বাংলাদেশের একান্ত ব্যক্তিগত কলার তোলা রোয়াব

আজিজুল হাকিম তামিম, আ স্টার ইন দ্য মেকিং। প্রতিপক্ষের বুকে ভয় ধরিয়ে, চোখ রাঙিয়ে দেওয়া একজন অধিনায়ক চলে এসেছেন। চলে এসেছেন এমন এক নেতা, যার জন্য আম্পায়ারও একটা সিদ্ধান্ত নিতে ভাববেন দ্বিতীয়বার।

ভাজহীন তুলে রাখা কলার, রঙ বেরঙের রোদ চশমা, জার্সির খুলে রাখা বোতামের ফাঁক গলে উঁকি দেয় মস্ত মোটা এক রূপালী চেইন। ঠোটের কোনে হালকা তাচ্ছিল্যের হাসি, প্রয়োজনে সটান দাঁড়িয়ে যান আম্পায়ারের সামনে, উত্তর জানা চাই এই সিদ্ধান্তের।

না এটা আশি-নব্বই দশকের ক্যারিবিয়ান কোনো নন। একালের বিরাট কোহলিও নন। তিনি আজিজুল হাকিম তামিম, বাংলাদশের একান্ত ব্যক্তিগত কলার তোলা রোয়াব। চলনে কিংবা বলনে পুরোপুরি ক্যারিবিয়ান ফ্লেয়ার। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী, অধিনায়ক হিসেবে নির্দয়, বল হাতে ‘ফ্ল্যামবোয়েন্ট’।

আপনাদের কি কার্ল হুপারের কথা মনে পড়ে? সাবেক ক্যারিবিয়া অধিনায়ক। ক্যারিবিয়ান সাম্রাজ্য যখন নিভু নিভু, শেষ নাবিক হিসেবে তখনও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন কার্ল হুপার।

১০০ টেস্ট, ২০০ ওয়ানডে, ১০০০০ এর অধিক রান কিংবা ৩০০ এর অধিক উইকেট সবই ছিলো হুপারের ক্যারিয়ারে। কিন্তু সবথেকে বেশি যা ছিলো, ফ্ল্যামবোয়েন্স। একজন ‘স্টার’ যখন কোন ঘরে প্রবেশ করেন, আপনি না তাকিয়েও অনুভব করতে পারবেন, একজন স্টারের আগমন ঘটেছে।

কার্ল হুপার যখন মাঠে প্রবেশ করতেন, জানা যেত একজন স্টার মাঠে প্রবেশ করেছেন। স্যার ভিভ রিচার্ডসের পরে ক্রিকেটে এতখানি ‘অরা’ নিয়ে কার্ল হুপার বাদে কেউ আসেন নি।

আজিজুল হাকিম তামিম কার্ল হুপারকে মনে করিয়ে দেয়। সেই বিধ্বংসী ব্যাটিং কিংবা কার্যকর অফস্পিন সবই আছে। কিন্তু সবথেকে বেশি আছে সম্ভবত ‘ফ্ল্যামবয়েন্স’। আজিজুল হাকিম তামিম, আ স্টার ইন দ্য মেকিং। প্রতিপক্ষের বুকে ভয় ধরিয়ে, চোখ রাঙিয়ে দেওয়া একজন অধিনায়ক চলে এসেছেন। চলে এসেছেন এমন এক নেতা, যার জন্য আম্পায়ারও একটা সিদ্ধান্ত নিতে ভাববেন দ্বিতীয়বার।

ব্যাটটা চাবুকের মত দোলাতে দোলাতে তামিম উইকেটে আসছেন, একটা মহল তৈরি হচ্ছে। তামিম ডিফেন্ড করছেন, ড্রাইভ করছেন, পায়ের উপরের একটা বল পাঠিয়ে দিচ্ছেন সোজা গ্যালারিতে। আপনি সবই দেখছেন, আপনার মনে হচ্ছে এমনই হওয়ার ছিলো। মহলটা আগেই তৈরি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তামিম দাতে দাত চেপে সেঞ্চুরি করছেন, আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে তুলছেন ছক্কার ঝড়। ভারতের বিপক্ষে ফেভারিট হুঙ্কার দিয়ে ফাইনালে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, বল হাতে মায়াবী যাদুতে তুলে নিচ্ছেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়ানো শেষ তিন উইকেট। কার্ল হুপার নিজে দেখলেও হয়তো এতক্ষণে মুচকি হেসে দিতেন।

ম্যাচ জয় শেষে সতীর্থদের নিয়ে বাধভাঙা উচ্ছাস, গ্যালারিতে সমর্থন যোগানো দর্শকদের সম্মান জানানো তামিম আবার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঘাড়ে পতাকাটা জড়িয়ে নির্মল হাসিতে ফেটে পড়েন। যেন এমনটাই হওয়ার ছিলো, মহলটা আগেই তৈরি।

হ্যা মনে রাখতে হবে, তামিম এখনও কোন পরিপূর্ণ ‘প্রোডাক্ট’ নন। ব্যাটিংয়ে কাজের যায়গা রয়েছে অসংখ্যই। অনিশ্চিত করিডোরের বল, অফ সাইডে শট খেলার সক্ষমতা বাড়ানো, ম্যাচ টেম্পারমেন্টসহ উন্নতির যায়গার কমতি নেই। উন্নতি হোক তামিমের ব্যাটিংয়ে, তামিমের বোলিংয়ে কিন্তু টিকে থাকুক বাংলাদেশের নিজস্ব কলার তোলা রোয়াব।

Share via
Copy link