আমি যেভাবেই হোক ২০১১ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে চাচ্ছিলাম। এর আগে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও আমি ছিলাম। ইনজুরির কারণে খেলতে পারিনি তবে আমি দলের সাথেই ছিলাম। আমি একটা ধারণা পেয়েছিলাম যে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দটা ঠিক কতখানি।
বিশ্বকাপের দুইমাস আগেও আমি জানতাম না আমি দলে জায়গা করে নিতে পারব কিনা। আমি যখন জায়গা পেলাম বেশ একটা স্বস্তি হয়েছিল। তবে আমি জানতাম এত মানুষের প্রত্যাশার চাপও আমাদের সামলাতে হবে।
আমরা যত ঢাকায় আমাদের প্রথম ম্যাচের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম উত্তেজনা তত বাড়ছিল। আমি যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি চাপ ছিল। আমরা যেখানে যাচ্ছিলাম আমাদের শুধু একটা কথাই বলা হচ্ছিল। বিশ্বকাপটা জিতে আসো।
আস্তে আস্তে সেটা আমাদের মস্তিস্কেও বাসা বাঁধতে শুরু করে। আমরা ঠিক করি যে বাইরের আর কোনো কথায় আমরা কান দিব না। আমরা শুধু নিজেদের কাজটা করে যেতে চাইছিলাম তখন। আমি পত্রিকা পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমাদের দলের প্রায় সবাই বন্ধ করে দিয়েছিল। টুর্নামেন্ট যত এগোচ্ছিল আমরা তত এর সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলাম। আমরাও জানতাম আমরা ওই ট্রফিটা জিততে চাই।
ঘরের মাঠে খেলা হবার পাশাপাশি আরেকটা বড় চাপ ছিল। সেটা হচ্ছে ওটাই শচীন টেন্ডুলকারের শেষ বিশ্বকাপ ছিল। আমাদের দলের সবাই ছোট থেকে এই মানুষটাকে দেখে বড় হয়েছি।
তাই আমরা যার যার সাধ্যমত চেষ্টা করছিলাম যাতে তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা পূরণ হয়। এভাবেই আমরা করতে পেরেছিলাম। বিশ্বকাপের সেই ফাইনাল এবং মাহি ভাইয়ের সেই ছয়ের পরের মূহুর্তগুলো ভাষায় প্রকাশ করাটা কঠিন।
গোটা দেশ শচীন পাজির সাথে উৎসবে মেতেছিল। আমরাও তাঁকে কাঁধে নিয়ে উদযাপন করছিলাম। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় এক রাত। সেই ট্রফিটা হাতে নেয়া, আমাদের কিংবদন্তিকে কাঁধে নেয়ার রাত। যেই রাত পুরো দেশ উদযাপন করেছিল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা একটি ওভার থেকে আমি যা শিখেছিলাম তা হাজারটা বল করেও শেখা সম্ভব না। এরকম একটা ম্যাচে মাহি ভাই আমার হাতে বল তুলে দিয়েছিল। সে শুধু বলেছিল পরিকল্পনা মত বল করে যেতে। প্রতিটা বলে অসম্ভব চাপ বোধ করছিলাম। দারুণ একটা ওভার ছিল সেটা। আমি দুইটা ছয় খাই, পরে শেষ বলে একটা উইকেটও পাই। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত টাই হয়েছিল।
বারবার আমার মনে হচ্ছে আমরা ম্যাচটা হারতে যাচ্ছি আমার ওভারটার জন্য। তবে দলের বাকিরা আমাকে সাহস দিচ্ছিল। তবে সেদিন রাতে ড্রেসিং রুমে এসে আমার মনে হয়েছিল আমি অনেক বেশি ভাবছিলাম। ফলে আমি দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছিলাম। সেটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল। এরপর থেকে কঠিনতম সময়েও আমি সহজ ভাবে খেলার চেষ্টা করেছি।
____________________
মহেন্দ্র সিং ধোনির সেই ছয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত। সেই ছয়ের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতার রাস্তাঘাটে। আর দলের সদস্যদের মধ্যে সেই উত্তেজনা নিশ্চই আকাশ ছুঁয়েছিল। একটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।
সেটি জয় করে এসেছিল মাহির ভারত। সেই দলে ছিলেন শচীনের মত গ্রেট ক্রিকেটারও। আবার ছিলেন পিযুষ চাওলার মত এক তরুণ তুর্কিও। সেই সময় একটা বিশ্বকাপ জেতা পিযুষের জন্য স্বপ্নের চেয়ে অনেক বেশি কিছু ছিল। সেই সব দিনের কথা বলেছেন ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে।