ইউরোপিয়ান তারুণ্যের কেতন উড়ে

ইউরোপের সেরা তারকারদের সবাই আছেন এবারে ইউরোতে। কিন্তু ইউরো নতুন তারকাদের আগমনী বার্তা জানানোর মঞ্চও। ২০১২ সালে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন, ’১৬-তে রেনাতো সানচেজরা এই ইউরোকেই বেছে নিয়েছিলেন আর্বিভাবের মঞ্চকে।

কিলিয়ান এমবাপ্পে ইতোমধ্যেই মহাতারকা হয়ে ওঠায় তাঁকে রাখা হয়নি এই তালিকায়। আরেকজন যিনি হতে হতে পারতেন এবারের ইউরোয় পোস্টারবয় সেই আর্লিং হ্যালান্ডের নরওয়ে মূলপর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি। ইউরোর তারুণ্যের জয়গান কিন্তু তাতে কমছে নাহ। বরং তাদের না থাকার সুযোগ নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষে কেউ হয়ে যেতে পারেন মহাতারকা।

ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট পড়েছেন মধুর এক সমস্যায়! উঠতি তারকাদের ছড়াছড়ি যে তার দলে। সদ্যই চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছেন ম্যাসন মাউন্ট। দলের পাশাপাশি পুরো মৌসুমজুড়েই খেলেছেন চোখজুড়ানো ফুটবল, নিজে ৬ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন সমানসংখ্যক। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলে তার জায়গা পাকা নয়!

কারণটা ফিল ফোডেন। পেপ গার্দিওয়া স্বয়ং যাকে মেসির পরে দেখা সেরা প্রতিভাবান খেলোয়াড় বলেছেন। তার অধীনেই দিন দিন ধারালো হচ্ছেন ফোডেন। এ দুজনের কারণেই হয়তো একাদশে জায়গা হারাতে হবে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে অনবদ্য খেলা মাত্র ১৭ বছর বয়সি জুড বেলিংহাম আর আর্সেনালের উইঙ্গার বুকায়ো সাকা। কিন্তু সু্যোগ পেলে আলো ছড়ানোর ইঙ্গিত তারা দিয়ে রেখেছেন আগেই।

গত কয়েক মৌসুম ধরেই সেরা তরুণ ডিফেন্ডারের খেতাবটা নিজের করে নিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ম্যাথিয়াস ডি লাইট। জুভেন্টাসে যোগ দেবার পর কিছুটা ছন্দহারা হলেও নিজেকে সামলে নিয়েছেন দ্রুতই। ভ্যান ডাইকের অনুপস্থিতিতে ডাচদের রক্ষণদূর্গ সামলানোর মূল দায়িত্বটা নিতে হবে ডি লাইটকেই। মাঝমাঠে আলো ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে ডাচ মিডফিল্ডার রায়ান গ্রাভেনবার্চেরও।

হতাশাপূর্ণ বার্সেলোনার এ মৌসুম শেষে একমাত্র পাওনা পেদ্রি। ১৭ বছর বয়সেই মূল দলে জায়গা করে নিয়েছেন, নিজের প্রথম মৌসুমেই খেলে ফেলেছেন ৫০টির অধিক ম্যাচ। স্পেনের হয়েও অভিষেক হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। ড্যানি ওলমোর কারণে হয়তো মূল একাদশে নামবেন নাহ তবে বদলি হিসেবে নেমে ম্যাচের রঙ পাল্টে দেবার সব ক্ষমতাই আছে তার মাঝে।

দুই মৌসুম আগে রেকর্ড গড়ে জোয়াও ফেলিক্সকে দলে ভেড়ায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এত দামের যথার্থতার ঝলক এর মাঝেই দেখিয়েছেন ফেলিক্স, কিন্তু ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি। পর্তুগালের আক্রমণভাগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ডিয়েগো জোটা, আন্দ্রে সিলভা, বার্নাদো সিলভা, ব্রুনো ফার্নান্দেজরা থাকলেও ইতোমধ্যেই কোচের মন জয় করে নিয়েছেন ফেলিক্স। নিজেকে মহাতারকা হিসেবে জানান দেবার জন্য ইউরোর চেয়ে বড় মঞ্চ আর পাবেন না ফেলিক্স।

বায়ার্নের জার্সিতে জামাল মুসিয়ালা কাটিয়েছেন দারুণ এক মৌসুম। নিজের প্রথম মৌসুমেই ৬ গোল করে ফেলে দিয়েছেন হইচই। কিন্তু জার্মান দলে তাঁর জায়গাটা অনিশ্চিত কাই হ্যাভার্টেজের কারণে। এ মৌসুমেই চেলসিতে যোগদান করেন এই প্লেমেকার।

সিজনের শুরুতে অফ ফর্মে থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ফিরে এসেছেন আপন মহিমায়। উচল ফাইনালে গোল করে চেলসিকে এনে দিয়েছেন পরম আরাধ্য শিরোপা। এছাড়া তাঁর সতীর্থ টিমো ভার্নার চেলসিতে নিয়মিত গোল না পেলেও ইউরোতে মুখিয়ে থাকবেন গোল করতে। জোয়াকিম লো’র জার্মানি কতদূর যাবে এই ইউরোতে সেটা নির্ভর করবে এ দুজনের উপরই।

গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের গোলদাতা কিংসলে কোমান কাটিয়েছেন অম্লমধুর এক মৌসুম। ইনজুরিতে কয়েক মাস মাঠের বাইরে থাকলেও নিজে ৫ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১২টি। জাতীয় দলে সবসময় কিলিয়ান এমবাপ্পের ছায়ায় থাকা কোমান নিশ্চয় চাইবেন এবারের ইউরোতে দারুণ খেলে স্বকীয় মহিমায় উজ্জ্বল হতে।

তাঁরই সতীর্থ এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা রেঁনেসের হয়ে কাটিয়েছেন মনে রাখার মতো এক মৌসুম। ক্লাবের ফর্মটা টেনে এনেছেন জাতীয় দলেও, মূল কাজ বল কেড়ে নেয়া হলেও নিজের অভিসেক ম্যাচেই করেছেন দারুণ এক গোল। পগবা,কান্তে, তোলিসোদের ভিড়ে মাঝমাঠে দেশ্যমের অন্যতম এক ভরসার নাম কামাভিঙ্গা।

’১৮ বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হবার দু:খ ইতালি ভুলতে চাইছে এবারের ইউরো জিতে। ইতালি দলে তাই তারুণ্যের জয়গান। জুভেন্টাসের হয়ে দারুণ মৌসুম কাটানো ফেদেরিকো চিয়েসা কিংবা ইন্টার মিলানের নিকোলা বারেলারা দারুণ সব গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন মুহূর্তের মাঝে।

কেবল গোল করা নয় গোল ঠেকানোর জন্যও আছেন সাসুলোর ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি যাকে দলে ভেড়ানোর জন্য এর মাঝেই হুড়োহুড়ি লেগে গেছে ইউরোপের বড় দলগুলোর মাঝে। কিয়েল্লিনি-বনুচ্চিদের কারণে হয়তো মূল একাদশে জায়গা পাবেন না আলেসান্দ্রো বাস্তোনি, কিন্তু সুযোগ পেলে তিনি একাই আটকে দিতে পারেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ।

এছাড়াও সুইডেনের ডেজান কুলুসেভস্কি, আলেকজান্ডার ইসাক, ফ্রান্সের জূলস কৌন্দে, বেলজিয়ামের জেরেমি ডকু, পর্তুগালের নুনো মেন্ডেজ, স্কটল্যান্ডের ডেভিড টার্নবুল, সুইজারল্যান্ডের রুবেন ভার্গাস, উত্তর মেসিডোনিয়ার এলফ এলমাজরাও হয়ে উঠতে পারেন ছোট দলের বড় তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link