ভয়াবহ এক রেল দুর্ঘটনার পর প্রায় আট বছর কোমায় কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত থেমে গেল আকশু ফার্নান্দো জীবনসংগ্রাম। ক্রিকেট যে শুধু ব্যাট বলের লড়াই নয়, কখনো কখনো তা জীবনের সঙ্গেও এক নির্মম সংঘর্ষ, আকশু ফার্নান্দোর গল্প তারই নিঃশব্দ প্রমাণ। শ্রীলঙ্কার সাবেক অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটার আকশু ফার্নান্দো মঙ্গলবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর।
২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। মাউন্ট লাভিনিয়া সমুদ্রসৈকতের কাছে একটি অনিরাপদ রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের নিচে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন আকশু। সেদিন তিনি দলের রানিং সেশন শেষ করে ফিরছিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেই দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তাঁর স্বাভাবিক জীবন।
গুরুতর মাথার আঘাত, শরীরের একাধিক হাড় ভাঙা, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় দীর্ঘ, নীরব এক লড়াই। বছরের পর বছর তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন, আর পাশে থেকে অবিচলভাবে অপেক্ষা করেছে তাঁর পরিবার।

দুর্ঘটনার আগে আকশু ফার্নান্দোকে শ্রীলঙ্কার অন্যতম উজ্জ্বল তরুণ প্রতিভা হিসেবে ধরা হতো। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে তিনি দেশের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ম্যাচে ৫২ রান করে তিনি শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।
কলম্বোর সেন্ট পিটার্স কলেজের ছাত্র আকশুর স্কুল ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল ঈর্ষণীয়। অনূর্ধ্ব ১৩, অনূর্ধ্ব ১৫ ও অনূর্ধ্ব ১৭ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি, আর অনূর্ধ্ব ১৯ দলে ছিলেন সহ-অধিনায়ক। নেতৃত্বগুণ ও মাঠের নৈপুণ্য তাঁকে নিয়ে যায় শ্রীলঙ্কার একাধিক ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে।
দুর্ঘটনার মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই খেলেছিলেন তাঁর শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুরস স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে সেই ম্যাচে অপরাজিত ১০২ রান করেছিলেন আকশু। যেন ভবিষ্যতের দিকে ছুড়ে দেওয়া এক জোরালো বার্তা।

আজ সেই ভবিষ্যৎ আর বাস্তবায়িত হলো না। আট বছরের শারীরিক যন্ত্রণা আর মানসিক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আকশু ফার্নান্দোর মৃত্যু শুধু একটি জীবনের ইতি নয়, বরং এক অসমাপ্ত ক্রিকেট স্বপ্নেরও পরিসমাপ্তি। যে স্বপ্নকে ঘিরে একদিন অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন, সে একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।










