নাহিদ রানাকে কেন খেলাচ্ছে না? একের পর এক ম্যাচ হারছে পেশওয়ার জালমি, তবুও নাহিদকে কেন বসিয়ে রেখেছে? এমন প্রশ্নের উদ্রেক ঘটছে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মনে। কেউ কেউ তো রাগ, ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন পেশওয়ারের সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু তাদের দায় কতটুকু?
প্রথমত, দুইজন বিদেশি পেসার খেলছেন পেশওয়ারের একাদশে। এক আলজারি জোসেফ, দুই লুক উড। মূলত নাহিদ রানের সার্ভিস শুরু থেকে মিলবে না বলেই লুক উডের সংযুক্তি। সেই তিনি প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই পারফরম করছেন। প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেট এনে দিচ্ছেন।
আলজারি জোসেফের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য। তিনিও পারফরফম করছেন। উইকেট তুলে নিচ্ছেন। এই যখন পরিস্থিতি তখন নাহিদ রানাকে একাদশে সংযুক্ত করার তো নেই কোন যুক্তি। একজন খেলোয়াড় খারাপ করলেই না তবে তাকে একাদশ থেকে বাদ দেওয়া যায়। খারাপ না করলে বাদ তো আর দেওয়া যায় না।
রইল বাকি পেশওয়ারের পরাজয়ের ফিরিস্তি। সেটার কারণ তো কোনভাবেই বোলাররা নন। বরং ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তাদেরকে হারতে হচ্ছে। সুতরাং নাহিদ রানাকে একাদশে সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তিনি সুযোগ পেতে পারতেন যদি পাকিস্তান সুপার লিগে প্রথম থেকেই থাকতে পারতেন।
পেশওয়ার জালমির মূল বোলার হওয়ার কথা ছিল নাহিদ রানার। তাকে যখন দলে নিয়েছিল দলটি- তখন তাদের উচ্ছ্বাসেই প্রকাশ পেয়েছিল সেটি। তবে মাত্র একটি টেস্ট খেলার জন্যে নাহিদকে শুরু থেকেই ছাড়েনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট নাহিদ না খেললেও ছিল না তেমন কোন ক্ষতি।
তবুও প্রায় প্রতিবার এভাবেই বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রমাণের সুযোগগুলো হারাচ্ছেন। বিদেশি টুর্নামেন্টগুলোতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কদর ঠিক এ কারণেই কম। রিশাদ হোসেনদের বিকল্প হিসেবে বিগ ব্যাশে অন্য কেউ সুযোগ পাবে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশিদের প্রায় এড়িয়ে যাবে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। কাউন্টি ক্রিকেটে ডাক পেয়েও হাসান মাহমুদদের থেকে যেতে হবে।
প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রতিটা দলের চাহিদা পুরো মৌসুম জুড়ে খেলোয়াড়দের উপস্থিতি। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এতে বড় অনীহা। তারা বরং জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট খেলাকেই প্রাধান্য দেন। অগুরুত্বপূর্ণ সব সিরিজের আগে সামনে নিয়ে আসেন দেশপ্রেমের সেন্টিমেন্ট। কিন্তু বৃহৎ চিত্রে যে দেশ প্রেমের এই পলকা সেন্টিমেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেটেই ক্ষতি করছে- সেটা যেন দেখেও না দেখার ভান।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উন্নতি নেই। মিডিওকার খেলোয়াড় হিসেবেই তাদের ক্যারিয়ার কেটে যায়। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড সর্বদাই বর্তমানে বাঁচে। একটা খেলোয়াড়ের সামগ্রিক উন্নতির চাইতে মুখ্য হয়ে যায় একটা অগুরুত্বপূর্ণ সিরিজ জয়।
অথচ কাউন্টি ক্রিকেটে পুরো একটা মৌসুম কাটানো হাসান মাহমুদ হয়ে উঠতে পারতেন দারুণ রসদ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেললে যতটা না ফায়দা হয় নাহিদ রানাদের, পিএসএল পারফরম করা নাহিদ রানা ভারতের বিপক্ষে হতে পারতেন বাংলাদেশের লাভের কারণ।
তাইতো দোষ যদি দিতেই হয়, তবে সেই দোষের সমস্তটুকু বিসিবির প্রাপ্য। বিসিবির থিংক ট্যাংকদের অদূরদর্শিতার ফলাফল হিসেবে নাহিদ রানারা হয়ে ওঠেন বেঞ্চ ওয়ার্মার। কেউ কেউ তো বাংলাদেশের নাম শুনলেই বলে ওঠে, ‘এই নেক্সট’।