শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ার্ন-শোয়েবের দ্বৈরথ!

মিসবাহ উল হক, রশিদ লতিফসহ মোট সাতজন ব্যাটারকে তিনি একাই পাঠিয়েছিলেন প্যাভিলিয়নে। সে কারণেই তো তার নাম উঠেছে পি সারা ওভালের অনর্স বোর্ডে। শোয়েব আখতার অবশ্য টেস্টে তৃতীয় ইনিংসে ছেড়ে কথা বলেননি। আদ্রতায় ড্যাম হয়ে যাওয়া উইকেটেও তিনি তুলেছিলেন গতির ঝড়।

স্টেডিয়ামটা শ্রীলঙ্কার। কিন্তু সেই স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তানের মধ্যকার। এমনকি পি সারা ওভালের অনর্স বোর্ডে নাম আছে দুই কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ও শোয়েব আখতারের। কিন্তু কেন এই দুই দলকে শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ খেলতে হয়েছিল?

ঘটনাটা সেই ২০০২ সালের। আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগের। অস্ট্রেলিয়ার সাথে ঘরের মাটিতেই সিরিজ খেলার কথা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু তা আর শেষ অবধি হয়ে ওঠেনি।

২০০২ সালের মাঝামাঝি সময়ে করাচিতে হয় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঝড়ে যায় তাজাতাজা প্রাণ। সেই ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয় ক্রিকেট মহলেও। নিউজিল্যান্ড দল বাতিল করে পাকিস্তান সফর। এরপরই মূলত পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে আসার কথা ছিল অজিদের।

পাকিস্তান চায়নি নিজেদের ক্রিকেট যাত্রার ব্যাঘাত ঘটুক। তাই তো তারা শরণাপন্ন হয় পার্শ্ববর্তী দেশের। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আয়োজিত হয় দুই ভিন্ন দেশে। কলম্বোর পি সারা ওভালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ম্যাচ। বাকি দু’টো আয়োজিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি পাকিস্তান। প্রথম টেস্ট ম্যাচে তো শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে খাবি খেয়েছেন ইমরান নাজির, ইউনুস খানরা। পাকিস্তানের সামনে ৪৬৭ রানের পাহাড় দাঁড়া করিয়েছিল অজিরা। রিকি পন্টিং তো একহাত দেখে নিয়েছিলেন পাকিস্তানি বোলারদের।

একাই করেন ১৪১ রান। এছাড়াও জাস্টিন ল্যাঙ্গার, মার্ক ওয়াহ, ডেমিয়ান মার্টিন ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তুলে নিয়েছিলেন হাফসেঞ্চুরি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে স্রেফ ২৭৯ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। যার সিংহভাগ কৃতীত্ব ওয়ার্ন নামক সেই ঘূর্ণিযাদুকরের।

মিসবাহ উল হক, রশিদ লতিফসহ মোট সাতজন ব্যাটারকে তিনি একাই পাঠিয়েছিলেন প্যাভিলিয়নে। সে কারণেই তো তার নাম উঠেছে পি সারা ওভালের অনর্স বোর্ডে। শোয়েব আখতার অবশ্য টেস্টে তৃতীয় ইনিংসে ছেড়ে কথা বলেননি। আদ্রতায় ড্যাম হয়ে যাওয়া উইকেটেও তিনি তুলেছিলেন গতির ঝড়।

স্রেফ আট ওভার বল করে পাঁচটি উইকেট তুলে নেন শোয়েব আখতার। সাকলাইন মুশতাক সঙ্গ দেন তাকে। দুইজনে মিলে নয় উইকেট তুলে নেন। তাতে করে মাত্র ১২৭ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ অবধি ম্যাচ ভাগ্য আর পাকিস্তানের হয়নি। প্রচণ্ড চেষ্টা চালিয়েও ৪১ রানে পরাজিত হয় ওয়াকার ইউনুসের পাকিস্তান।

সেবার দ্বিতীয় দফা কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজিত হয়েছিল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। এর আগে নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও পাকিস্তানকে সিরিজ খেলতে হয়েছিল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে।

তারপর রীতিমত সেটা পাকিস্তানের জন্যে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়। কেননা নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তানে ক্রিকেট তো একটা পর্যায়ে নির্বাসনে চলে যায়। এমনকি বিপদের মুখে যেই শ্রীলঙ্কা এগিয়ে দিয়েছিল সহয়তার হাত, সেই লঙ্কান ক্রিকেটাররাও পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন।

Share via
Copy link