উইকেটের সামনে নড়বড়ে লিটন পেছনে ‘রক সলিড’

তার চোখের নজর যেন বাজপাখির, বল কোথায় যাচ্ছে তা আগে থেকেই বুঝে ফেলেন। স্ট্যাম্পের কাছে তার উপস্থিতি মানেই ব্যাটারের মনে ভয়।

ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছে না লিটন দাসের। তবে উইকেটের পিছে যেন রীতিমতো ‘সুপারম্যান’ হয়ে উঠেছেন তিনি। চলতি বছর নয় টেস্টে ৩৮টি ডিসমিশাল হয়েছে তার হাত ধরে। উইকেটরক্ষক হিসেবে এটিই সবোর্চ্চ এখন অবধি। ৩২ টা ক্যাচের সাথে আছে ছয়টি স্ট্যাম্পিংও। ইনিংস প্রতি গড়ে দুইটির বেশি ডিসমিসাল করেছেন তিনি।

গত তিন বছরে টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ গড়ের আশেপাশে ব্যাট করেছিলেন লিটন। তবে ২০২৪ সালে এসেই যেন ছন্দপতন হল তার। ১৬ ইনিংসে রান মোটে ৩৯৬, গড়টা খুবই বাজে ২৪.৬৩। একটা মাত্র সেঞ্চুরি আর অর্ধশতক শতকও এসেছে পাকিস্তান সিরিজে।

ব্যাটিং সহায়ক পিচের ওই সিরিজ বাদে চলতি বছর টেস্টে ব্যাট হাতে সুপার ফ্লপ তিনি। শ্রীলঙ্কা,ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কারো বিপক্ষেই ভালো করতে পারেননি তিনি। ব্যাট হাতে নিজেকে যেন হারিয়ে খুঁজছেন তিনি।

তবে উইকেটের সামনে যতটা নড়বড়ে ,উইকেটের পিছনে যেত ততটাই অনড়, অবিচল তিনি। কখনো চিলের মতো আকাশে ভেসে এক হাতে অবিশ্বাস্য ক্যাচ, আবার কখনো চিতার ক্ষিপ্রতায় বেল উড়িয়ে প্রতিপক্ষকে হতবাক করা—তিনি যেন উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ত্রাস।

তার চোখের নজর যেন বাজপাখির, বল কোথায় যাচ্ছে তা আগে থেকেই বুঝে ফেলেন। স্ট্যাম্পের কাছে তার উপস্থিতি মানেই ব্যাটারের মনে ভয়। ধূর্ত শিয়ালের মতো চতুরতা আর বিদ্যুৎ গতিতে প্রতিক্রিয়া দেওয়া, সবেতেই সর্বেসর্বা লিটন কুমার দাস।

এছাড়াও স্ট্যাম্পের পিছে বেশ সক্রিয় লিটন। প্রতিপক্ষ ব্যাটারের মনোযোগ নষ্ট করতে স্লেজিংটাও বেশ ভালোই করেন তিনি। পাকিস্তান সিরিজেই দ্বিতীয় টেস্টে যখন মোহাম্মাদ রিজওয়ান আর সৌদ শাকিল ২০০ এর উপরে পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচটা বাংলাদেশ থেকে ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছিলো তখন ‘মাইন্ড গেম’ খেলেন লিটন। শাকিল এক পর্যায়ে তো বলেই বসলেন, ‘কি করছো তুমি! আমাকে বোলার থেকে তুমি বেশি বিচলিত করছ।’

মানে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিপক্ষের জন্য উইকেটের পিছে লিটন প্রতিপক্ষের জন্য বেশ মাথা ব্যাথারই কারণ। এমনিতেও, সতীর্থদের অনুপ্রেরণা দেওয়াতেও তার জুড়ি মেলা ভার। প্রতিনিয়তই বোলারদের উজ্জীবিত করতে দেখা যায় তাকে।

অদ্ভুত অদ্ভুত ডাকনামও দেন তিনি। অনেক সময় ফিল্ডিং সেট করতেও দেখা যায় তাকে, অধিনায়ককে পরামর্শও দেন মাঝেমধ্যেই। এক কথায় উইকেটের পেছনে দাঁড়ানোর সকল গুনাবলিই তার মধ্য আছে। উইকেট কিপিংয়ের মত সফলতা ব্যাট হাতেও ধরে রাখবেন লিটন, সেটিই এখন কামনা দেশীয় ক্রিকেট অনুরাগীদের।

Share via
Copy link