পরিকল্পনাহীনতার পরিত্রাণ আবশ্যক

বাংলাদেশের ওয়ানডে পরিসংখ্যান ঘাটলাম। সেখানে দেখলাম আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের ওয়ানডে ইতিহাসে ১৪ বার ৩০০-এর ওপর রান করতে পারছি। এর মধ্যে চেজ করতে যেয়ে তিনবার! বর্তমান সময়ে যেখানে ওয়ানডেতে নরমালি ৩০০-এর ওপর রান করার কথা সেখানে আমরা কালে-ভদ্রে ৩০০ এর মুখ দেখছি।

আসন্ন ২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতে স্পোর্টিং পিচ হবে, ফ্লাট উইকেটও থাকবে সেখানে প্রথমে ব্যাট করলে ৩২০+ করতে হবে রান তাড়া করতে নামলে ৩৫০ এর আশেপাশেও আমরা টার্গেট পেতে পারি! এই মাইন্ডসেট অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের বর্তমান অবস্থান আসলে কোথায়?

সম্ভবত আমরা শেষ ১১ টা সিরিজে ঘরের মাঠে ১০ টাই জিতছি। এখানে ৩০০-এর ওপর স্কোর আছে কয়টা? আমাদের মিরপুরের এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজের পর সিরিজ জিতলেও এভাবে বৈশ্বিক বড় টুর্নামেন্টে সফল হবো কি? ২৫০-৭০ রান টার্গেট মাথায় নিয়ে আমরা নামি যেটা এক দশক আগের খেলায় উইনিং স্কোর ধরা হইতো।

অবশ্য পিচের দোষ তো আছেই। এটা নিয়ে আদৌ বিসিবির কোনো চিন্তা আছে কিনা সন্দেহ! স্পোর্টিং উইকেট নিয়ে এদের কোনো মাথা ব্যাথা নাই। স্লো উইকেট বানাবে আর ম্যাচ জিতবে এটাই চিন্তা। মিরপুরের উইকেট কেমন হবে এটা এতো বছর খেলার পরেও তারা কেউ জানে না, তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ফ্লাট উইকেট এরপর উইকেট গেলো স্লো হয়ে।

ফিনিশার প্রসঙ্গে – সাত নম্বরে আমাদের একজনও স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান কি আছে? যে ২০ বলে ৩৫-৪০ রান করতে পারবে। ফিনিশার হিসেবে আগে বানাতে চেয়েছে মোসাদ্দেককে এখন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আর আফিফ হোসেন ধ্রুবকে আনছে! তাঁরা ফিনিশার?

জেনুইন আমাদের সাতে খেলার মতো হাতে গুনা ২-১ জন ছাড়া কেউই নাই। তাও এর মধ্যে সাব্বির রহমান নিজের ক্যারিয়ার হাতে ধরে শেষে করছে, যে কিনা এই জায়গায় বেস্ট হইতে পারতো। আর এখন আছে শামিম পাটোয়ারী। এছাড়া শেষ দিকে দ্রুত ক্যামিও খেলবে এমন অ্যাবিলিটি বাস্তবে আছে কয়জনের মধ্যে? শেখ মেহেদী হাসান আছে তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনার কারণে সম্ভবত এখন ওয়ানডেতে আনবে না। তাহলে ৩০০-৩২০+ রান আমরা কিভাবে আশা করবো?

আমাদের মূল দুইটা সমস্যা হচ্ছে পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারানো আর ডেথ ওভারে ফিনিশারের অভাব। ফিনিশারের অভাবটা আজকের না, তাও বিসিবি যাকে তাকে জোর করে দেখলাম ফিনিশার বানাতে ব্যস্ত। আফিফকে আমি পাঁচে খেলানোর পক্ষে আর মোসাদ্দেককে জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগ দিক ব্যর্থ হইলে সেখানে আফিফকে রাখুক সেটাও একটা লং টাইমের জন্য যেটা মিঠুন লিটনদের দেওয়া হয়েছে এবং মিঠুনকে আপাতত দীর্ঘ সময়ের জন্য স্কোয়াডের বাইরে রাখা দরকার। পাঁচে বিকল্প হিসেবে লিটন দাশই আমার পছন্দের।

আরেকটা ব্যাপার, নাইম শেখ শেষ দিন তার ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলছে। ধরতে গেলে প্রথম কারণ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হইলেও ব্যাটিং করা হয় নাই। মোহাম্মদ নাইম শেখকে নেওয়ার আগে ফেসবুক ভর্তি পোস্ট দেখলাম ওরে নেওয়ার ব্যাপারে! আর ব্যর্থ হওয়ার পর দেখি ‘লিটনই ভালো, সৌম্য কোথায়’ রব উঠেছে। সেই নাঈম আবার খলনায়ক।

এখন একটা নতুন খেলোয়াড়কে যদি ১০-১২ ম্যাচ নিজেরে প্রমাণের সুযোগ না দেন তাহলে লিটন-সৌম্য-মিথুনদেরই দেখা লাগবে নতুন কেউ আর পাইপলাইন থেকে আসবে না। আমাদের যে খুব বেশি বিকল্প আছে তাও তো না।

অন্তত জিম্বাবুয়ে এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও নাইমকে সুযোগ দেওয়া উচিত। আর ওকে সাহস দেওয়াও উচিত যে পর্যাপ্ত সুযোগই পাবে নার্ভাস হওয়ার কিছু নাই। তামিমও কালকে ম্যাচ শেষে এমনই ইঙ্গিত দিলো। আর লিটন-সৌম্যরা যেই সুযোগ পাইছে সেটা না হোক ১০-১২ ম্যাচ সুযোগ দেওয়ার পর দেখা যাক ওর থেকে আউটপুট কি।

এরপর ওর অ্যা বিলিটি নিয়ে কথা বলেন বা বিকল্প হিসেবে যে ফর্মে থাকবে তাকে আনুক৷ লিটন ফ্যান, সৌম্য ফ্যান এসবের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যান সবাই। যে ভালো খেলবে সে আগে পরে সুযোগ অবশ্যই পাবে।

একটা জিনিস খেয়াল করি বাংলাদেশের মাটিতে যেই দলই খেলতে আসুক অনভিজ্ঞ নতুন কেউ নিজের নামের পাশে বড় অর্জন নিয়াই বাড়ি ফিরে! দুশমান্তা চামিরা ছাড়া আইজাজ চিমা, স্টুয়ার্ট বিনির কথাই মনে পড়ছে তবে আরো বেশ কিছু আছে। তবে চামিরা অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখাইছে। সব মিলিয়ে আসলে সবার আগে আমাদের ডেথ ওভারে সমস্যাটার সমাধান করতে হবে।

২৫০-৭০ এর মাইন্ডসেটে আমরা বড় টুর্নামেন্টে চরম ব্যর্থতা দেখাবো, আগেও এর নজীর আছে। যেহেতু ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য এখনো সময় আছে নতুনদেরকে তাঁদের আদর্শ জায়গা পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়ে দেখুক বিসিবি। মিরপুরে ডেকে সিরিজ জয়, ম্যাচ জয়ের চেয়ে দলের পারফরম্যান্স, ফিনিশিং সব দিকে উন্নতি করাটা জরুরী। তাহলেই বড় টুর্নামেন্ট এবং দেশের বাইরে আমাদের সফলতা আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link