জন্টি রোডস একটা সময় বদলে দিয়েছিলেন ক্রিকেটের ফিল্ডিং সংস্কৃতি। সেই বদলের রেশ আজও কাটেনি। ফিল্ডিং শুধু বোলিং বা ব্যাটিংয়ের পরিপূরক কিছু নয়, সেটাও যে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে — জন্টিই প্রথম সেটা বুঝিয়েছিলেন। আর এখন? জন্টির সেই দৌড়ে যোগ দিয়েছেন গ্লেন ফিলিপস! তিনি শুধু ক্যাচ নেন না, ক্যাচগুলোকে যেন অন্য মাত্রায় নিয়ে যান।
একটা সময় ফিলিপসকে চেনা হতো উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু, ধীরে ধীরে তিনি সেই পরিচিতিটা ছাপিয়ে গেছেন। এখন তিনি স্পিনিং অলরাউন্ডার, তবে আরও বড় পরিচয়—ফিল্ডিংয়ে অতিমানব! কীভাবে সম্ভব?
ফিলিপস নিজেই উত্তর দিয়েছেন একবার। বলেছিলেন, পাওয়ার হিটিংয়ে উন্নতি করতে দিনে ৮০০টা পর্যন্ত পুশ-আপ দিতেন! সংখ্যাটা শুনলেই চোখ কপালে উঠতে পারে, কিন্তু তার শরীর দেখলে মনে হবে — হ্যাঁ, সম্ভব! ফিটনেসে এতটাই উন্নতি করেছেন যে, ব্যাটিং-বোলিং ছাড়িয়ে এর আসল সুফলটা দেখা যাচ্ছে ফিল্ডিংয়ে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক মজা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হাতে কোনো বিশেষ আঠা লাগিয়ে মাঠে নামেন কি না?’ ফিলিপস হেসে বললেন, ‘ভালো লাগত যদি বলতে পারতাম, হ্যাঁ, বিশেষ কোনো আঠা ব্যবহার করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাপারটা তা নয়! বরং আমার হাতের তালু অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি ঘামে!’
কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। তাঁর এই কথাটা বিশ্বাস করা কঠিন, কারণ তিনি যা করেন, তা বাস্তবের চেয়েও সিনেমার দৃশ্যের মতো লাগে! বিরাট কোহলির শটটা ছিল গুলির গতির মতো। মুহূর্তের মধ্যে বল পৌঁছে যাচ্ছিল বাউন্ডারির দিকে। কিন্তু ফিলিপস যেন সময়ের সব হিসাব উল্টে দিলেন! মাঠের মধ্যেই যেন জন্টি রোডসের পুরনো সেই উড়ন্ত ছায়া ভেসে উঠল। কোহলির দৃষ্টিও যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না, এমন একটা ক্যাচ নেওয়া যায়?
এটাই প্রথম নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও মোহাম্মদ রিজওয়ানের এমন এক ক্যাচ নিয়েছিলেন ফিলিপস। কোনটি সেরা, তা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। তবে আসল ব্যাপার হলো—অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেওয়া এখন তার স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গেছে! এত নিয়মিত নিলে, সেটাকে আর ‘অবিশ্বাস্য’ বলা যায় কি?
একটা সময় জন্টি রোডসকে বলা হতো, ফিল্ডিং মানেই জন্টি! অনেকেই এসেছেন। রিকি পন্টিংয়েও একালের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং গ্রেট বলা যায়। কিন্তু, গ্লেন ফিলিপস যেন তাদের চেয়েও অন্যরকম! তিনি শুধু ভালো ফিল্ডার নন, ফিল্ডিংকে নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছেন! তবে, একটা জায়গায় রোডসের চেয়ে এখনও পিছিয়ে আছেন ফিলিপস—সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙার দক্ষতায়। যদি সেটাতেও নিখুঁত হয়ে যান, তাহলে হয়তো বিতর্ক শেষ।
ফিলিপস শুধু ক্যাচ নেন না, তিনি ক্যাচের সংজ্ঞা বদলে দেন। ফিল্ডিংয়ে জন্টির ছায়া গায়ে মেখে ফিলিপস যে নতুন ইতিহাস লিখছেন, সেটার শেষ কোথায়?