দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট মহলে একটা কথা প্রচলিত— রায়ান রিকেলটনের ব্যাটিংয়ে নাকি হাশিম আমলার ছায়া দেখা যায়। কথাটা কি কেবল গালগল্প, নাকি বাস্তবতাও আছে? করাচির গরম দুপুরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রিকেলটনের ইনিংসটাই যেন সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিল। ওয়ানডে ক্রিকেটের ধৈর্য, নান্দনিক শট নির্বাচন, ধীর স্থির ব্যাটিং গড়ন— সব মিলিয়ে তাঁর এই ইনিংস যেন হাশিম আমলার প্রতিচ্ছবিই ফুটিয়ে তুলল।
সেটাই তো হওয়ার কথা! রিকেলটনের মেন্টরই তো হাশিম আমলা। দক্ষিণ আফ্রিকার এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ছোটবেলা থেকেই আমলাকে অনুসরণ করেছেন, তার কাছ থেকে শিখেছেন, তাঁর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। আর এবারের ইনিংস যেন আমলার টেমপ্লেটেই তৈরি!
ব্যাটিংয়ের ধরন, শটের ধরন, ব্যাটের ফলো থ্রু— সব কিছুই ছিল আমলার মতো পরিমিত ও পরিকল্পিত। ১০৬ বলে ১০৩ রানের এই ইনিংসে ছিল সাতটি চার ও একটি ছক্কা। তবে বাউন্ডারি মারার চেয়ে সিঙ্গেল-ডাবলে বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। বলের গতি ব্যবহার করে, ফিল্ডারদের ফাঁক বের করে, ঠাণ্ডা মাথায় গ্যাপ বের করার খেলাটা আমলার ব্যাটিংয়ের অন্যতম সিগনেচার ছিল। রিকেলটনও সেই পথেই হেঁটেছেন। স্পিনের বিপক্ষেও দারুণ তিনি, আফগান স্পিনারদের সামলেছেন দক্ষ হাতে।
হ্যাঁ, রিকেলটন হয়তো আমলার মতোই অতটা পরিশুদ্ধ বা শৈল্পিক ব্যাটসম্যান নন। তবে তাঁর ব্যাটিংয়ে যে ধৈর্য আর ব্যাকরণসম্মত শটের সমাহার ছিল, তা নি:সন্দেহে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী করে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ঐতিহ্যে আমলার জায়গাটা অনেক বড়। তাঁর মতো একজন ব্যাটসম্যানকে পাওয়া— সেটি যে কোনও দলের জন্যই আশীর্বাদ।
রিকেলটন আদৌ আমলা হবেন কি না – সেটা এখনও বলার সময় আসেনি। তবে করাচির মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা তিনি উড়িয়েছেন। প্রোটিয়াদের জন্য বড় সংগ্রহের ভিত গড়েছেন। এবং, হাশিম আমলার ব্যাটিং দর্শনের যে উত্তরাধিকার, সেটিও যে সঠিক হাতেই আছে, সেটা আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছেন রায়ান রিকেলটন।