নানা লেখা ঘাটতে ঘাটতে মনে হলো ক্রিকেটের বোলারের গতি বিষয়ক প্রতিবেদকও থাকতে পারে? বর্তমান মাল্টিটাস্কিং সাংবাদিকতার যুগে খুবই অড একটা টার্ম। কিন্তু এডি স্মিথ নামের এক ব্যক্তি যার লেখা ক্রিকইনফোর আর্কাইভে ঢুকলেই পাওয়া যায় একের পর এক রেকর্ডের নসিহত!
২০০২ সালের চৌঠা মে ক্রিকইনফোর লেখক এডি স্মিথের প্রতিবেদনে দেখা যায় শতাব্দীর পাতা যখন পাল্টাচ্ছিল পৃথিবী তখন ছোট ক্রিকেটীয় গন্ডিতে গতির ঝড়ে ওলটপালট করে দিচ্ছিলেন তিন পেস বোলার। পেস বোলার না বলে ফাস্ট বোলার বললে কী খানিকটা সম্মান বাড়ে?
সিওর না! তবে পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের লড়াই ছিল তখন অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লির সাথে। ২০০২ এর সেই গতি সম্পর্কিত লেখা ছাপার সময়, তখনও শোয়েব আখতার সেই ঐতিহাসিক বলটি করেননি।
নেন্টি হেওয়ার্ডের নাম শুনেছি খেলা তেমন দেখা হয়নি। সে যে ভয়াবহ ফাস্ট ছিলেন তাও জানতাম। কিন্তু সে দেখি বিগ থ্রির অংশ রীতিমতো! ব্রেট লি- শোয়েব আখতার- ন্যান্টি হেওয়ার্ড!
১৯৯৯ সালেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫১ মেরে দিয়ে ২২ বছর বয়সী প্রোটিয়া নিজের আবির্ভাবের ঘোষণা দেয়! ২০০১ সালে হেওয়ার্ডের বল আসলেই ভোগায় ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে! শচীন টেন্ডুলকার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে ৪০+ বল খেলেও বিশ পার করতে পারেননি।
৩৮ রানে ২ উইকেট নেয়া হেওয়ার্ড ডারবানে আগুন ঝরান! কিন্তু তিনি সাস্টেইন করেননি বেশি দিন। মাত্র ২১টি ওয়ানডে ম্যাচ! মাত্র ১৬টি টেস্ট ম্যাচ! ক্রিকেটের জন্যই কেমন মন খারাপ ধরনের বিষয়। বিশেষত আমার মতো অ্যাড্রানালিন রাশ লাভারদের জন্য।
সেদিন থেকে শোয়েব অনেক অনেক এগিয়ে উইকেট, ইকোনমি রেট, ক্ষিপ্রতা! ব্রেট লির সমান ম্যাচ খেলতে পারলে তার সমান বা বেশিও উইকেট থাকতে পারতো। ব্রেট লি যেটা পেয়েছেন সেটা হলো প্রপার গাইডলাইন। অস্ট্রেলিয়ান কালচার। শোয়েব যে বোর্ডের অধীনে ছিলেন তারা নিজেরাই জানে না পরের সিরিজে তারা কী করতে যাচ্ছে।
আমার লাইভ দেখা শোয়েবের প্রিয় ম্যাচ দুইটা! একটা করাচিতে। ২১ এপ্রিল ২০০২! এদিনকার সব স্মৃতি তরতাজা মনে, ডানোর কৌটায় মুড়ি নিয়ে খেলা দেখতাম। পড়তাম ক্লাস টুতে। আমরা সিলেটে তখন যে ভবনে থাকতাম সেই ভবনের নাম ছিল গোপশহর ভবন, দরগা গেটে। (অপ্রাসঙ্গিক বটে)
শোয়েব ছিলেন এদিন ফোর্থ বোলার। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোই চলছিল নিউজিল্যান্ডের সংসার। শোয়েব বল হাতে নেয়ার সময় নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ৭০ এর মতো! তখনো সাত উইকেট হাতে। এরপর একে একে ম্যাকমিলান, জ্যাকব ওরাম, হার্ট, আন্দ্রে অ্যাডামস, ব্রুক ওয়াকার ও ইয়ান বাটলারকে ফেরান প্যাভিলিয়নে।
শোয়েবের বোলিং ফিগার ছিল এমন- ৯-১-১৬-৬! ইকোনমি রেট ১.৭৭। এদিন শোয়েব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার ঘণ্টায় বলও করেন! স্টাম্প গুড়িয়ে দেন আন্দ্রে অ্যাডামসের!
আরেকটা প্রিয় ম্যাচ একটু অড! যেটা শোয়েবও ভুলে যেতে চাইবেন! ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচ, এদিন পাকিস্তান রান দেয় ২৪৬! যার মধ্যে ৬৩ রানই দেন শোয়েব, ওভারপ্রতি ৭! এদিন শোয়েব তাণ্ডব চালান ব্যাট হাতে! ১৬ বলে ৪৩!
এটা তখন ম্যাচের স্রোতে বিন্দুমাত্র প্রভাব না ফেললেও দর্শক হিসেবে পেয়েছিলাম নির্মল আনন্দ। (মাশরাফিরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন ইনিংস আছে, ২০১৬, ২৯ বলে ৪৪, এদিন মাশরাফী উইকেটও নেন চারটি, ২৯ রানে চার উইকেট)।
অ্যাড্রানালিন বোধহয় সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন শোয়েব আখতার। নিজের ঘণ্টায় শতমাইলের বলের বছরপূর্তিতেও তিনি টুইট করেন, “অস্বাভাবিক গরম ছিল। সাথে ছিল অ্যাড্রানালিন রাশ।”
শোয়েবের নানা ইন্টারভিউ ও আলাপে একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায় ও বোলিং নিয়ে ভাবতো না খুব একটা। ওর ভাবনা ছিল কেবল এবং কেবলমাত্র ‘জোরে বোলিং’ নিয়ে।
যেবার শোয়েব আখতার ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার গতিতে বল করেন সেই ম্যাচের ইনিংস বিরতির সাক্ষাৎকারেই বলেন, ম্যাচ শুরুর আগেই কোচ ম্যানেজার সবাইকে বলে এসেছি দ্বিতীয় ওভারেই আমি রেকর্ড ভাঙবো, ‘যখন দেখি ১৫৮ হয়েছে, তখনই মনে হয় এটাই সময়, ব্যারিয়ার ভাঙার জন্য।’
বাকি গতিতারকাদের চেয়ে শোয়েব আলাদা একটা জায়গা! ওর জন্য স্থান-কাল ম্যাটার করেনি। শারজাহ, ডারবান, লন্ডন, মেলবোর্ন! ডাজন্ট ম্যাটার! দ্য রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস!