গ্রেফতার হওয়ার ভয় নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন হাতুরুসিংহে

একজন বন্ধুর গাড়িতে করে মধ্যরাতের ফ্লাইটে চুপচাপ দেশ ছাড়তে হয় তাঁকে। মাথায় হুডি, মুখে মাস্ক, অনেকটা পালিয়েই বাংলাদেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করলেন এই কোচ।

বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে একজন অফিসার এগিয়ে এসে বললেন, ‘স্যার, সরি! আপনাকে চলে যেতে হচ্ছে!’ সেই মুহূর্তে চোখে পানি এসে গিয়েছিল চান্দিকা হাতুরুসিংহের। মনের ভিতরে তখন তীব্র আতঙ্ক—এই বুঝি কেউ থামিয়ে দেয়, এই বুঝি গ্রেফতার করে। অথচ, একসময় এই দেশেই তিনি ছিলেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ।

শৃঙ্খলাভঙ্গের কঠিন অভিযোগ নিয়ে যখন দেশ ছাড়েন, তখন বাংলাদেশে চলছে রাজনৈতিক পালাবদল। একজন খেলোয়াড়ের গায়ে হাত তুলেছেন, এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার সাপেক্ষেই লঙ্কান এই কোচকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে, আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারপরই দেশ ছাড়েন হাতুরুসিংহে। বিসিবি বরাবর উকিল নোটিশও পাঠান।

অস্ট্রেলিয়ার কোড স্পোর্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি আতঙ্কে ছিলাম। জীবন নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। এমনকি ব্যাংকে দাঁড়িয়ে টাকা তুলছিলাম, তখনই টিভিতে আমার বরখাস্ত হওয়ার খবর পাই। ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, স্যার, আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসব। আপনাকে এখন একা রাস্তায় ছাড়া ঠিক হবে না।’

অবস্থা এমন হয়েছিল যে, একজন বন্ধুর গাড়িতে করে মধ্যরাতের ফ্লাইটে চুপচাপ দেশ ছাড়তে হয় তাঁকে। মাথায় হুডি, মুখে মাস্ক, অনেকটা পালিয়েই বাংলাদেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করলেন এই কোচ।

ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন ডাগআউটে নাকি বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে ‘চড়’ মেরেছিলেন হাতুরু। বিসিবি তাঁকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করে, পরে চুক্তিও বাতিল করে দেয়। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও অস্ট্রেলিয়ায় বসে প্রশ্ন তুলেন হাতুরুসিংহে। দাবি করেন, তাঁর সাথে সার্বক্ষণিক একজন গানম্যান থাকত।

হাতুরুর কণ্ঠে তখন কষ্টের সুর, ‘এই অভিযোগ আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে। অক্টোবরের পর থেকে কত প্রস্তাব হারিয়েছি, আমি জানি না। আমার হাতে সুযোগ ছিল, কিন্তু এই এক অভিযোগ আমাকে থামিয়ে দিয়েছে।’

নাসুম এই প্রসঙ্গে কখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। বোর্ড থেকেও হাতুরুকে নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে, ঘটনার সময়ে সেখানে যারা ছিলেন, তাঁদের বক্তব্যের সাপেক্ষেই বিসিবি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাতুরুর সময় বাংলাদেশের আইসিসি ইভেন্টের পারফরম্যান্সও এমন আহামরি কিছু ছিল না, ফলে, বিসিবির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়নি।

Share via
Copy link