরো অনেক অনেক দিন – প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চাই ফুটবল বিধাতার সর্বোচ্চ আশীর্বাদপুষ্ট মানবের রহস্য।