টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা একাদশ

দুই বছরের লম্বা পথচলা। কঠিন কন্ডিশন, বদলে যাওয়া উইকেট, দেশের মাটিতে জয়ের রথ আর বিদেশে টিকে থাকার লড়াই—সব মিলিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩–২৫ চক্রটি ছিল রোমাঞ্চে ভরা। চলুন দেখা নেওয়া যাক, এই চক্রে সেরা একাদশে রয়েছেন কারা?

দুই বছরের লম্বা পথচলা। কঠিন কন্ডিশন, বদলে যাওয়া উইকেট, দেশের মাটিতে জয়ের রথ আর বিদেশে টিকে থাকার লড়াই—সব মিলিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩–২৫ চক্রটি ছিল রোমাঞ্চে ভরা। চলুন দেখা নেওয়া যাক, এই চক্রে সেরা একাদশে রয়েছেন কারা?

  • এইডেন মার্করাম

৭০৮ রান, গড় ৩৭.২৬, ২ সেঞ্চুরি, ৩ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ১৩৬! এই চক্রে সম্ভবত সেরা দুটি ইনিংসই এসেছে মার্করামের ব্যাটে। কেপটাউনের ভয়ংকর উইকেটে তৃতীয় ইনিংসে ১০৩ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস এবং ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শিরোপা জেতানো চতুর্থ ইনিংসের শতক—এই দুটি ইনিংসই দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

  • যশস্বী জয়সওয়াল

১৭৯৮ রান, গড় ৫২.৮৮, ৪ সেঞ্চুরি, ১০ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ অপরাজিত ২১৪। ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভে পরিণত হওয়া এই তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার ইংল্যান্ড সিরিজে ৭১২ রান করেছিলেন, যা একটি সিরিজে ভারতের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

  • জো রুট

১৯৬৮ রান, গড় ৫৪.৬৬, ৭ সেঞ্চুরি, ৭ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ২৬২। ইংল্যান্ডের দুঃস্বপ্নের মতো সময়েও জো রুট ছিলেন একমাত্র আলো। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চক্রের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন তিনি।

  • টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক)

সেরা একাদশের অধিনায়কের ভূমিকায় থাকছেন টেম্বা বাভুমা। ব্যাট হাতেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। ৭১১ রান, গড় ৫৯.২৫, ২ সেঞ্চুরি, ৫ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ১১৩। লর্ডসের ফাইনালে তাঁর ৬৬ রানের ইনিংসটি ছিল ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা। অধিনায়ক হিসেবে টানা ১০ টেস্টে অপরাজিত থাকার রেকর্ড এখন তাঁর, যার ৯টিতেই এসেছে জয়।

  • কমিন্দু মেন্ডিস

১১২৩ রান, গড় ৬২.৩৮, ৫ সেঞ্চুরি, ৩ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৮২। মাত্র ১৩ ইনিংসে খেলে পাঁচটি শতকে পৌঁছে ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কমিন্দু মেন্ডিস। ৭৫ বছরে তিনিই সবচেয়ে কম বল খেলে টেস্টে ১০০০ রানে পৌঁছেছেন। এছাড়া, তিনি এশিয়ার দ্রুততম হাজার রান করা ব্যাটারও।

  • রবীন্দ্র জাদেজা

৬৬৪ রান, গড় ২২.৮০, ১ সেঞ্চুরি, ৪ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ১১২। সেই সঙ্গে নিয়েছেন ৫৫ উইকেট, বোলিং গড় ২৩.৪৩। টেস্টে নিজের অলরাউন্ড সামর্থ্যের নিখুঁত প্রদর্শনী দিয়েছেন জাদেজা। তাই তো স্কোয়াডে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে তিনিই থাকছেন।

  • অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক)

১০২০ রান, গড় ৩৫.১৭, ১ সেঞ্চুরি, ৫ হাফসেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ১৫৬। উইকেটের পেছনে ৮২ ক্যাচ, ১৬ স্ট্যাম্পিং। ইনিংসপ্রতি ২.৫১২ ডিসমিসালের হারই প্রমাণ করে, কতটা উন্নতি করেছেন অ্যালেক্স ক্যারি। ব্যাট হাতে ক্রাইস্টচার্চে অপরাজিত ৯৮ রানের ইনিংসটি ছিল অন্যতম সেরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৫৬ রানের ইনিংস দিয়ে এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক হিসেবে অ্যাডাম গিলক্রিস্টকেও ছাড়িয়ে যান তিনি।

  • প্যাট কামিন্স

বল হাতে ৮০ উইকেট, গড় ২৩.৪৮, সেরা ৬/২৮, ৫ উইকেট এক ইনিংসে: ৬ বার। ব্যাটে–বলে ও নেতৃত্বে কামিন্স ছিলেন অনন্য। চক্রের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি, সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং ইনিংস—অ্যাশেজে ৪৪*, ক্রাইস্টচার্চে ৩২*, মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে ৪৯ ও ৪১। একাদশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবেই বিবেচিত হবেন প্যাট কামিন্স।

  • কাগিসো রাবাদা

৫৬ উইকেট, গড় ১৮.৭৩, সেরা বোলিং ৬/৪৬, এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ৪ বার। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ফাইনালের মঞ্চেও লড়াই করেছেন নীরবে। দুই ইনিংসে নিয়েছেন মোট নয় উইকেট।

  • ম্যাট হেনরি

৪৮ উইকেট, গড় ১৮.৫৮, সেরা বোলিং ফিগার ৭/৬৭, ৫ উইকেট এক ইনিংসে: ৩ বার। টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে প্রমাণ করেছেন হেনরি। পুরো ২০২৪ জুড়ে ৪৮ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের শীর্ষ বোলার ছিলেন তিনিই।

  • জসপ্রিত বুমরাহ

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। এবারের টেস্ট চক্রে নিয়েছেন ৭৭ উইকেট, গড় ১৫.০৯, সেরা বোলিং ৬/৪৫, ৫ উইকেট এক ইনিংসে: ৫ বার। তাঁর স্ট্রাইক রেটও অবিশ্বাস্য—প্রতি ৩০.১ বলেই উইকেট। টেস্টে ২০০ উইকেটে পৌঁছানো একমাত্র বোলার যিনি এটা করেছেন ২০-এর নিচে গড়ে!

একটা দীর্ঘ পথ শেষ হয়েছে। যেখানে ব্যাটে–বলে লড়াই ছিল মর্যাদার। সেরা ছিল অনেকেই, তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যাদের পারফরম্যান্স দলের জন্য কার্যকর ছিল, এই একাদশ তাদের নিয়েই সাজানো!

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link