বাবা অ্যালান বুচার ইংল্যান্ডের হয়ে খেললেও তাঁর চাইতে অবশ্য ছেলে মার্ক বুচারই বেশি পরিচিত। ১৯৭০-৭১ সালের পর অভিষেক হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে কখনো ওয়ানডে না খেলে সবচেয়ে বেশি ৭১ টি টেস্ট খেলার রেকর্ডটা মার্ক বুচারেরই দখলে।
বুচার পরিবারে ক্রিকেটারের কোনো শেষ নেই। মার্কের দুই চাচা মার্টিন ও ইয়ান বুচারও ক্রিকেটার। ইয়ান তো রীতিমত ১২৪ টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আর ৯১ টা লিস্ট ‘এ’ ম্যাচও খেলেছেন। মার্কের ভাই গ্যারি বুচার জাতীয় দলে কখনো না খেললেও কাউন্টি খেলেছেন গ্ল্যামরগান ও সারের হয়ে। তাদের বোন ব্রাইওনি অ্যান বুচার এসেক্সের মেয়েদের দলে খেলেছেন।
শিবনারায়ণ ও ত্যাগনারায়ণ চন্দরপলের একসাথে খেলার গল্প কমবেশি সবারই জানা। অ্যালান বুচার ও মার্ক বুচারও খেলেছেন একসাথে- কিন্তু প্রথম দেখা একে অপরের বিপক্ষে।
১৯৯১ এর কথা। চার বছর আগে সারে ছেড়ে গ্ল্যামরগানে যোগ দিয়েছেন অ্যালান বুচার৷ বয়স হয়েছে, হাঁটুটাও সায় দিচ্ছে না। সানডে কাপে খেলা তার পুরোনো দল সারের বিপক্ষে৷ অ্যালান অবশ্য হাঁটুর চোটের জন্যে খেলবেন না ঠিক করেছেন।
ম্যাচের আগের দিন সারের অধিনায়ক অ্যালানের ঘরে এসে জানিয়ে গেলেন যে, তার ছেলে মার্কের কাল অভিষেক হচ্ছে। হাঁটুর ব্যথা মুহূর্তেই ভুলে গেলেন অ্যালান। এমন নজিরবিহীন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়া থেকে অ্যালানকে থামানোর সাধ্য এই তুচ্ছ হাঁটুর চোটের নেই।
সানডে কাপের সেই ম্যাচে মার্ক বুচার নামলেন নয় নাম্বারে। ৪৮ রানের ইনিংস খেলার পথে বাবার দল গ্ল্যামরগানকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলেন৷ জেতার জন্যে শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ছয় রান। ১৯ বছর বয়সী বুচার তা পারেননি। শেষ হাসি হেসেছিলেন বুচার সিনিয়র, তবে সেই হাসি ছিল ছেলে মার্কের সাফল্য আর নিজের দলের জয়- দুয়ে মিলিয়েই।
বাবার মতই সারের প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন বোলার হিসেবে। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শেষমেশ হয়ে গিয়েছিলেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান৷ ইংল্যান্ডকে এক টেস্টে নেতৃত্বও দিয়েছেন।
মার্ক বুচার যদি ক্রিকেটার না হয়ে সঙ্গীতে ক্যারিয়ার গড়তেন, তবে হয়ত সঙ্গীতজগৎ আরও সমৃদ্ধ হত। সঙ্গীতে ক্যারিয়ার গড়েছেন বটে, তবে ক্রিকেট ছাড়ার পর। নিজের নামে ব্যান্ডও রয়েছে। প্রথমবার গান লিখে সুর করে গেয়েছিলেন সতীর্থ, বন্ধু প্রয়াত বেন হোলিওকের স্মরণে।
ব্যক্তিজীবনের এক পর্যায়ে মার্ক বিবাহিত ছিলেন সারে ও ইংল্যান্ড সতীর্থ অ্যালেক স্টুয়ার্টের বোনের সাথে। অ্যালেক স্টুয়ার্টের বাবা মিকিও খেলেছেন সারে ও ইংল্যান্ডের হয়ে। কি অদ্ভুৎ রকমের মিল!
২০০১ সালে লিডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজৈ ১৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মার্ক। সেদিন মার্কের স্ত্রী বলেছিলেন, ‘আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে!’