দিগ্বিজয়ী বীর রাফিনহা – যেটা করেন, সেটাই স্টাইল

দুই গোল, এক অ্যাসিস্ট। গতি, ড্রিবলিং, পাসিং, ক্রসিং কিংবা ফিনিশিং, কি নেই তাতে! অসহায় কোর্তোয়া, কামাভিঙ্গারা কাছ থেকে দেখেছেন বার্সেলোনার ‘সহায়’কে। ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হওয়ার জন্য এতটুকুই ছিল যথেষ্ট।

স্প্যানিশ সুপার কাপ খুইয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, ১৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ৩৬ লা লিগা ট্রফির ইতিহাস বেরিয়ে আসবে এবার। আদতে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত সেইজনির প্রতি। ৫৬ মিনিটের সময় সেইজনি লাল কার্ড হজম না করলে, রিয়ালকে গোল হজমের কোন এক রেকর্ড সঙ্গী করেই জেদ্দা থেকে ফিরতে হতো বার্নাব্যুতে।

চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ফাইনালে ৫-২ গোলের হারও কম লজ্জার নয়। কামব্যাকের আশায় কার্লো আনচেলত্তির ভ্রু কুচকে গিয়েছে যত বার, রাফিনহা গোল, অ্যাসিস্টে সোজা জবাব দিয়েছেন তত বার।

দুই গোল, এক অ্যাসিস্ট। গতি, ড্রিবলিং, পাসিং, ক্রসিং কিংবা ফিনিশিং, কি নেই তাতে! অসহায় কোর্তোয়া, কামাভিঙ্গারা কাছ থেকে দেখেছেন বার্সেলোনার ‘সহায়’কে। ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হওয়ার জন্য এতটুকুই ছিল যথেষ্ট।

কিন্তু ‘রাফিনহা ব্লিডস মেরুন অ্যান্ড ব্লু’। দলের জন্য সব করবেন, প্রথম গোল হজমের পর সবার আগে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, শেষ গোল করার পরে সবার আগে ডিফেন্ড করবেন। এম্বাপ্পে সময় নষ্টের জন্য মাঠের মধ্যে ঔষধের দোকান খুলে বসলে, নিজে হাতে সেই দোকান সাইডলাইনে রেখে আসবেন।

রাফিনহা যখন একের পর এক রাফ ট্যাকেলের স্বীকার হয়ে ৭৯ মিনিটের সময় ধীর গতিতে মাঠ ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন, বার্সেলোনা সমর্থকদের মনে কি একবারের জন্য লিওনেল মেসির সেই বিখ্যাত ‘কোল্ড ওয়াক’ ফিরে এসেছিল?

রামোস-পেপেদের বারাবার ফাউলের স্বীকার লিওনেল মেসি ৫-০ গোলে এগিয়ে থেকে যখন পিচের উপরে হেঁটে গিয়েছিলেন, তৈরি হয়েছিলো ইতিহাসের ‘কোল্ডেস্ট ওয়াক’।

রাফিনহা যেন সেই দৃশ্যকেই নামিয়ে আনলেন কিং আব্দুল্লাহ স্পোর্টস সিটিতে। ৫-২ গোলে এগিয়ে থেকে মাঠ ছেড়ে যখন ধীর গতিতে বের হয়ে যাচ্ছেন, ততক্ষণে চুরমার হয়ে মাদ্রিদের দম্ভ, সাদা সাম্রাজ্যে উড়ছে তেরঙা ভিনদেশী পতাকা।

রিয়াল মাদ্রিদের ধ্বস তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন রাফিনহা। পুরষ্কার বিতরণীতে রাতের জমাট কালো আঁধারে হাজির হয়েছেন সানগ্লাস পড়ে। যেন দিগ্বিজয়ী বীর, যেটা করবেন, সেটাই স্টাইল।

অবশ্য এমনটা ভাবতেই পারেন। অর্থনৈতিক সমস্যা, লিগে হোঁচট খাওয়া বার্সেলোনার এই মৌসুমে সবথেকে বড় প্রাপ্তি একজন রাফিনহা। তিনি গোল করেন, তিনি গোল করান। মাত্র ২৬ ম্যাচে ৩০ গোলে অবদান, ১৯ গোলের সাথে অ্যাসিস্টের সংখ্যা ১১।

এই সংখ্যারই বা সামর্থ্য কি রাফিনহাকে বর্ণনা করে। তিনি ডিফেন্ড করেন, এটাক তৈরি করেন, সতীর্থের জন্য ‘স্পেস ক্রিয়েট’ করেন, আবার এটাকের পরিসমাপ্তি টানেন গোলের মাধ্যমে।

রাফিনহা বার্সেলোনার প্রথম ডিফেন্ডার, শেষ অ্যাটাকার। প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রথম বাধা পায় রাফিনহার পায়ে, বার্সেলোনার এটাকও শেষ সমাপ্তি খোঁজে তার জাদুতেই।

Share via
Copy link