সেবারই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জিতলো দক্ষিণ আফ্রিকা। চোকার উপাধি পাওয়া দলটাকে বিশ্ব জয় করে এনে দিল দীপ্ত যুবার দল। ২০১৪ সালের সেই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একজন দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটেরই বড় তারকা। সেই বিশ্বকাপেই নিজের আগমনী বার্তা জানিয়েছিলেন এই পেসার। তারপর একে একে অভিষিক্ত হন টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে। এখন তিনি তিন ফরম্যাটেই বিশ্বক্রিকেটের সেরাদের একজন। ডেইল স্টেইনদের যোগ্য উত্তরসূরি।
এখনো নাম না বললেও আপনি নিশ্চই ধরে ফেলেছেন কার কথা বলছি। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তদের তো তাঁর কথা মনে করলে বুকে একটা চিনচিন ব্যাথাও অনুভব করার কথা। বাংলাদেশ ক্রিকেট মাশরাফির নেতৃত্বে তখন এক নতুন পরাশক্তি।
বিশ্বকাপে কোয়াটার ফাইনাল খেলে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে। ভারতকেও ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথম দুই ম্যাচে জয়ও পেলো। সিরিজের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষিক্ত এক পেসার চুরমার করে দিল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। এরপর গত ছয় বছরে তিনি চিড় ধরিয়ে যেকোনো ব্যাটিং লাইন আপে। তিনি ক্যাগিসো রাবাদা।
২০১৪ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স থেকেই প্রথম আলোচনায় আসেন রাবাদ। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। সেই বিশ্বকাপে ১০.২৮ গড়ে ১৪ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তাঁর পুরস্কার হিসেবেই সে বছর নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় রাবাদার।
তারপরের বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাট্রট্রিক সহ ১৬ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। এটিই বিশ্বক্রিকেটে কোনো অভিষিক্ত বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া অভিষেক ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন শুধু ফিদেল অ্যাডওয়ার্ডস। তবে তিনি খরচ করেছিলেন ২২ রান। সেই অভিষেক ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কখনো ফিরে তাকাননি এই বোলার।
এছাড়া রাবাদা তাঁর কার্যকারিতার প্রমাণ দেন ভারতের বিপক্ষে কানপুরে একটি ওয়ানডে ম্যাচে। সেই ম্যাচে ভারতের জয়ের জন্য তখন শেষ ওভারে দরকার ১১ রান। অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স ভরসা রাখেন তরুণ বোলার রাবাদার উপর। ওই ওভারে ধোনির উইকেট সহ দুই উইকেট নিয়ে দলকে জয় এনে দেন এই তরুণ তুর্কি।
২০১৫ সালেই অভিষিক্ত হন টেস্ট ক্রিকেটেও। মাত্র ২০ বছরের এক তরুণকে তিন ফরম্যাটে খেলানো নিয়ে সংশয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে টেস্ট ক্রিকেটে যেনো আরো উজ্জ্বল এই বোলার। ডেইল স্টেইনদের ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন টেস্ট ক্রিকেটে।
ভারতের শুকনো পিচেও নিজের যোগ্যতার পরিচয় দেন এই পেসার। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ঘরের মাঠে নিজের সেরাটা দেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজেই। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে টেস্ট ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন এই পেসার। সেই ম্যাচে ১৪৪ রান দিয়ে ১৩ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্পিড স্টার। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও দারুণ বোলিং করেন টেস্ট সিরিজে। পার্থে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে ৯২ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট।
এরপর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিন ফরম্যাটে রাজত্ব করছেন এই বোলার। নিয়মিত ১৪০-১৫০ এ বোলিং করাকে যেনো ডালভাতে পরিণত করেছেন। এখন অবধি খেলা ৪৫ টেস্টে ২৩.৩৬ বোলিং গড়ে নিয়েছেন ২০২ উইকেট।
এছাড়া ৭৭ ওয়ানডে ও ২৬ টি-টোয়েন্টিতে যথাক্রমে নিয়েছেন ১১৯ ও ৩১ উইকেট। সবমিলিয়ে মাত্র ২৬ বছরে পা দেয়া কাগিসো রাবাদা এখনই নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সেরাদের কাতারে। আরো লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেবেন তাই স্বাভাবিক। হয়তো ক্যারিয়ার শেষে হয়ে উঠবেন সর্বকালের সেরাদের একজন। সেই পথযাত্রা শুভ হোক।
অথচ, শৈশবে ভালবাসতেন রাগবি। বাবা ডাক্তার, মা আইনজীবি। কে ভেবেছিল এই ছেলেটা মাত্র বাইশ বছর বয়সেই বিশ্বের এক নম্বর বোলার হবে!