ফ্যামিলি নাকি বিজনেস? নাকি ক্রিকেট? গল ফোর্টের রাতের ঝিম ধরা আলোয় মুখে রহস্যজড়ানো এক হাসি রেখে বললেন, ‘ফ্যামিলি, অফকোর্স।’
তবে সে হাসির নিচে চাপা থাকা কিছু লুকোছাপা ছিল, যেগুলোর ব্যাখ্যা সহজ নয়। তাহলে কি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার গল টেস্টই তাঁকে টেনে এনেছে এখানে? এমন নয় যে হঠাৎ ছুটে আসার মানুষ তিনি। নামটা যে কিরণ কুমার গ্রান্ধী — যিনি ভারতীয় বাণিজ্যের এক উচ্চস্তরের ধ্রুবতারা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে যাঁর পরিচয় ‘নিলামঘরের পিকাসো’।
গ্রান্ধী সাহেবের আরেক পরিচয়—দিল্লী ক্যাপিটালসের চেয়ারম্যান। নিলামে যাঁর প্রতিটা বিড পরিকল্পিত, প্রতিটা প্লেয়ার পছন্দ যেন জ্যামিতিক ছক। ক্রিকেটের বাণিজ্য-দর্শনও তিনি বোঝেন, বুঝেন ক্রিকেটও।
যখন গল ফোর্টের একটা পুরনো ক্যাফেতে বসে বললেন, বাংলাদেশ শুড গো ফর আ উইন!’ তখন চোখ চকচক করছে তাঁর।
মনে হল, কথাটা শুধু কাব্যিক না, কৌশলীও। বোঝা গেল, তিনি ক্রিকেটটা অন্য অনেকেরে চেয়ে বেশি গুলে খান। এই কথার পরই প্রশ্ন জাগে—এত দূর পাড়ি দিয়ে এসেছেন কেন? মুস্তাফিজুর রহমানকে তিনি চিনেছিলেন বলেই কিনেছিলেন, দু’দুবার দিল্লীর হয়ে খেলিয়েছেন। এবার তাহলে কার দিকে নজর রাখছেন?
গলে কি তবে তিনি এসেছেন অন্য কোনো বাংলাদেশিকে দেখতে? বাংলাদেশের টেস্ট দলে এমন কে আছেন, যিনি টি-টোয়েন্টিতেও পারদর্শী? হয়তো কোনো নতুন বাংলাদেশি প্রতিভা যিনি পেস অ্যান্ড বাউন্স দিয়ে ঝড় তুলতে পারেন। নামটা কি তবে নাহিদ রানা?
বাংলাদেশি ক্রিকেটের নতুন ঝড়ের নাম নাহিদ। গতি তাঁর হাতিয়ার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) আবির্ভাবেই কাঁপিয়েছেন ব্যাটারদের, জাতীয় দলে ঢোকার আগেই পরিচিতি হয়ে গেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ায়।
বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের বিপক্ষে দাপট দেখানো এই পেসারকে ইতিমধ্যে ডেকে নিয়েছে পিএসএলের পেশোয়ার জালমি। সেটাও টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক অভিষেকের আগেই। নাহিদ রানার নামটা বৈশ্বিক ক্রিকেটের বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে, মাত্র কিছুদিন হল।
আর ঠিক এমন সময় গল টেস্ট দেখতে এসে নিলামঘরের পিকাসো যদি গলির ভেতরে ঘুরে বেড়ান, তাহলে প্রশ্নটা তো ওঠেই — খেলা দেখছেন, নাকি খেলোয়াড়?
বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের প্রতি আইপিএল দলগুলোর আগ্রহ বরাবরই সীমিত। মুস্তাফিজ দিল্লী কিংবা চেন্নাইয়ের হয়ে যতই ভালো করুন, পরের মৌসুমেই থাকেন নিলামের তালিকায়—অবিক্রিত। এ অনীহা কি সত্যিই খেলোয়াড়দের দক্ষতার ঘাটতির জন্য? নাকি, অন্য কোনো কূটনীতি?
এই প্রসঙ্গ উঠতেই কিরণ কুমার হালকা মাথা ঝাঁকালেন। বললেন, ‘ইস্যুটা আসলে বিসিবির এনওসি।’ সোজা কথা—বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি খেলার পথ ছেড়ে দেয়, তাহলে পথিকের অভাব হবে না।
তাই প্রশ্নটা উঠবেই—কবে বিসিবি শেকল খুলবে? আর যদি খুলে দেয়, তবে হয়তো ভবিষ্যতের কোনো আইপিএল ম্যাচে, দিল্লীর হয়ে বল করতে দেখা যাবে সেই নাহিদ রানাকেই।